ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

লিফটের নিচেই বন্ধুর লাশ সিনেমায় মজেন রাজু

লিফটের নিচেই বন্ধুর লাশ সিনেমায় মজেন রাজু

ইন্দ্রজিৎ সরকার

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০

পাঁচ বছর আগে রাজধানীর সূত্রাপুরের ইস্ট বেঙ্গল সুপার মার্কেটের লিফটের নিচে কাপড় ব্যবসায়ী ফয়সাল বিন আব্দুল্লাহ ওরফে পাভেলের রক্তাক্ত লাশ মেলে। এ ঘটনায় তাঁকে হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে, অসাবধানতাবশত লিফটের ফাঁকা স্থানে পড়ে যান পাভেল। ওই সময় তাঁর বন্ধু রাজু হোসেন সেখানে উপস্থিত থাকলেও তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করেননি। উল্টো বন্ধুর মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তিনি সিনেমা দেখতে যান। তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

সূত্রাপুর থানা পুলিশের পর আদালতের নির্দেশে মামলাটির অধিকতর তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা মহানগর উত্তরের পরিদর্শক সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম সমকালকে বলেন, হত্যাকাণ্ড না হলেও অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে লিফট অপারেটর রাজু হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তাঁর সামনে ঘটনাটি ঘটলেও তিনি কাউকে কিছু জানাননি। উল্টো পাভেলের লাশ দেখার পরও তিনি বারবার লিফট চালিয়ে গেছেন। মৃতের বন্ধু-স্বজনরা লাশ খুঁজে পাওয়ার পরও তিনি প্রথমে উল্টাপাল্টা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।

তদন্ত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগের বাসা থেকে বের হন পাভেল। সেদিন দুপুরে বাবার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ব্যবসায়িক কাজে ইসলামপুরে আছেন। বিকেল ৩টার পর থেকে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর লাশ উদ্ধারের খবর পান স্বজনরা। মৃতদেহে কাটা ও রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন ছিল। ফলে আঘাত করে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন তাঁর বাবা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তদন্তে নেমে দেখা যায়, ঘটনার দুই বছর আগে রাজুর সঙ্গে পরিচয় হয় পাভেলের। এক পর্যায়ে দু’জনের সখ্য হলে একসঙ্গে ইয়াবা সেবন শুরু করেন। মাঝেমধ্যেই তারা ইস্ট বেঙ্গল মার্কেটের ছাদে বসতেন। ঘটনার দিনও সেখানে যান পাভেল। পরে বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে লিফট বন্ধ করে রাজুও ছাদে চলে যান। সেখানে লিফটের ছাদে বসে দু’জন ইয়াবা সেবনের পর নামতে গিয়ে পাভেল লিফটের ফাঁকা অংশ দিয়ে নিচে পড়ে যান। রাজু তখনই নিচে নেমে দেখেন, পাভেলের নিথর দেহ পড়ে আছে। এর পর তিনি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে আবার লিফট দিয়ে নিচে নামেন। এবার বন্ধুর মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরও কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি লিফট চালানোর দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে রাত ৮টার দিকে সিনেমা হলে যান তিনি। সেখানে থাকা অবস্থায় রাত ১১টার দিকে তাঁকে কল করে পাভেলের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার বিষয়ে জানান বন্ধু বাপ্পী। এর পর রাজু হল থেকে বেরিয়ে ইস্ট বেঙ্গল সুপার মার্কেটে আসেন। টর্চ নিয়ে লিফটের নিচে গিয়ে বন্ধুর লাশ আরেকবার দেখে মার্কেট থেকে বের হন। এ সময় তিনি বাপ্পীকে জানান, লিফটের নিচে পাভেলের লাশ পড়ে আছে। বাপ্পীসহ মৃতের বন্ধু মিজান ও সেলিম জানতে চান, কীভাবে পাভেলের লাশ সেখানে গেল? এর উত্তরে একেকবার একেকরকম ব্যাখ্যা দেন রাজু। এতে সবার সন্দেহ হয়। শেষে চাপের মুখে তিনি ইয়াবা সেবনের পর পাভেলের পড়ে যাওয়ার ঘটনার কথা বলেন।

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদন অনুযায়ী উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়ার কারণেই পাভেলের মৃত্যু হয়। তদন্তেও হত্যার আলামত পাওয়া যায়নি। এ কারণে থানা পুলিশ তদন্ত শেষে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে পিবিআইর তদন্তে রাজু হোসেনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪-ক ধারার অপরাধ বা অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগের প্রমাণ মেলে।

আরও পড়ুন