লকডাউনের চতুর্থ দিন
'রাস্তায় নামলে একটা ব্যবস্থা হয়ে যায়'
ঈদের পর শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিন সোমবার রাজধানীতে বেড়েছে যানবাহন চলাচল। ছবিটি বনানী এলাকা থেকে তোলা- সমকাল
ইন্দ্রজিৎ সরকার
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২১ | ১৪:২৭
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকায় থাকেন মধ্যবয়সী আজফার হোসেন। বাসার অদূরেই একটি মুদি দোকান রয়েছে তার। গতকাল সোমবার দুপুরে একটি ব্যাগ হাতে তাকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ধরে হেঁটে যেতে দেখা যায়। কথা বলে জানা গেল, গোপীবাগে বড় বোনের বাসায় যাচ্ছেন তিনি। তার বোন কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ, তাকে দেখতে যাচ্ছেন। লকডাউনের মধ্যে এতটা পথ তিনি যাবেন কীভাবে? জিজ্ঞেস করতে বললেন- 'রাস্তায় নাইমা পড়লে একটা না একটা ব্যবস্থা হইয়া যায়।' নিজেই জানালেন, রিকশা নিয়ে আসাদগেট পর্যন্ত এসেছেন। এদিকটায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেশি থাকে বলে হেঁটে যাচ্ছেন। ফার্মগেট পার হওয়ার পর আবার রিকশা বা ভ্যান কিছু একটা পাবেন।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যেও প্রতিদিনই সড়কে বাড়ছে মানুষের চলাচল। জরুরি প্রয়োজন, নিত্যদিনের কেনাকাটা, এমনকি অপ্রয়োজনেও বের হচ্ছেন অনেকে। তাদের অনেকেই বিভিন্ন কারণে দূর-দূরান্তে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ঢাকার বাইরের জেলাতেও ছুটছেন। অথচ রাস্তায় রিকশা ছাড়া আর কোনো গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি নেই। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বিধিনিষেধের বেড়াজাল এড়িয়ে নানা কৌশলে কিছু মোটরসাইকেল, সিএনজি বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকার ভাড়ায় যাত্রী বহন করছে। ফলে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় ও ভাড়া বেশি লাগলেও শেষ পর্যন্ত যাওয়া যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ চেকপোস্টে ধরা পড়ে জরিমানাও গুনছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম সমকালকে বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে গ্রেপ্তার-জরিমানার পাশাপাশি সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে। তার পরও নানা প্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন। ঢাকায় বিধিনিষেধ অমান্য করায় গতকাল ৫৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১৬৪ জনকে জরিমানা করা হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ৪৪৩টি যানবাহনকে মোট ১০ লাখ ২১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
এদিকে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাব। গতকাল দেশের বিভিন্ন এলাকায় র্যাবের ১৮০টি দল টহল দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ১৮৭ পয়েন্টে ছিল চেকপোস্ট। অপ্রয়োজনে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সচেতনতামূলক মাইকিং, লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বিধিনিষেধ অমান্য করায় ২৬৪ জনকে এক লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করেছেন র্যাবের ৩১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সরেজমিনে দেখা যায়- শাহবাগ, বাংলামটর, মগবাজার ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় চলছে প্রচুর যানবাহন। এর মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশার সংখ্যা সর্বাধিক। পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলও রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে রিকশাভ্যানে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন মানুষ। ভাড়ায় চালিত বাহনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। মোবাইল ফোনের অ্যাপে না হলেও মৌখিক চুক্তিতে মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন চলছে।
মগবাজার ও শাহবাগে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জানান, জরুরি প্রয়োজনে কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে বের হতে পারবেন, তবে চালক ছাড়া কোনো আরোহী থাকতে পারবেন না। এ কারণে দু'জন আরোহী দেখলে মোটরসাইকেল থামানো হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা একই অফিসের বা একই পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। ফলে ছাড় দিতে হচ্ছে। অবশ্য ভাড়ায় যাত্রী বহনের ঘটনাও রয়েছে। তেমন ক্ষেত্রে চালককে জরিমানা করা হচ্ছে। আবার তারাও মানবিক কারণ দেখিয়ে ছাড় চাইছেন। তারা বলছেন, দফায় দফায় লকডাউনে আর্থিক সংকটে রয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন।
এদিকে রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় দিন দিন বাড়ছে রিকশার সংখ্যা। বহু মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে রিকশায় উঠছেন। তবে একাধিক যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছে পুলিশ। যদিও অনেক রিকশাতেই তিনজন আরোহী দেখা গেছে। আবার অনেককে হেঁটেও বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
ইস্কাটন রোডে বেসরকারি চাকরিজীবী সাইফুর রহমান জানালেন, মূল সড়কগুলোয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল-চেকপোস্ট বেশি। এ কারণে মোটরসাইকেলে ভেতরের সড়ক দিয়ে তিনি পশ্চিম রাজাবাজার থেকে বাংলামটর মোড়ের অদূরে এসে নেমেছেন। এখন হেঁটে মগবাজার পার হয়ে আবার মোটরসাইকেল বা রিকশা নিয়ে যাবেন মতিঝিল। তার মতে, লকডাউনে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়েছে, গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
