ঢাকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

‘অদ্ভুত-আজগুবি’ বললেন প্রকাশকরা

প্রকাশের আগে পাণ্ডুলিপি যাচাই চায় পুলিশ

এমন কোনো ‘চিঠি’ পায়নি বাংলা একাডেমি

প্রকাশের আগে পাণ্ডুলিপি যাচাই চায় পুলিশ

মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা শুরু হচ্ছে আজ। স্টলে স্টলে বই সাজাচ্ছেন কর্মীরা। শুক্রবার বিকেলে তোলা সমকাল

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:২২

মেলায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে বই প্রকাশের আগে পাণ্ডুলিপি যাচাই করতে বাংলা একাডেমিকে অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তারা চাইছে, ২০২৬ সালের বইমেলা থেকে এ ব্যবস্থা চালু করা হোক।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এবং অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম এ কথা বলেন।

এর আগে বই নিয়ে মেলায় সমস্যা হয়েছে, এমন পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশের কোনো উদ্যোগ আছে কিনা? জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, ‘ডিএমপি সদরদপ্তরে বইমেলার নিরাপত্তা নিয়ে একটা সমন্বয় সভায় বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তাদের অনুরোধ করেছি, এ রকম বই যেন মেলায় না আসে, যেখানে বিতর্কিত ও উস্কানিমূলক কথা বা লেখা আছে। এটা যেন ওনারা স্ক্যানিং (অনুসন্ধান) করে, ভেটিং (পরীক্ষা) করে স্টলে উপস্থাপন করেন। আমি আশা করি, তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন।’

এ সময় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এবার বাংলা একাডেমিকে পরামর্শ দিয়েছি। তবে তারা এবার পারবে না। আগামীতে নতুন যে বইগুলো প্রকাশিত হবে, তার পাণ্ডুলিপি আগে যেন বাংলা একাডেমিতে জমা দেওয়া হয়। তারা এটা যাচাই-বাছাই করবে, পড়ে দেখবে যে এমন কোনো লেখা যেন ছাপানো না হয়, যেটা আমাদের সোশ্যাল, কমিউনাল হারমনিকে (সামাজিক সম্প্রীতি) ডিজরাপ্ট (বিঘ্ন) করে এবং দেশদ্রোহী কোনো বক্তব্য বা প্রকাশনা বা সরকারকে ডিস্টাবিলাইজ (অস্থির) করে– এ রকম কোনো ধরনের প্রকাশনা যেন মেলায় না আসে। এটা আমরা অনুরোধ করেছি বাংলা একাডেমিকে।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা তারা নোট নিয়েছেন। আশা করি, আগামী বছর বাংলা একাডেমিকে দিয়ে এটা করাতে পারব। বই প্রকাশনার আগে পাণ্ডুলিপি তাদেরকে দিতে হবে। তারা অনুমতি দিলে সেটা শুধু প্রকাশ হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অমর একুশে বইমেলার সদস্য সচিব সরকার আমিন সমকালকে বলেন, ‘আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো চিঠি পাইনি। একটা নীতিমালা রয়েছে, সে অনুযায়ী বইমেলা পরিচালিত হয়।’

অদ্ভুত-আজগুবি বক্তব্য, বললেন প্রকাশকরা
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি ওসমান গণি বলেন, ‘বর্তমান সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রথার পক্ষে নয়। তাহলে বইয়ের ক্ষেত্রে কেন এমন হবে? মেলায় নীতিমালা মেনে বই বিক্রি হবে। কোনো বইয়ের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সেটার বিক্রি বন্ধ করতে পারে কর্তৃপক্ষ। বাস্তবতা হলো, দেশে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে এমন কোনো বোর্ড বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই, যারা পাণ্ডুলিপি যাচাই করবে। এটা বাংলা একাডেমির কাজ নয়, তারা গবেষণা প্রতিষ্ঠান।’
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবছর প্রায় সাড়ে চার হাজার বই প্রকাশ হয়। এত বই যাচাই-বাছাই করার সামর্থ্য বাংলা একাডেমি বা অন্য কোনো দপ্তরের আছে? তা ছাড়া এটা একটা অদ্ভুত-আজগুবি বক্তব্য। পৃথিবী যখন সামনে এগোচ্ছে, তখন আমাদের প্রকাশনা শিল্পকে পেছনে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আশা করছি, বাস্তবতার নিরিখে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে পুলিশ।’

নিরাপত্তা নিয়ে কমিশনার যা বললেন
বইমেলায় ডিএমপির পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেলায় পুলিশ কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি মেলায় আগত দর্শনার্থীদের প্রবেশপথে কয়েক ধাপে নিরাপত্তা তল্লাশি করা হবে। মেলার ভেতর-বাইরে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে।
এদিকে পুলিশ, র‌্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থার কয়েক স্তরের নিরাপত্তা থাকবে জানিয়ে কমিশনার বলেন, ‘টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর এবার সবসময় বন্ধ থাকবে না। কখনও বন্ধ, কখনও খোলা থাকবে। রাতে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য সার্চলাইটের ব্যবস্থা করেছি। মেলা চলাকালে কোনো ভারী যানবাহন চলবে না।’

কারামুক্ত জঙ্গিরা নজরদারিতে
বইমেলা ঘিরে কারামুক্ত জঙ্গিদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করছে পুলিশ। এর আগে লেখকদের ওপর হামলার অভিযোগে যাদের গ্রেপ্তার করে আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তাদের অনেকে এখন কারামুক্ত। তাদের বিষয়ে পুলিশ কোনো শঙ্কা দেখছে কিনা? জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘যারা (কারাগার থেকে) বের হয়েছে, তাদের নজরদারিতে রেখেছি। যারা সন্দেহভাজন, তাদের খেয়াল রাখা হবে।’

মারতে চাই না, মরতেও চাই না
সড়কে আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, ‘ট্রাফিক ব্যবস্থা নাজুক। মানুষকে অনুরোধ করব— ছোটখাটো দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করবেন না। আমরা কাউকে মারতে চাই না, আমরাও মরতে চাই না। পট পরিবর্তনের পর পুলিশ পেশাগত দায়িত্ব ও কর্মধারা পরিবর্তন করেছে। আমিও ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। আমরা সবাই এ দেশের লোক। আমি কোনো ব্রিটিশ পুলিশ কমিশনার না। আমার ডানে-বামের সহকর্মীরা কোনো ব্রিটিশ না। ফলে কলোনিয়াল পুলিশ অফিসারের মতো আচরণ করতে পারব না। রাস্তার মধ্যে পুলিশ মানুষকে লাঠি দিয়ে পেটাবে, এটা আমি চাই না। ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখা আমার দায়িত্ব।’

 

আরও পড়ুন

×