জুলাইয়ের চেতনায় আজ শুরু অমর একুশে বইমেলা

ফাইল ছবি
দ্রোহী তারা
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:২০
বছর ঘুরে আবারও এসেছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই পর্দা উঠবে বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলার। এ বছর বইমেলায় ভিন্নমাত্রা যুক্ত করেছে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান। তাই এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।
আজ বিকেল ৩টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হবে।
এবারের বইমেলায় অংশ নিচ্ছে ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টিসহ ১ হাজার ৮৪টি ইউনিট। গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৪২টি ও ইউনিট ছিল ৯৪৬টি। গতবারের তুলনায় এ বছর প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৬৬টি ও ইউনিট বেড়েছে ১৩৮টি। এবার গত বছরের মতোই প্যাভিলিয়ন সংখ্যা থাকছে ৩৭টি। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি। বরাবরের মতো এবারও লিটল ম্যাগাজিন চত্বর থাকছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৩০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিশু চত্বরে প্রতিষ্ঠান ৭৪টি এবং ইউনিট ১২০টি। বাংলা একাডেমির তিনটি প্যাভিলিয়ন এবং শিশু-কিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য একটি স্টল থাকবে।
এবার বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। তবে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বহির্গমন পথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির গেটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে চারটি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ থাকবে। খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা ঘেঁষে বিন্যস্ত করা হয়েছে। মেলায় খাবারের স্টলগুলোকে বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। শিশু চত্বর মন্দির গেটে প্রবেশের ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে, যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে ও তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে।
বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। বাংলা একাডেমি এবার প্রকাশ করছে নতুন ৪৩টি ও পুনর্মুদ্রিত ৪১টি বই।
প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার ও সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা।
৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাড়া প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা প্রাঙ্গণ। তবে রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবে না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আয়োজকরা জানান, মাসব্যাপী বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২০২৪ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
আবিষ্কার প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরের বইমেলায় কোনো এককেন্দ্রিকতার বিষয়টি থাকবে না। এ ছাড়া পুরো মেলা ব্যবস্থাপনা এখন পর্যন্ত যতটুকু দেখেছি, তাতে শেষ পর্যন্ত প্রকাশকরা কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবেন বলে মনে করি না।
অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন সমকালকে বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সব মানুষ যখন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, তখন বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে এবার এসেছে বইমেলা। বাংলা একাডেমি ও স্টল মালিকদের কর্মীরা সবাই রাতদিন পরিশ্রম করে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আমরা আশা করি, এবারের বইমেলাটি হবে সর্বোত্তম বইমেলা।
- বিষয় :
- বইমেলা