ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সরেজমিন : রাজধানী

টার্মিনাল সুনসান সড়কে কড়াকড়ি

টার্মিনাল সুনসান সড়কে কড়াকড়ি

লকডাউনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার পাখির চোখে দেখা সুনসান ঢাকার চিত্র- এএফপি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২১ | ১৪:০২

রাজধানীর গাবতলীর চেহারায় গতকাল বৃহস্পতিবার যেন ফুটে উঠেছিল কঠোর লকডাউনেরই চিত্র। সবসময় সরগরম থাকা বাস টার্মিনালটি জনশূন্য। টিকিট কাউন্টারগুলোও ছিল বন্ধ। টার্মিনালের সামনের রাস্তা দিয়ে যানবাহনের চলাচল ছিল হাতেগোনা। দু-একটি যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় আমিনবাজার ব্রিজের কাছে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে যাদের উত্তর সন্তোষজনক হয়নি তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায়, কোথাও কোনো ভিড় নেই। পরিবহন শ্রমিকদেরও দেখা মেলেনি। স্বল্প ও দূরপাল্লার বাসগুলো আশপাশের তেলের পাম্প ও টার্মিনালের পেছনের পার্কিং পয়েন্টে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে। পুরো টার্মিনাল এলাকায় দু'জন ভবঘুরে ছাড়া আর কারও দেখা পাওয়া যায়নি। টার্মিনালের দোকানপাট, খাবার হোটেলগুলোও ছিল বন্ধ। পুরো এলাকা ঘুরে একজন ভ্রাম্যমাণ পান-সিগারেট বিক্রেতাকে পাওয়া যায়। হেলাল নামের ওই বিক্রেতা জানান, পান-সিগারেট কেনার কাউকে পাচ্ছেন না। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত একশ টাকাও বিক্রি হয়নি। যারা কিনেছেন তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।
মাজার রোড পয়েন্টে বসানো হয় পুলিশের একটি চেকপোস্ট। দু-একজন রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারে বা হেঁটে যাতায়াত করছেন। তাদের চেকপয়েন্টে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছাড়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ওই সড়কের আশপাশের সব দোকানপাট ছিল বন্ধ।
সরেজমিন শেওড়াপাড়া এলাকায় দেখা যায়, মূল সড়কের আশপাশের দোকানপাট বন্ধ এবং লোকজনের চলাচল অনেকটাই কম। রিকশা, মোটরসাইকেল ও পিকআপ ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল তেমন নজরে পড়েনি। কিন্তু মহল্লার ভেতরের অলি-গলিতে লোকজনের উপস্থিতি দেখা গেছে।
শেওড়াপাড়া শামিম সরণি থেকে কাজীপাড়া পর্যন্ত রাস্তার দু'পাশের মার্কেট ও আশপাশের সড়কে লোকজনকে মাস্ক পরে চলাচল করতে দেখা গেছে। সকাল ১০টার দিকে এই এলাকায় পুলিশের ভ্রাম্যমাণ টহল দেখা যায়। অনেকে টহল পুলিশের গাড়ি দেখে গলির ভেতরে ঢুকে পড়েন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং মাস্ক পরার ক্ষেত্রে অনেকটা সচেতনতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অলিগলির সড়কে মানুষের চলাচল বেড়ে যায়।
পশ্চিম শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ওষুধ ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সমকালকে বলেন, লকডাউনের মধ্যে সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ায় রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা কম। যারা বেরিয়েছে, সবার মুখেই মাস্ক ছিল। আমরাও সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। একটি গলিতে কয়েকজনকে আড্ডা দিতে দেখা যায়। তারা জানান, কিছু সময় আগে টহল পুলিশের একটি দল এসেছিল। মাস্ক না পরায় তারা কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে গেছে।
সকাল ১১টার দিকে পূর্ব শেওড়াপাড়া হাজী আশরাফ আলী মার্কেটের পাশের গলিতে চায়ের দোকানে মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। তাদেরও আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল লকডাউন।
