রাজধানীর অলিগলি
খানাখন্দে চলাচলই দায়
তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজের সামনের সড়কটির এই দুরবস্থা দীর্ঘদিন ধরে। দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। রাজধানীর বহু সড়কই বর্তমানে এমন দুর্গম হয়ে উঠেছে। ছবিটি শনিবার তোলা- মাহবুব হোসেন নবীন
অমিতোষ পাল
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৪:২১
রাজধানীর কামাল সরণি (৬০ ফুট) থেকে পীরেরবাগের মধ্য দিয়ে রোকেয়া সরণির শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে যুক্ত হয়েছে একটি সড়ক। ৩০ ফুট প্রশস্ত এ সড়কটির দু'পাশে তিন ফুট প্রশস্ত ফুটপাত থাকার কথা থাকলেও তা খুঁজে পাওয়া দায়। দেড় বছর ধরে সড়কটির অবস্থা এমনই বেহাল, চলাচলের উপায় নেই বললেই চলে। পুরো সড়কই খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টি হলে অবস্থা হয়ে পড়ে আরও নাজুক।
পীরেরবাগ বাড়ি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ বাবু সমকালকে বলেন, পীরেরবাগ খাল থেকে রোকেয়া সরণি পর্যন্ত সড়কটি দিয়ে এখন চলাচল করতেই এলাকাবাসী ভয় পান। এ বিষয়ে এলাকার কাউন্সিলরকে একাধিকবার জানানো হলেও কাজ হয়নি।
স্থানীয় কাউন্সিলর হুমায়ুন রশিদ জনি বলেন, রাস্তাটি ঠিক করার জন্য উত্তর সিটি করপোরেশনকে অনেকবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তারা কেবল একই কথা বলে, দ্রুত কাজ করে দেবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম বলেন, সড়কটি নতুন করে নির্মাণের জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই কাজ শুরু হবে।
এ চিত্র কেবল এ সড়কটিরই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য অলিগলির চেহারা একই রকম। বেহাল রাস্তার কারণে চলাচলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এসব এলাকার মানুষ।
রোকেয়া সরণির কাজীপাড়া থেকে আরেকটি সড়ক কামাল সরণিতে মিশেছে। এ সড়কেও সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। বৃষ্টি হলেই পানি জমে। মগবাজারের আদ্-দ্বীন হাসপাতাল থেকে ইস্কাটন রোডর লেডিস ক্লাব সংযোগকারী সড়কটির অবস্থাও নাজুক। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি চলাচলের পুরোপুরি অযোগ্য হয়ে আছে। একই অবস্থা কাঁঠালবাগান ঢাল থেকে হাতিরপুল আবাসিক এলাকার মধ্যবর্তী সড়কটির। এটিও দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। সড়কটির বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছেন। তারাও বারবারই বলছে কাজ দ্রুত শেষ করবে।
এদিকে শেরেবাংলা নগর সংলগ্ন তালতলা বাজার থেকে শামিম সরণি পর্যন্ত সড়কটি এমনিতেই খারাপ। সম্প্রতি এ সড়কের একপাশ দিয়ে আবার খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে পানির পাইপলাইন স্থাপনের জন্য।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা বলছেন, ঢাকার রাস্তায় বিটুমিনের ব্যবহার হয়। আর বিটুমিনের রাস্তার প্রধান শত্রু পানি। ভারি বর্ষণে রাস্তায় জমা পানির মধ্যে যানবাহন চললে বিটুমিনের জমাট বাঁধার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তখনই রাস্তা ভেঙে সুরকি-পাথর বেরিয়ে আসে, খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিক কয়েকটি ভারি বর্ষণের ফলে অনেক স্থানে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পুরান ঢাকার বাদামতলী থেকে ইংলিশ রোড পর্যন্ত সড়কটির অবস্থাও নাজুক। বৃষ্টির কারণে রাস্তাটি এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে। বংশাল চৌরাস্তা থেকে পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগার পর্যন্ত সড়কটিও বেহাল। ফুলবাড়িয়া থেকে পল্টন পর্যন্ত সড়কটি ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে গেছে। ভাটারা বাজার রোডের অবস্থাও নাজুক। মগবাজারের নয়াটোলা, গাবতলার বিভিন্ন ভাঙাচোরা রাস্তা গত বছর মেরামতের কাজ শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি। যেটুকু রাস্তা করা হয়েছে, অতিবৃষ্টির কারণে তাও ভেঙেচুরে যাচ্ছে। বঙ্গবাজার থেকে চানখাঁরপুল হানিফ ফ্লাইওভারের র্যাম পর্যন্ত রাস্তা ভেঙে গেছে। বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। কাকরাইল থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত সড়ক ভেঙেচুরে ইট-সুরকি বেরিয়ে পড়েছে। ওই অবস্থায় যান চলাচলের কারণে রাস্তাটির ভালো অংশও দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে খাদ। ফার্মগেট সংলগ্ন হলিক্রস স্কুল থেকে তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ। এ পথ দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। লাভ লেন থেকে মগবাজার ফ্লাইওভার পর্যন্ত বেগুনবাড়ির ভেতরের সংযোগ সড়কটিরও একই অবস্থা। তেজগাঁও শিল্প এলাকার লাভ রোডের আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দেখা গেছে, ওখানকার পুরো রাস্তাই কেটে তছনছ করা হয়েছে। তাজউদ্দীন আহমদ সরণি থেকে তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কটির একই অবস্থা। ওই এলাকার ফনিক্স টাওয়ার সংলগ্ন ভেতরের রাস্তাগুলোর অবস্থাও করুণ।
স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টি হলেই রাস্তার কেটে রাখা অংশে পানি জমে। আহ্ছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ইহছান বলেন, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই এখানে এমন অবস্থা চলছে। সিটি করপোরেশন মেরামত না করায় দিন দিন রাস্তা ভাঙনের পরিমাণ বাড়ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুন্সি আবুল হাশেম সমকালকে বলেন, সাম্প্রতিক বর্ষণে কিছু রাস্তা ভেঙেচুরে যাওয়ার খবর তাদের কাছে এসেছে। এগুলোর এখনও তালিকা করা হয়নি।
তবে ডিএনসিসির একজন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, যেসব রাস্তা বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে, সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। ইটের খোয়া দিয়ে ম্যাকাডাম করে রাস্তাগুলো মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে।
ডিএসসিসির যান্ত্রিক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলীদের চাহিদা অনুযায়ী এসফল্ট প্লান্ট থেকে এসব রাস্তা মেরামতের বিটুমিন-পাথরের মিশ্রণ সরবরাহ করা হচ্ছে। ভাঙা রাস্তাগুলো দ্রুতই এসফল্ট প্লান্ট থেকে মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে।
ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম বলেন, রাস্তাগুলো যাতে ভালো থাকে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাজও চলছে।