- চাকরি
- ছুটির দিনে জমজমাট বাণিজ্য মেলা
ছুটির দিনে জমজমাট বাণিজ্য মেলা

ছুটির দিনে শুক্রবার রাজধানীর পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীর ঢল - সমকাল
ভোরের আলো ফুঁড়ে রাজধানীতে উঠছে ঝকঝকে রোদ। শীতের তীব্রতা কিছুটা উবে যাওয়ায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শুক্রবার বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী হাজির হন পূর্বাচলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। তাঁদের সামলাতে বেগ পেতে হয় স্টল-প্যাভিলিয়নের দায়িত্বরতদের। তবে বেচা-বিক্রি বৃদ্ধিতে তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছে।
আয়োজকদের ভাষ্য, দ্বিতীয় বছরেই বাণিজ্য মেলা আগারগাঁওয়ের জমকালো চেহারা পেতে চলেছে। আয়োজক ও বিক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটলেও বেজার ক্রেতারা। তাঁদের অভিযোগ, পণ্যের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে তা থেকে ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে ঠকানো হচ্ছে।
সরেজমিন মেলায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। মেলার মূল ভবনের ভেতরে ও বাইরে ইলেকট্রনিকস, পোশাক, জুতা, গৃহস্থালি ও খাদ্যপণ্যের স্টলে উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিক্রয়কর্মীদের দম ফেলার ফুরসত নেই। ক্ল্যাসিকাল হোম টেক্সটাইলের বিক্রয়কর্মী আব্দুল খালেক জানান, এখনও মেলার দুই সপ্তাহ হয়নি। কিন্তু গতবারের চেয়ে বিক্রি বেশি। আগারগাঁওয়ের মতো মেলা জমতে আরও কিছুদিন লাগবে। ক্রোকারিজ পণ্য কিয়ামের ডিলার খালেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ফারুক বলেন, 'শীত কম। এ জন্য মানুষ মেলায় আসছেন। বিক্রিও মোটামুটি ভালো। আবহাওয়া ভালো থাকলে বাকি দিনগুলোতে বিক্রি আরও বাড়বে।'
ফিট ফেয়ার স্টলে বিক্রি হচ্ছে বাহারি সব জুতা। স্টলের বিক্রয়কর্মীরা জানান, ধীরে ধীরে আগারগাঁওয়ের মতো জমে উঠছে মেলা। মেলার বিদেশি স্টলেও বেচাকেনা বেড়েছে। গৃহসজ্জার পণ্যের টার্কিশ স্টলের বিক্রয়কর্মীরা জানান, বরাবরের মতোই তাঁদের পণ্যের কদর বেশি। তবে আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না বলে দাবি করেন টপ টেন কর্নারের বিক্রয় প্রতিনিধিরা।
মেলায় ছাড় বাণিজ্যকে ধোঁকাবাজি উল্লেখ করে ক্ষুব্ধ ঢাকার শাহজাহানপুরের বাসিন্দা বারেক ভূঁইয়া বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছি। বেশিরভাগ দোকান ছাড়ের ব্যানার লাগিয়ে ক্রেতা টানছে। অথচ নিউমার্কেটে যেসব জিন্স প্যান্ট ৭০০-৮০০ টাকায় কেনা যায়, এখানে সেগুলোর দাম লেখা ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা। সেখান থেকে ছাড়ের টাকা বাদ দিলেও অনেক বেশি থাকছে। এ প্রতারণা বন্ধ হওয়া দরকার। খাবারের দাম অনেক বেশি রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ মিরপুর থেকে আসা শাহনাজ বেগমের। তিনি বলেন, যাচ্ছে তাই মানের খাবারেরও গলাকাটা দাম নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নীরব ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দর্শনার্থীদের। তবে ভোক্তা অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস বলেন, 'বেশি দাম নেওয়ায় শুক্রবারও চারটি খাবারের প্রতিষ্ঠানকে ১৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অযৌক্তি দাম নিলে এবং সঠিক অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এদিকে মেলায় গত বছরের মতো এবারও ধুলার রাজত্ব দেখা গেছে। একই অবস্থা ছিল সড়কেও। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশেই যান চলাচলে কোনো নিয়ন্ত্রণ দেখা যায়নি। বাস, কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে শুরু করে সব যাত্রীবাহী পরিবহন যে যার মতো উল্টোপথে চলেছে। এতে যানজট লাগলেও পুরো সড়কের কোথাও ট্রাফিক পুলিশ চোখে পড়েনি।
বাণিজ্য মেলার পরিচালক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সমকালকে জানান, ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে দিনে তিনবার পানি ছিটানোর নির্দেশনা রয়েছে। শুক্রবার ক্রেতা-দর্শনার্থীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দুপুরের পর পানি ছিটানো সম্ভব হয়নি। বিশ্ব ইজতেমার কারণে যানবাহন বেশি থাকায় কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশকে বিষয়টি জানানো হবে।
আয়োজকরা জানান, দিনে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করছেন। শুক্র ও শনিবার এ সংখ্যা কয়েক গুণ হচ্ছে। আগের শুক্রবার ১ লাখের বেশি ক্রেতা-দর্শনার্থী এসেছিলেন, যা গতকাল দেড় লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানান ইপিবি সচিব ইফতেখার আহমেদ।
মন্তব্য করুন