মেট্রোরেল নির্মাণকাজ চলায় শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দারা অনেকটা অবরুদ্ধ। এখানকার রাস্তার দু'পাশের দোকানগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ক্রেতাশূন্য। বাসস্ট্যান্ডের পাশের সড়কে একটি পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সেখানে রাস্তায় চলাচলকারীদের বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। এ সময় সড়কে রিকশা, মোটরসাইকেল ও পণ্যবাহী পিকআপ দেখা গেছে।
পশ্চিম শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারে সকালে ক্রেতার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। তবে ভোর থেকে শুরু করে সকালেও আগারগাঁও তালতলা এলাকায় প্রাতঃভ্রমণকারীদের উপস্থিতি ছিল বেশ।
এদিকে রাজধানীর ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, আজিমপুর, চানখাঁরপুল, সায়েদাবাদ এলাকায় প্রধান প্রধান সড়কে লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর থাকলেও অলিগলিতে কিছু নগরবাসীকে চলাচল করতে দেখা গেছে। দুপুর ১২টার দিকে সায়েদাবাদ গিয়ে দেখা যায়, বাসস্ট্যান্ড এলাকা নীরব সুনসান। টার্মিনালে বাস পাহারায় থাকা কয়েকজন শ্রমিক ছাড়া আর কেউ নেই। সায়েদাবাদ থেকে এগিয়ে যাত্রাবাড়ীর কাজলা ভাঙা প্রেস এলাকায় দেখা যায়, প্রধান সড়েক শুধু পণ্যবাহী যান ও রিকশা চলছে। হঠাৎ হঠাৎ কিছু প্রাইভেট কারও চলছে। মাতুয়াইলে পুলিশের চেকপোস্ট দেখা গেছে। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক নাজমুল আলম জানালেন, প্রাইভেট গাড়ি ও মোটরসাইকেল তল্লাশি করে যেতে দেওয়া হচ্ছে। যারা কলকারখানা বা জরুরি সেবার কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন তাদের পরিচয়পত্র দেখে যেতে দেওয়া হচ্ছে। নয়তো ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানালেন, পথে নামা অধিকাংশ মানুষই বলছেন হাসপাতালে রোগী রয়েছে কিংবা ওষুধ কিনতে যাচ্ছেন।
ফিরতি পথে শনির আখড়ার অলিগলি ঘুরে দেখা গেল, ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকার পাড়ামহল্লায় পথচারীদের চলাচল স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম। রাস্তার পাশে নিত্যপণ্যের দোকান, সবজির দোকান ঘিরে কিছু উপস্থিতি দেখা গেছে। শনির মন্দিরের সামনে আবদুল আউয়াল বলেন, এ এলাকায় নিম্নবিত্তরা বেশি থাকেন। তাদের মতো মানুষকে পেটের তাগিদে ঘর থেকে বের হতেই হয়। দনিয়া যাবেন। রিকশায় ১০০ টাকা ভাড়া চাইছে। তাই হেঁটেই রওনা হয়েছেন। মূল সড়ক দিয়ে যাবেন না। অলিগলি দিয়ে চলে যাবেন। সেখানে তার ঠোঙ্গা বানানোর কাজ রয়েছে।
রাজধানীর হাজারীবাগের মনেশ্বর সড়কের পাশে কয়েকজন দোকানি দোকানের অর্ধেক খুলেছেন। ছোটবড় ভাতের হোটেল, হার্ডওয়্যারের দোকান, প্লাস্টিকের খেলনা ও জুতার দোকান শাটার অর্ধেক বন্ধ রেখেছে। পুলিশের গাড়ির উপস্থিতিতে দোকানিরা শাটার পুরোটা বন্ধ করে দিচ্ছেন। হকাররা গলির ভেতরে সটকে পড়ছেন। বেলা সোয়া ৩টার দিকে 'নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট' লেখা একটি গাড়ি হাজারীবাগের শেরেবাংলা রোডের গাবতলা মসজিদের সামনে উপস্থিত হয়। সঙ্গে সঙ্গেই সেটুকুও বন্ধ হয়ে যায়।
হাজারীবাগ থেকে এগিয়ে ধানমন্ডির দিকে পথ যত এগিয়েছে লকডাউন ততই কঠোর হতে দেখা যায়। জিগাতলা স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে পুলিশ চেকপোস্ট রয়েছে। এরপর থেকেই রাস্তা একেবারেই খালি। হঠাৎ হঠাৎ কিছু রিকশা ও প্রাইভেটকার দেখা যায়। ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুরো এলাকাই খালি। রাস্তায় দু-একটি রিকশা ছাড়া কোনো যানবাহনও নেই।

আরও পড়ুন

×