নগর দুর্যোগ মোকাবেলায় ঘাটতি রয়েছে: দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী

চ্যাম্পিয়ন দলের বিতার্কিকদের ট্রফি প্রদান করছেন দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২১ | ০৬:২৩ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২১ | ০৬:৪১
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘের সিভিল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে নারী ও শিশুবান্ধব করার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। তবে নগর দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে ড্রেনেজ ব্যবস্থার ত্রুটির কারনে দুজনের প্রাণহানির বিষয়ে সরকারি সংস্থাগুলো দায় এড়াতে পারে না।
শনিবার এফডিসিতে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষ্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান জনাব আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বজ্রপাত ঝুঁকি কমাতে সারা দেশে ৩৮ লাখ তালগাছ লাগানো হয়েছে। অনিয়মের কারণে সরকার তালগাছ প্রকল্প থেকে সরে এসে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় সচেতনতা বৃদ্ধি, বজ্রপাতের আগাম সংকেত দেয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, 'দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে প্রশংসিত হলেও এখনো আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক মানুষ দুর্যোগ ঝুঁকিতে বসবাস করছে। পাশাপাশি দুর্যোগজনিত কারনে বাস্তুচ্যুত হয়ে অনেক মানুষ শহরে এসে ভিড় করছে। একইসাথে নগর দুর্যোগ মোকাবেলায়ও আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে ড্রেনে পড়ে দুজনের মৃত্যু নগরবাসীর মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন নগরের জলাবদ্ধতা নগরবাসীকে দুর্বিষহ ভোগান্তিতে ফেলে দেয়।'
দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে ১০ দফা সুপারিশ প্রদান করা হয়। ১. ২০২১-২০২৫ মেয়াদের জন্য গৃহীত জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ নিশ্চিত করা ২. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের আলোকে জাতীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল কার্যকর করা ৩. বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ডিগ্রীধারীদের জন্য বিসিএস দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক্যডার চালু করা ৪. দুর্যোগ সংক্রান্ত গবেষণা কাজে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে সম্পৃক্ত করা ৫. নগর দুর্যোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোতে ভূমিকম্প সহনীয়তা নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে সেগুলোকে রেট্রোফিটিং এর ব্যবস্থা করা ৬. ঢাকা মেডিকেল, সলিমুল্লাহ মেডিকেলসহ যেসব হাসপাতালে ঝুঁকিপূর্ণ ইমারত রয়েছে সেই ভবনগুলোকে ডিজাষ্টার রেজিলিয়েন্ট করা ৭. যত দ্রুত সম্ভব পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বর্জ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা কমাতে এলার্মিং সিস্টেম ও বর্জ্র নিরোধক দন্ড ব্যবহার করা ৮. দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসন জোরদার করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে recovery strategy নির্ধারণ করা ৯. দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে প্রাইভেট সেক্টর এর সম্পৃক্ততা বাড়ানো ১০. বর্জ্রপাত ঝুঁকি নিরসনে কমিউনিটিভিত্তিক সচেতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহন করা।
প্রতিযোগিতায় বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, ড. মেহরুবা, সাংবাদিক মাঈনুল আলম ও সাংবাদিক শাহরিয়ার অনির্বাণ।
- বিষয় :
- নগর দুর্যোগ
- মোকাবেলা
- ঘাটতি
- দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী