একটি ‘অপহরণ’ ঘিরে যত কাণ্ড

.
ইন্দ্রজিৎ সরকার
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৪৮ | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৮:২৬
পুরান ঢাকার বাবুবাজার এলাকায় যুবলীগ নেতা মিলন সিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর পান তাঁর স্বজন। তবে সংশ্লিষ্ট থানায় খবর নিয়ে তারা এর সত্যতা পাননি। পরে জানতে পারেন, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণও চাওয়া হয়। এক পর্যায়ে খুঁজতে গেলে ছোট ভাই আল-আমিন সিকদারকেও আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশের সহায়তায় স্বজনরা আল-আমিনকে উদ্ধার করেন। তবে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
অন্যদিকে উদ্ধার অভিযানে যাওয়া ভাগনে সজীব খানকে আটক করে মারধর করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। শেষে তাঁর গলায় ট্রাম্পের ছবি ঝুলিয়ে পুলিশে দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার ঘটে এসব ঘটনা।
আল-আমিন ও সজীব পরে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। তাদের অভিযোগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা মিলনকে অপহরণ করেন। তারাই আল-আমিনকে আটকে রাখেন। অবশ্য অভিযুক্তরা বলছেন, অপহরণ নয়; তাদের ব্যানার-ফেস্টুনসহ আটক করে এলাকাবাসী। যদিও পুলিশ সূত্র বলছে, আটকে রেখে টাকা আদায়ের চেষ্টা হয়েছে।
ভুক্তভোগী আল-আমিন সমকালকে বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে মিলনকে খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, বিএনপির নেতাকর্মীরা তাঁকে বাবুবাজারের কাজীবাড়ী এলাকায় আটকে রেখেছেন। সেখানে গেলে উপস্থিত কয়েকজন ৩২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নাফিস উদ্দিন ভূঁইয়া রিচার্ডকে ফোন করেন। পরক্ষণে রিচার্ডসহ একদল নেতাকর্মী এসে আমাকে আটক করেন। এ সময় রিচার্ড বলেন, ‘আপনার ভাইরে আটকাইছি, এবার আপনারেও পাইছি।’ এর পর আমাকে রেণু মিয়ার মার্কেটের একটি দোকানে আটকে রাখে। পরে ভাগনে সজীব পুলিশ নিয়ে গিয়ে রাত ৯টার দিকে আমাকে উদ্ধার করে। কিন্তু থানায় যাওয়ার পর পুলিশ বলে, আপনি আওয়ামী লীগ করেন; ছাড়া যাবে না। বুধবার আমাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। সেখানে জরিমানা দিয়ে আমি ছাড়া পাই।
আরেক ভুক্তভোগী সজীব খান বলেন, আল-আমিন মামাকে উদ্ধারের পর আমি ফিরছিলাম। রাত সোয়া ৯টার দিকে বাবুবাজার ঘাট মসজিদ এলাকায় দু’জন আমার পথরোধ করে। এর পর মদীনা হিমাগারের সামনে নিয়ে আমাকে বেধড়ক পেটায়। শেষে আমার গলায় ট্রাম্পের ছবি ঝুলিয়ে দেয়। স্বজনের দাবি, আল-আমিনকে গ্রেপ্তার দেখানো ও সজীবকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি এনামুল হাসান বলেন, ভুক্তভোগী হিসেবে সজীব খানের মামলা নেওয়া হয়েছে। আর আল-আমিন সিকদারকে ডিএমপি অধ্যাদেশে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অবান্তর।
সমকালের হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সজীবের গলায় ট্রাম্পের ছবি ঝুলিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাঁকে ধরে রেখেছেন বিএনপি নেতা নাফিস উদ্দিন ভূঁইয়া রিচার্ড। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রিচার্ড বলেন, সজীব খান ও তাঁর মামারা আওয়ামী লীগ করেন। তারা এলাকাবাসীকে অনেক নির্যাতন করেছেন।