সন্জীদা খাতুন স্মরণ
না থেকেও আছেন ছায়া হয়ে

রাজধানীর ছায়ানট ভবনে শুক্রবার সন্জীদা খাতুন স্মরণ অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন সমকাল
দ্রোহী তারা
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:১০
‘আমারও বুক কাঁপছে। কিন্তু জেদ ছেড়ে দেওয়া অসম্ভব। আমি এগোতে শুরু করলে পাংশুমুখে আম্মুও পিছু পিছু চললেন আবার। এ কাহিনি সাহসের নয়, নয় দুঃসাহসেরও। একুশে ফেব্রুয়ারি কেমন করে আনকোরা সাধারণ মানুষগুলোর প্রাণ ধরে টান দিয়েছিল। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শিক্ষা দিয়েছিল, কি করে আগে বাড়তে হয়। ভয়ে মোকাবিলা করতে হয়। আরও শিখিয়েছিল কথা বলতে।’
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণে বলেছিলেন সন্জীদা খাতুন। সেই স্মৃতিচারণই গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনে সন্জীদা খাতুনের স্মরণানুষ্ঠান ‘নতুন করে পাবো বলে’তে পাঠ করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত ২৫ মার্চ তিনি প্রয়াত হন। এর এক মাস পর স্মরণসভা করল ছায়ানট। সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা গান, নৃত্য, কথনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করল তাঁকে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মেলক নৃত্যগীত ‘কোন্ আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে’র মধ্য দিয়ে সন্ধ্যায় শুরু হয় সভা। উপস্থিত দর্শক-শ্রোতা, শুভানুধ্যায়ী সবাই পুরো আয়োজনে নানা স্মৃতিতে মনে করছিলেন তাদের ‘প্রিয় মিনু আপা’কে। যিনি না থেকেও সবার মাঝে ছায়া হয়ে রয়েছেন।
আয়োজনের মাঝে হঠাৎ করে যখন সন্জীদা খাতুনের কণ্ঠে গাওয়া ‘এখনো গেল না আঁধার’ ও ‘আমি গগন গহনে সন্ধ্যাতারা’ সবার মাঝে শিহরণ বইয়ে দেয়। এ ছাড়া কথন পাঠ করেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী এবং সংগঠনটির উপদেষ্টা মফিদুল হক।
সন্জীদা খাতুনকে ‘নিঃসঙ্গ শেরপা’ আখ্যা দিয়ে ডা. সারওয়ার আলী বলেন, ‘সুফিয়া কামাল ও ওয়াহিদুল হক চলে যাওয়ার পর সন্জীদা খাতুন দুর্গম পথে সম্প্রীতির যাত্রা অব্যাহত রেখেছিলেন। সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ নিয়ে বিনোদন দুনিয়ায় বাণিজ্যনির্ভর বিনিয়োগ বাড়ছে যখন, তখন সন্জীদা খাতুন শিল্পীসত্তা সৃষ্টি করে গেছেন আপন মনে। সেই শিল্পমনা, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যখনই সংকটাপন্ন হয়েছেন, তখনই ছায়ানট ভবনে এসে মিনু আপার স্নেহে সিক্ত হয়েছেন। নতুন পথে চলার দিশা পেয়েছেন।’
সন্জীদা খাতুনের জীবনের নানা দিক নিয়ে মফিদুল হক বলেন, ‘তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রথম বর্ষের ছাত্রী, তখন সুরে অবগাহন করেছিলেন। সুরই তাঁর সব অনুভূতি; সুরই তাঁর মধ্যে জাগরণী মন্ত্র সঞ্চার করেছিল। সুরের ছোঁয়ায় তিনি মানুষের অন্তরে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান থেকে মিনু আপা সংগীতের এক নতুন ধারা রচনা করে গেছেন।’
আয়োজনে পরিবেশিত হয় গুরুসদয় দত্তের লেখা ও সুর করা ব্রতচারী গান ‘আয় মোরা সবাই মিলে’।
সন্জীদা খাতুনের প্রবন্ধ ‘সবারে বাস্ রে ভালো’-এর আলেখ্য পরিবেশন করে নালন্দা উচ্চ বিদ্যালয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুরস্কার কবিতার অংশবিশেষ পাঠ করেন জহিরুল হক খান।
সন্জীদা খাতুনের লেখা প্রবন্ধ ‘একুশ আমাকে ভাষা দিয়েছে’ থেকে অংশবিশেষ পাঠ করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, ত্রপা মজুমদার পাঠ করেন ‘প্রসঙ্গ: মুক্তিযুদ্ধ’ ও সুমনা বিশ্বাস পাঠ করেন ‘স্বাধীন বাংলাদেশের সংস্কৃতিভাবনা’।
লাইসা আহমেদ লিসা শোনান অতুল প্রসাদ সেনের ‘আমি বাঁধিনু তোমার তীরে’, খায়রুল আনাম শাকিল শোনান কাজী নজরুল ইসলামের ‘পাষাণের ভাঙালে ঘুম’, ইফ্ফাত আরা দেওয়ান শোনান ‘তোমারই তুলনা তুমি প্রাণ’, শারমিন সাথী ইসলাম ময়না শোনান ‘ফেলে যাবে যদি জানি’, প্রমীলা ভট্টাচার্য শোনান ‘কে যেন আমারে বারে বারে চায়’, এ টি এম জাহাঙ্গীর শোনান ‘এবার আমায় ডাকলে দূরে’।
- বিষয় :
- স্মরণ