ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

দক্ষিণখানে দেয়াল ভেঙে বাবা-মেয়ে আহত

এখনও জ্ঞান ফেরেনি সুরাইয়ার, মামলা

এখনও জ্ঞান ফেরেনি সুরাইয়ার, মামলা

বাবা জালাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সুরাইয়া আহমেদ

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪ | ০০:২১ | আপডেট: ২৯ মে ২০২৪ | ১১:৫৭

রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় নির্মাণাধীন বহুতল ‘সৈনিক ভবনের’ দেয়াল ধসে আহত শিশু সুরাইয়া আহমেদের ৩৬ ঘণ্টায়ও জ্ঞান ফেরেনি। মেয়েকে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রেখে পাগলপ্রায় মা ফিরোজা হক। এ ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন সুরাইয়ার বাবা জালাল উদ্দিন আহমেদও। এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে অবহেলাজনিত কারণ উল্লেখ করে মামলা করেছেন জালালের বড় ভাই। মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করে ৪২ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন– ভবনের মালিক আনিছ, মোর্শেদ, জসিম উদ্দিন রবি ও মমিন। তারাই আবার ঠিকাদার হিসেবে ভবনের কাজ করছেন। তবে আসামিদের কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
ফিরোজা হক সমকালকে বলেন, মেয়েকে নিয়ে সোমবার সকাল থেকে হাসপাতালে, এখনও দুই চোখের পাতা এক করতে পারিনি। আমার ফুটফুটে মেয়েকে বুকে নিয়ে রাতে ঘুমাতে গেলাম। আর সকালে তাকে এ অবস্থায় পেতে হবে– সেটা স্বপ্নেও ভাবেনি। গত দু’দিন ধরে সুরাইয়া এখনও চোখ খোলেনি।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শিশুটির মস্তিষ্ক এখনও কাজ করছে না। রক্তচাপ অস্বাভাবিক রয়েছে। রক্তচাপ স্বাভাবিক করার জন্য ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে। হার্টবিট স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।
গত সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দক্ষিণখান কাজীবাড়ি রোডের ২৫১ গাওয়াইর নির্মাণাধীন ১৪ তলা ভবনের ১১ তলার দেয়ালের একটি অংশ ধসে তাদের ঘরের চালের ওপরে পড়ে। এতেই গুরুতর আহত হন বাবা ও মেয়ে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে প্রথমে উত্তরা কেসি হাসপাতাল, পরে জালালকে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে এবং তাঁর মেয়ে সুরাইয়াকে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। আহত জালাল আহমেদ দৈনিক সমকালের মার্কেটিং বিভাগে সিনিয়র নির্বাহী পদে কর্মরত।

আহত জালালের বড় ভাই সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বলা হচ্ছিল। কিন্তু ভবন কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি। তারা নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিলে আজকে আমার ভাই ও ভাতিজির এত বড় বিপদ হতো না। আমরা এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। এর ন্যায়বিচার চাই।
মামলার এজাহারে বলা হয়, পাঁচ ভাই পরিবারসহ গাওয়াইরে নিজস্ব বাসায় বসবাস করেন। আসামিরা তাদের বাড়ির পাশের দক্ষিণ সীমানায় যৌথভাবে ১৪ তলা বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। তারা রাজউকের নির্দেশনা না মেনে ভবন নির্মাণ করে আসছেন। সোমবার ওই ভবনের ১১ তলার উত্তর পাশের দেয়াল ভেঙে ছোট ভাই জালাল আহমেদের টিনশেড ঘরের ওপরে পড়ে। এতে তারা বাবা-মেয়ে আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ঘর ভেঙে আনুমানিক ১২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ঢাকার দক্ষিণখান থানার ওসি শেখ আমিনুল বাশার বলেন, দেয়াল ধসে বাবা ও মেয়ে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া কার অবহেলায় এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল, সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তিনি বলেন, ঘটনার দিন খবর পাওয়ার পরপরই থানার একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ছাড়া আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছে দক্ষিণখান থানা পুলিশ।
 

আরও পড়ুন

×