ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

টেকনিক্যাল কমিটিতে নন টেকনিক্যাল কর্মকর্তা

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

টেকনিক্যাল কমিটিতে নন টেকনিক্যাল কর্মকর্তা

ফাইল ছবি

 অমিতোষ পাল

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪ | ০১:০২

ভবন নির্মাণ আইনে নকশা অনুমোদন-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের (টেকনিক্যাল পারসন) ওপর ন্যস্ত ছিল। তবে সম্প্রতি আইন ও বিধিমালাকে পাশ কাটিয়ে একজন নন-টেকনিক্যাল ব্যক্তিকে বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন-বিসি কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পূর্ত মন্ত্রণালয়ের এ আদেশকে কেন্দ্র করে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, নতুন প্রজ্ঞাপনে ভবনের অনুমোদন-সংক্রান্ত বিষয় উপসচিবের মাধ্যমেই সম্পন্ন করতে হবে। বিসি কমিটির কারিগরি কর্মকর্তারা যাবতীয় কাগজপত্র তাঁর কাছেই জমা দেবেন। 
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, নন-টেকনিক্যাল ব্যক্তির পক্ষে এসব টেকনিক্যাল বিষয়গুলো বোঝা সম্ভব নয়। এ ছাড়া ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের (বিএনবিসি) সঙ্গেও এ ধরনের আদেশ পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। ফলে মহানগরীতে জঞ্জাল আরও বাড়বে। শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠলে ঝুঁকি তৈরি হবে। পূর্ত মন্ত্রণালয়ের এমন আদেশকে নিয়ে রাজউকে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। 

জানা যায়, ডিআইটি (ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট) থাকাকালীনও টেকনিক্যাল পারসন ও বোর্ড সদস্যদের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হতো। পরবর্তী সময়ে ডিআইটি থেকে রাজউকে পরিণত হওয়ার পরও এ-সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তাদের দিয়েই সম্পাদিত হয়ে আসছে। গত ১৬ জুলাই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কমিটিতে যাবতীয় কাগজপত্র-সংশ্লিষ্ট জোনের পরিচালকের মাধ্যমে কমিটিতে উপস্থাপন করবেন ও কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত ওই পরিচালকের মাধ্যমে জারি করবেন।
রাজউক সূত্র জানায়, এক সময় রাজউক এলাকায় আটতলা ভবন তৈরি করতে পাঁচ সদস্যের বিসি কমিটিই নকশার অনুমোদন কার্যক্রম সম্পাদন করত, যাদের সবাই ছিলেন কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন। পর্যায়ক্রমে সেটা বাড়িয়ে নতুন আদেশে বিসি কমিটির সদস্য সংখ্যা আট করা হয়েছে। এই কমিটিতে রাজউকের বোর্ড সদস্যকে (পরিকল্পনা) সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের পরিচালককে সদস্য রাখা হয়েছে। আঞ্চলিক পরিচালকরা জনপ্রশাসন থেকে প্রেষণে রাজউকের আঞ্চলিক পরিচালক পদে আসেন যাদের মূল পদ উপসচিব। আঞ্চলিক পরিচালকরা এতদিন আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করতেন। নতুন আদেশে তাদের বিসি কমিটির যাবতীয় কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব আরোপ করা হয়েছে। 

রাজউকের প্রকৌশলীরা জানান, ইমারত নির্মাণ আইন অনুসারে যে কোনো ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে ইমারত নির্মাণকাজ শুরুর বিধান রয়েছে। এ ছাড়া রাজউকের আওতাধীন এলাকায় এক প্রজ্ঞাপনে অথরাইজড অফিসারকে সদস্য সচিব হিসেবে স্বাক্ষরের ক্ষমতা এবং বিল্ডিং অফিসিয়াল নামে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বিল্ডিং অফিসিয়ালের যোগ্যতায় বলা হয়েছে নূন্যতম স্থপতি, প্রকৌশলী অথবা নগর পরিকল্পনাবিদ হতে হবে। এতদিন ধরে রাজউকে যত বিসি কমিটি গঠন করা হয়েছে তা ইমারত নির্মাণ আইন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও বাংলাদেশ ন্যাশন্যাল বিল্ডিং কোড অনুসারে গঠন করা হয়েছে। নতুন বিসি কমিটির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়বে। এতে ঘাটে ঘাটে উৎকোচ বাণিজ্যের ঝুঁকি যেমন বাড়বে, তেমনি এতজনের স্বাক্ষরে নকশা পাসে দীর্ঘসূত্রতাও তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি জোড় সংখ্যার কারণে নকশা পাসে ভোটাভুটিতে যদি দু’পক্ষে সমান ভোট পড়ে, তাহলে ওই নকশার অনুমোদন জটিলতার মুখে পড়বে। 
এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত আদেশে স্বাক্ষর করা যুগ্মসচিব (প্রশাসন অধিশাখা-৬) মিজানুর রহমান বলেন, এটা নিয়ে অনেকে অনেক কথাই বলবে। তবে রাজউক থেকে এমনটাই চাওয়া হচ্ছিল। এ জন্যই এ আদেশ জারি করা হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ভবনের নকশা অনুমোদন-সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা পুরো নতুন একটা পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছি। মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি বিল্ডিং রেগুলেটরি কমিটি ও এতে অভিজ্ঞ লোক থাকবে। রাজউকের পক্ষ থেকেও এক্সপার্ট থাকবে। কিন্তু এতদিন সেটা ছিল না। যারা প্রকৃত দক্ষ আর্কিটেক্ট না, তারাও নকশা প্রণয়ন করেছেন। ওই কমিটিতে একজন থাকবেন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। কিছু ঘটলে সবাই দায়ী থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, ইঞ্জিনিয়াররাই সব কিছু করবেন– এ ধারণা থেকেও আমাদের বের হতে হবে। বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেই এ রকম সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমন পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছি, ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কেউ একটি ভবনের যাবতীয় তথ্য পাবেন। এমনকি ওই ভবন বা ফ্ল্যাটের বিপরীতে ব্যাংক ঋণ আছে কিনা সেটাও দেখা যাবে। অনেকটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পদ্ধতিতে করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। হয়তো এজন্য এক বছর সময় লাগবে।

আরও পড়ুন

×