সিআরটিসি সমিতির আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ঠিকাদারদের

ছবি- সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০৪:৩১ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০:১৬
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার (সিআরটিসি) এসোসিয়েশনের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছেন সাধারণ ঠিকাদাররা। রোববার খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া এক আবেদনে এ অভিযোগ আনেন তারা।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফলতার প্রেক্ষিতে বিগত সরকারের পৃষ্ঠপোষক কমিটির বিভিন্ন সময়ে অবৈধ চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদে সাধারণ ঠিকাদারদের আন্দোলনের মুখে গত ১ সেপ্টেম্বরের এক সভায় পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নবগঠিত কমিটি পূর্বের কমিটির মতো অবৈধ কোনো চাঁদাবাজি ও সাধারণ ঠিকাদারদেরকে কোন প্রকার হয়রানি করবে না বলে আশ্বস্ত করে। তবে পূর্বের ধারাবাহিকতায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর নবগঠিত কমিটির সভায় ১ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঠিকাদারদের চুক্তির মেয়াদ বর্ধিত করার জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হবে– এমন কথা বলে মাথাপ্রতি দুই হাজার টাকা ধার্য করে।
এতে আরও বলা হয়, বর্তমান মোট ৬০০ জন ঠিকাদার কর্মরত আছে। তাদের কাছ থেকে মোট ১২ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের জন্য জোর পূর্বক সভায় উপস্থিত কার্যনির্বাহী কমিটির সকলের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। নবগঠিত কমিটির অবৈধ চাঁদার বিষয় খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সম্মতি রয়েছে বলেও প্রচার করে কমিটি। চাঁদা পরিশোধ না করলে বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে নন-জুডিশিয়াল স্টাম্প জমা দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। সাধারণ ঠিকাদারদেরকে ১৭/২ সার্জিক্যাল মার্কেটের ৫ম তলায় অবস্থিত সমিতির কার্যালয়ে চাঁদার টাকা জমা দেওয়ার জন্য মৌখিক নির্দেশনা জারি করে কমিটি। একইসঙ্গে ভয়-ভীতিও প্রদর্শন করা হয়। অভিযোগে এই কমিটি কার্যকলাপ খাদ্য অধিদপ্তরে নিষিদ্ধ করার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ঠিকাদাররা অভিযোগ করে বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বরের মিটিংয়ে আমরা উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু ওই মিটিংয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তের সরাসরি বিরোধিতা করার সাহস পাইনি। কারণ আহ্বায়ক মহোদয় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। এখন বলছি, আমরা এ ধরনের চাঁদা দেওয়ার পক্ষে নই। যে কমিটি শুরুতেই আমাদের আস্থা নষ্ট করেছে, সেই কমিটি আমরা চাই না।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জকেন্দ্রীক এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করে সমকালকে বলেন, আগের কমিটির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। তাদের সরিয়ে নতুন কমিটি এসেছে। নতুন কমিটির নেতারা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করবেন না। কিন্তু তারা নানান খাত দেখিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। নিজেরা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আমার এ থেকে মুক্তি চাই।
রাজধানীর তেজগাঁওকেন্দ্রীক এক ঠিকাদার বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশ থেকেই দুই হাজার করে টাকা আর স্ট্যাম্প জমা দেওয়ার করা বলেছে আহ্বায়ক কমিটি। আমি নিজেই খাদ্য অধিদপ্তরে স্ট্যাম্প জমা দিয়েছি। কিন্তু টাকা জমা দেইনি। এটা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দেশে এখন ঘুষ দুর্নীর বিরুদ্ধে জাগরণ তৈরি হয়েছে। সেখানে আমাদের কেন দিতে হবে?
জানা গেছে, সাধারণ ঠিকাদারদের অভিযোগের তীর নতুন কমিটির আহ্বায়ক আকরামুল হকের দিকে। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে তিনি আদাবর থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে সমিতির আহ্বায়ক মো. আকরামুল হক বলেন, আমাদের সমিতি একটা রেজিস্টার্ড সমিতি। একটা সংগঠনের অফিস, স্টাফ ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ তো সমিতির সদস্যদেরই বহন করতে হয়। নিজস্ব কাজের ব্যয়ের জন্য এই টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কাউকে ঘুষ দেওয়ার জন্য নয়। একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্যে এ ধরনের অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
- বিষয় :
- খাদ্য মন্ত্রণালয়
- পরিবহন
- ঠিকাদার
- চাঁদাবাজি