কোরোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। জুম, গুগল মিট ও নানা রকম সফটওয়ারের মাধ্যমে শিক্ষকরা তাদের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দেশে কিছু ই-লার্নিং প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই কার্যসম্পাদন করে যাচ্ছে, যেমন টেন মিনিট স্কুল, রেপটো, বহুব্রীহি।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয় যখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাস করানো শুরু করে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী- দুইদিক থেকেই অনেক দ্বিধা আসে। শিক্ষকদের অনেকেই সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম নিয়ে কাজ করতে অভ্যস্ত নন। বছরের পর বছর ক্লাসরুমে শিক্ষা প্রদান করে এই আকস্মিক পরিবর্তনে তারা সন্তুষ্ট না। আরেকদিকে অনেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ বিবিধ বিষয়ে। মহামারীর কারণে অনেকেই বাসায় চলে যায়, কেউ গ্রামে, কেউ শহরে। ওয়াইফাই না থাকায় অনেকেই অনলাইনে ক্লাস করতে পারেন না। আবার অনেকে এই প্রযুক্তি-চালক পদ্ধতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে দ্বিধাবোধ করেন।

যদি বর্তমান পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হয়, আমরা কি এই ই-লার্নিং কার্যপদ্ধতির সঙ্গে অভিযোজনের জন্য প্রস্তুত?

প্রথমত, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মেনে নিতে হবে যে বিকল্প পদ্ধতি, অর্থাৎ অনলাইনে শিক্ষা প্রদান করাটাই নতুন 'সাধারণ' পদ্ধতি। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে কিছুটা হলেও নিজেকে সমন্বয় করতে হবে। আমরা যদি প্রযুক্তিকে অপূর্ণতার চোখে দেখি, তা চলবে না। কোর্সেরা, ইউডেমি, এড-এক্স এর মতো শত শত ই-লার্নিং প্রতিষ্ঠান যদি সেরা গুণমানের কোর্স প্রদান করে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তবে আমরা কেন আমাদের শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা দিতে পারবো না?

যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংস্থান থাকার সত্ত্বেও নিজেদের প্রস্তুত করছে না, তাদের অনুরোধ করবো সময় নষ্ট না করে মেনে নিতে যে, আগামী বেশ কয়েকদিনের জন্য নয়, সবসময়ের জন্য প্রযুক্তি বিষয়ে অবগতি রাখতে। একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি না করে উচিত হবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানদের একে অপরকে সহযোগিতা করে একটি সুশিক্ষার পরিবেশ গঠন করা।

কোরোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে অনেক আন্তর্জাতিক অনলাইন প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে কোর্স প্রদান করছে। এমনকি আমাদের দেশের কিছু প্রতিষ্ঠানও বিনামূল্যে কোর্স দিচ্ছে এবং তরুণরা তাতে আকৃষ্ট হচ্ছে। একটা  বিষয় মাথায় রাখা জরুরি, অনেকেই অপ্রাসঙ্গিক কোর্স করে যাচ্ছেন। গুগলের একটি কোর্স আছে 'ডিজিটাল মার্কেটিং' বিষয়ে। অনেক বন্ধুদের দেখেছি, এ বিষয় পড়াশোনা করছে না, হয়তো ইঞ্জিনিয়ারিং বা ফিন্যান্স পড়ছে, অথচ তারা সেই কোর্সটি করছে। অবশ্যই একটি বিষয়ের প্রতি আগ্রহ থাকা মন্দ নয়। তবে পড়াশুনার মৌলিক বিষয়ে আগে সময় দিয়ে পরে অন্য বিষয়ে সময় দিতে হবে।

যারা চিন্তা করছেন, কিভাবে জুম, গুগল মিটের মতো সফটওয়্যার ব্যবহার করে ক্লাস নেওয়া শুরু করবেন, সমস্যা হলে সমাধানের জন্য কোথায় যাবেন, তাদের জন্য ইউটিউবে অনেক ভিডিও রয়েছে সাহায্য করার জন্য। পুরো বিশ্ব যখন প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের সমন্বয় করছে, তখন আমরা পিছিয়ে থাকবো কেন? আসুন, একসঙ্গে মিলে শিক্ষার জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলি।

সহপ্রতিষ্ঠাতা, তরুণ 

বিষয় : রাফিদ এলাহি চৌধুরী

মন্তব্য করুন