বিধিনিষেধের কারণে অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছাতেও ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন মোতালেব হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে রিকশাভ্যানে এসেছেন। রোদ-গরমে অনেক কষ্ট হয়েছে তার। অন্য সময়ে তিনি বাসে আসতে পারেন। অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া তার সামর্থ্যের বাইরে বলেও জানান তিনি।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যেও প্রতিদিনই সড়কে বাড়ছে মানুষের চলাচল। জরুরি প্রয়োজন, নিত্যদিনের কেনাকাটা, এমনকি অপ্রয়োজনেও বের হচ্ছেন অনেকে। তাদের অনেকেই বিভিন্ন কারণে দূর-দূরান্তে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ঢাকার বাইরের জেলাতেও ছুটছেন। অথচ রাস্তায় রিকশা ছাড়া আর কোনো গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি নেই। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বিধিনিষেধের বেড়াজাল এড়িয়ে নানা কৌশলে কিছু মোটরসাইকেল, সিএনজি বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকার ভাড়ায় যাত্রী বহন করছে। ফলে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় ও ভাড়া বেশি লাগলেও শেষ পর্যন্ত যাওয়া যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ চেকপোস্টে ধরা পড়ে জরিমানাও গুনছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম সমকালকে বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে গ্রেপ্তার-জরিমানার পাশাপাশি সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে। তার পরও নানা প্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন। ঢাকায় বিধিনিষেধ অমান্য করায় গতকাল ৫৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১৬৪ জনকে জরিমানা করা হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ৪৪৩টি যানবাহনকে মোট ১০ লাখ ২১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
এদিকে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাব। গতকাল দেশের বিভিন্ন এলাকায় র্যাবের ১৮০টি দল টহল দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ১৮৭ পয়েন্টে ছিল চেকপোস্ট। অপ্রয়োজনে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সচেতনতামূলক মাইকিং, লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বিধিনিষেধ অমান্য করায় ২৬৪ জনকে এক লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করেছেন র্যাবের ৩১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সরেজমিনে দেখা যায়- শাহবাগ, বাংলামটর, মগবাজার ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় চলছে প্রচুর যানবাহন। এর মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশার সংখ্যা সর্বাধিক। পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলও রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে রিকশাভ্যানে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন মানুষ। ভাড়ায় চালিত বাহনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। মোবাইল ফোনের অ্যাপে না হলেও মৌখিক চুক্তিতে মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন চলছে।
মগবাজার ও শাহবাগে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জানান, জরুরি প্রয়োজনে কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে বের হতে পারবেন, তবে চালক ছাড়া কোনো আরোহী থাকতে পারবেন না। এ কারণে দু'জন আরোহী দেখলে মোটরসাইকেল থামানো হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা একই অফিসের বা একই পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। ফলে ছাড় দিতে হচ্ছে। অবশ্য ভাড়ায় যাত্রী বহনের ঘটনাও রয়েছে। তেমন ক্ষেত্রে চালককে জরিমানা করা হচ্ছে। আবার তারাও মানবিক কারণ দেখিয়ে ছাড় চাইছেন। তারা বলছেন, দফায় দফায় লকডাউনে আর্থিক সংকটে রয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন।
এদিকে রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় দিন দিন বাড়ছে রিকশার সংখ্যা। বহু মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে রিকশায় উঠছেন। তবে একাধিক যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছে পুলিশ। যদিও অনেক রিকশাতেই তিনজন আরোহী দেখা গেছে। আবার অনেককে হেঁটেও বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
ইস্কাটন রোডে বেসরকারি চাকরিজীবী সাইফুর রহমান জানালেন, মূল সড়কগুলোয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল-চেকপোস্ট বেশি। এ কারণে মোটরসাইকেলে ভেতরের সড়ক দিয়ে তিনি পশ্চিম রাজাবাজার থেকে বাংলামটর মোড়ের অদূরে এসে নেমেছেন। এখন হেঁটে মগবাজার পার হয়ে আবার মোটরসাইকেল বা রিকশা নিয়ে যাবেন মতিঝিল। তার মতে, লকডাউনে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়েছে, গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
বিধিনিষেধের কারণে অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছাতেও ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন মোতালেব হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে রিকশাভ্যানে এসেছেন। রোদ-গরমে অনেক কষ্ট হয়েছে তার। অন্য সময়ে তিনি বাসে আসতে পারেন। অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া তার সামর্থ্যের বাইরে বলেও জানান তিনি।
- বিষয় :
- লকডাউন