ঢাকা শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

নিজ জিম্মায় তিন নেতাকে ছাড়ালেন হান্নান মাসউদ

নিজ জিম্মায় তিন নেতাকে ছাড়ালেন হান্নান মাসউদ

রাজধানীর ধানমন্ডিতে মব সৃষ্টি করে এক প্রকাশকের বাসার সামনে বিশৃঙ্খলা করায় আটক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতাকে মঙ্গলবার ছাড়িয়ে নিয়ে যান এনসিপির নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ। ধানমন্ডি থানা থেকে তোলা সংগৃহীত

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫ | ০০:৪৬ | আপডেট: ২১ মে ২০২৫ | ০৭:০৩

সোমবার মধ্যরাত; রাজধানীর ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়ক। হাক্কানী পাবলিশার্সের প্রকাশক গোলাম মোস্তফার বাসার সামনে বিশৃঙ্খলা ও মব তৈরি করে স্লোগান দিতে থাকেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী পরিচয়ে কয়েক যুবক। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে মোস্তফাকে চাপ দেয় বিশৃঙ্খলাকারীরা। ধানমন্ডি থানার ওসি তাদের বলেন, ‘মামলা না থাকায় মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।’ পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তারা।

পরিস্থিতি সামলাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিসহ তিনজনকে আটক করা হয়। গভীর রাতের ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় রাব্বিকে। এদিকে আটকের ১৫ ঘণ্টা পর গতকাল মঙ্গলবার রাব্বি ও তার দুই সহযোগীকে নিজ জিম্মায় ছাড়িয়ে নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। ছাড়া পাওয়া অন্য দু’জন হলেন– ফারহান সরকার ডিনার ও মোহাম্মদ জিসান উল্লাহ।

পুলিশের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান সমকালকে বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে হাক্কানী পাবলিশার্সের কর্ণধারের বাসায় কিছু লোক ঢোকার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। পরে ওই ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করতে বলেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এ কারণে তাঁকে গ্রেপ্তারে অপারগতা প্রকাশ করে পুলিশ। আবাসিক এলাকায় বিশৃঙ্খলা হতে পারে– এমন আশঙ্কায় তিনজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল।  

আটক তিনজনকে ছাড়িয়ে নিতে গতকাল থানায় যান মাসউদ। বিশৃঙ্খলায় জড়িত ব্যক্তিদের থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে আসার বিষয়ে হান্নান মাসউদকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সেই ভুল বোঝাবুঝিটা নিরসন করতে আসছি। বাইরের বিভিন্ন গোষ্ঠী এটার সঙ্গে জড়িত আছে, আমরা যেটা দেখছি। আমাদের মানুষগুলোকে ব্যবহার করার চেষ্টা করতেছে বিভিন্ন জায়গায়।’ 
যাদের ছাড়িয়ে নিতে এসেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ ছিল– এমন প্রশ্নে মাসউদ বলেন, ‘আমি আমাদের বৈষম্যবিরোধী (ছাত্র আন্দোলন) আহ্বায়কের মেসেজটা পেয়ে দেখতে আসছি। বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে তদন্ত করা হবে।

পরে ফেসবুক পোস্টে হান্নান মাসউদ বলেছেন, ‘মোহাম্মদপুর থানা বৈবিছাআর আহ্বায়কসহ তিনজনকে আটক করা হয় মব সৃষ্টির চেষ্টাকালে। যার ফলে বৈবিছাআর পরিচয়ে ছাত্ররা ধানমন্ডি থানায় গিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছিল। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারের অনুরোধে আমি সেখানে যাই। সেখানে গেলে প্রশাসনের অনুরোধে বিষয়টির মধ্যস্থতা করি।’

ভুক্তভোগী হাক্কানী পাবলিশার্সের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের কেউ না। আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। একজন পাবলিশার হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শের বই প্রকাশ করেছি। এটা তো আমার ব্যবসা। এজন্য আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর বানিয়ে মধ্যরাতে বাসায় এসে দরজা ভাঙার চেষ্টা, দারোয়ানকে মারধর কিংবা মব সৃষ্টির চেষ্টা কেউ করতে পারে না।’ 
গতকাল ডিএমপির এক বিজ্ঞপ্তিতে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি অনুরোধ করা হয়। ভবিষ্যতে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে তা বরদাশত করা হবে না হুঁশিয়ারি দেয় ডিএমপি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় ইচ্ছামতো আসামি করে মামলা করার অনেক ঘটনা ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, আসামি করা হয়েছে চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে। আবার ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষ ও স্থানীয় বিরোধও ভূমিকা রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়, মামলা হলেই গ্রেপ্তার করা যাবে না।

২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল, অতি উৎসাহী ও স্বার্থান্বেষী মহল ঢালাওভাবে মামলা গ্রহণে পুলিশের ওপর চাপ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে। 

গত ৪ ফেব্রুয়ারি সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে তিন ছাত্র রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশের হাতে আটক হন। পরে তাদের ছাড়িয়ে নিতে হামলা চালানো হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ তিনজনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ১০ মার্চ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মো. আসিফ নামে একজনকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

টাঙ্গাইলে মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি নামে এক তরুণী সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে সাবেক এক সংসদ সদস্যের ছয়তলা ভবন দখলে নিলে পরে সেটি যৌথ বাহিনীর অভিযানে মুক্ত করা হয়েছে।  

আরও পড়ুন

×