- চাকরি
- সিরাজগঞ্জে ধোঁয়াশায় ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ
সিরাজগঞ্জে ধোঁয়াশায় ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ

সিরাজগঞ্জে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) অধীন ‘বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইনের টাওয়ার নির্মাণ’ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের পাওনা পরিশোধে এখনও সরকারিভাবে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কিছু জমির মালিক ফসলের ক্ষতিপূরণ পেলেও অনেকে পাননি। এ ছাড়া জমির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন সাব-ঠিকাদাররা।
প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, টাওয়ার নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সে জন্য জমির মূল্য পরিশোধ করা হবে না। নির্দিষ্ট হিসাবে জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।
সরকারি প্রকল্পের সংশোধিত ডিরেক্ট প্রকিউরমেন্ট প্রপোজালে (ডিপিপি) ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। মাঠপর্যায়ে বিষয়টি গোপন রাখায় আদৌ জমির ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের ছোট চাকলীর গ্রামের ভুক্তভোগী বর্গাচাষি ইউসুফ আলী জানান, টাওয়ার নির্মাণে সাব-ঠিকাদাররা তাঁর বর্গাচাষের ১৯ শতক জমির ফসল নষ্ট করেছেন। চার শতক জমিতে গর্ত খুঁড়ে আরসিসির কাজ করেছেন। তবে শুধু ফসলের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। সেই টাকাও ছয় মাস ধরে পরিশোধ করা হয়েছে। জমির জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সাব-ঠিকাদাররা। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি।
এ সময় জমিদাতা কাশিয়াহাটা গ্রামের মফিজুল ইসলাম, ছোট চাকলী গ্রামের আবদুল জাব্বার ও আবুল কাশেম শেখ এবং বড় চাকলী গ্রামের রওশন আলীসহ স্থানীয়রা জানান, জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের সাব-ঠিকাদাররা। এখনও ফসলের ক্ষতিপূরণই অনেকে পাননি।
এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেইসির সাব-ঠিকাদার ‘টু-স্টার পাথর কোম্পানি’র সাইট ম্যানেজার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের শুধু ফসলের ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী কৃষি দপ্তরের মূল্য হারে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি। জমির ক্ষতিপূরণের বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যখন দেবে, তখন বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, সংশোধিত বিদ্যুৎ বিধিমালা অনুযায়ী টাওয়ার নির্মাণে ব্যক্তিমালিকাধীন ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রকৃত মালিক বা মালিকদের পাওনা পরিশোধে গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প পরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাওয়া পরিশোধে প্রকল্প পরিচালক আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ ছাড়া করা হয়নি।
প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, ফসলের পাশাপাশি জমির ক্ষতিপূরণের বিষয়টি প্রকল্পের পরে ধরা হয়েছে। তবে অন্যান্য দপ্তরের মতো তিন গুণ হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। কারণ, এ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। সংশ্লিষ্ট মৌজার ১২ মাসের গড় বাজারদর অনুপাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। টাওয়ারের নিচে মালিকরা জমি ব্যবহারও করতে পারবেন।
পরিচালক (পিডি) এস কে জাকিরুজ্জামান সমকালকে বলেন, স্থানীয়ভাবে কে কী বলছে, সেটি আমাদের বিষয় নয়। অধিগ্রহণ না করায় সরকারি হিসাবে শুধু জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসকের চিঠির জবাব দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই ক্ষতিপূরণের অর্থ জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া হবে। অর্থ ছাড় হলে সেই টাকা জমির মালিকদের দেবে এসিল্যান্ড ও এলএও অফিস।
মন্তব্য করুন