বিডিআর বিদ্রোহের বিচার
শুনানির কয়েক ঘণ্টা আগে পুড়ল আলিয়া মাঠের এজলাস
১৯ জানুয়ারি শুনানির নতুন দিন ধার্য
পুরান ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতের এজলাসে বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা -সাজ্জাদ নয়ন
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:৩২ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ | ১০:২২
পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের অস্থায়ী বিশেষ আদালত সরিয়ে নিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে আগুনে পুড়ে গেছে এজলাস কক্ষ। গতকাল সকালের নির্ধারিত শুনানিও হয়নি। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে আগামী ১৯ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
এদিকে এজলাস কক্ষে আগুনের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে চকবাজার থানার ওসি রেজাউল হোসেন জানান, মাঠ নিজেদের দাবি করে আসছে কারাগার এবং মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। অগ্নিকাণ্ডের আগেও একাধিকবার অস্থায়ী এ আদালত ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও কেউ অভিযোগ করেনি। তার পরও তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানান, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ২২ মিনিটে আলিয়া মাঠের অস্থায়ী আদালতে আগুনের খবর পেয়ে লালবাগ স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। তবে এক দল উচ্ছৃঙ্খল মানুষের বাধার মুখে তারা অগ্নিকাণ্ডস্থলে যেতে পারেনি। ভোর ৫টার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভেতরে গিয়ে দেখেন, আগুন নিভে গেছে।
প্রসিকিউশন টিমের প্রধান বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘বিচারক পুড়ে যাওয়া আদালত পরিদর্শন করেছেন। সংস্কার না করে এখানে বিচার কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে আগামী ১৯ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। জামিন শুনানির বিষয়টি নিষ্পত্তি হোক– এটা নিয়ে সবাই আন্তরিক।’
স্থানীয়রা জানান, আদালত সরানোর দাবিতে বুধবার আলিয়ার মাঠের সব প্রবেশ ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় মাদ্রাসার হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এরই মধ্যে ভোরে বিচারকের এজলাস কক্ষে আগুন লাগে। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত, তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থী মুক্তার হোসেন বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় তিন মাসের জন্য অস্থায়ী বিশেষ আদালত বসায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরে এখানেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচারকার্য করে। দীর্ঘদিন বিচারকাজ চলায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ আশপাশের মানুষ মাঠটি ব্যবহার করত পারেননি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দিয়ে বসেন– মাঠটি সিটি করপোরশনের। মাদ্রাসার মাঠ নিয়ে ষড়যন্ত্রের কারণেই শিক্ষার্থীরা সোচ্চার হয়েছেন।
এদিকে গতকালও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড়, পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার, বকশীবাজার অরফানেজ রোডে ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা কাজ করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, বিচারকাজ চললে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি।
গতকাল দুপুরে এজলাস কক্ষ পরিদর্শন করেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া। এ সময় তাঁর সঙ্গে প্রসিকিউশন টিম, আইনজীবী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ছিলেন।
সরেজমিন আলিয়া মাদ্রাসা এলাকায় দেখা যায়, পরিস্থিতি থমথমে। মাদ্রাসা মাঠের ফটকগুলো বন্ধ। মাঠের ভেতরে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মঞ্চ এবং সেখানে চেয়ার সাজানো। এ মাঠে শিক্ষার্থীরা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করেছিলেন। বৃহস্পতিবার তার পুরস্কার বিতরণী থাকলেও, বুধবার রাত থেকে ঝামেলা শুরু হওয়ায় অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
- বিষয় :
- আগুন
- বিডিআর বিদ্রোহ