গুলশান-বনানী লেক থেকে ৩ লাখ কোটি টাকা আয় সম্ভব

.
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:২২ | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১০:৪৯
গুলশান-বনানী-বারিধারা লেককে বলা হয় রাজধানীর অভিজাত এলাকার ফুসফুস। এ এলাকাতে একদিকে যেমন ধনিক শ্রেণির বাস, অন্যদিকে রয়েছে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসও। পুরো এলাকায় বিস্তৃত যে লেক, সেই লেকেই বয়ে চলেছে নোংরা আর দূষিত পানি, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। অথচ গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক পুনরুদ্ধার হলে ২০ বছরে ৩ হাজার বিলিয়ন বা ৩ লাখ কোটি টাকা আয় সম্ভব হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবিত জনগোষ্ঠী কর্তৃক পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনাভিত্তিক ক্ষতিগ্রস্ত জলাভূমি সংরক্ষণ গবেষণার (রি-ওয়েট) করা এক প্রতিবেদনের এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি বাংলাদেশের শহুরে জলাভূমির প্রথম অর্থনৈতিক মূল্যায়ন। এতে বলা হয়, গুলশান-বনানী-বারিধারা জলাভূমি বাস্তুতন্ত্রের অংশ। এর পাশেই আছে কড়াইল বস্তি। যেখানে ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি বাসিন্দার বাস।
কড়াইল বস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে একটি সহ-উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গুলশান-বনানী লেক পুনরুদ্ধার করা হলে বছরে ১০৬ বিলিয়ন টাকা (১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) মূল্যের সুবিধা পাওয়া যাবে, যা দুই দশকের মধ্যে মোট ৩ হাজার বিলিয়ন টাকা মূল্যে পরিণত হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু, স্মার্ট কৃষি এবং প্রান্তিক ও জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ লেক ও লেকের কিনারা ব্যবহার করে বছরে ২১ দশমিক ১৪ কোটি টাকার বেশি বার্ষিক আয় করতে পারেন। এ ছাড়া লেক ঘিরে উদ্যোক্তা তৈরি হতে পারে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা থেকে দারিদ্র্য মোকাবিলায় সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এ লেক। জলাভূমি প্রচুর পরিমাণে পানি সঞ্চয় করে। এতে সিটি করপোরেশনের ব্যয়বহুল পানি ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা কমাতে পারে।
সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গুলশান-বনানী লেক ১৮ দশমিক ৭৫ কোটি টাকার পানি সরবরাহ করতে পারে। পানি শোষণ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ালে লেকটি প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে তৈরি হতে পারে, যা শহুরে জলাবদ্ধতার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হবে। এতে ঢাকা বছরে ৪২০ কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। অতিরিক্ত পানি ধারণক্ষমতার মাধ্যমে ৪৩ দশমিক ২৪ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারে। সেসঙ্গে এড়ানো যাবে বন্যাজনিত রোগের খরচ প্রায় ২০ কোটি টাকা। ঢাকার প্রেক্ষাপটে এটি বার্ষিক ৫০ কোটি টাকার শক্তি সঞ্চয় করতে পারে।
তাপপ্রবাহের কারণে উৎপাদনশীলতা কমছে, বাড়ছে অসুস্থতাজনিত খরচ, যার পরিমাণ প্রতিবছর ১ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। গুলশান-বনানী জলাভূমি ব্যবস্থায় প্রতিবছর ৩৭ কোটি টাকা মূল্যের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে নানা প্রজাতির মাছ, পাখি এবং উদ্ভিদের আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলা যায়। পুনরুদ্ধার করে গুলশান-বনানী লেককে নান্দনিক ও বিনোদনমূলক করা গেলে বছরে ২০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।
রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবিত জনগোষ্ঠী কর্তৃক পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনাভিত্তিক ক্ষতিগ্রস্ত জলাভূমি সংরক্ষণ গবেষণার (রি-ওয়েট) প্রকল্পটি গুলশান-বনানী লেক পুনরুদ্ধারের জন্য যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা রাজউক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। কেবল পুনরুদ্ধার নয়, লেকের মতো এ গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের জীবিকার কথাও চিন্তা করা হচ্ছে।
আজ থেকে জলাশয় উদ্ধার শুরু
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে আজ রোববার পালিত হচ্ছে বিশ্ব জলাভূমি দিবস। ১৯৯৭ সাল থেকে ২ ফেব্রুয়ারি আইইউসিএন, ইউনেস্কোসহ পরিবেশবাদী সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন দেশে বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালিত হচ্ছে। এসব কর্মসূচি পালনের মূল লক্ষ্য পরিবেশ রক্ষায় জলাভূমি সংরক্ষণ করা। রাজধানীর ১৯টি খাল ও লেক উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আজ রোববার জলাভূমি দিবসে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হবে। ৩৫ কোটি টাকার এ প্রকল্প শেষ হলে রাজধানীবাসীর সুদিন ফিরবে বলে আশা করছেন পরিবেশ ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।
আজ ছয়টি খাল সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে। এতে উপস্থিত থাকবেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম তারিকুল আলম বলেন, ঢাকার দুই সিটির নিয়ন্ত্রণে ৪৮ খাল। ৩৫ কোটি টাকায় এর ১৯টি উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে ছয়টিতে অভিযান শুরু হবে আজ থেকে।
- বিষয় :
- দিবস আজ