- চতুরঙ্গ
- পাঁচ পাহাড়ে থাবা
বিএফআইডিসির সড়ক নির্মাণ
পাঁচ পাহাড়ে থাবা
করোনার মধ্যেই পাহাড় কাটা শুরু রাউজানে

চট্টগ্রামের রাউজানে এভাবেই পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণ করছে বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন- সমকাল
পাহাড়ের ওপর করা হবে রাবার বাগান। সেখানে যেতে লাগবে সড়ক। তাই পাঁচ পাহাড় কেটে ১ দশমিক ৮ মিটার দৈর্ঘ্যের নতুন এক সড়ক নির্মাণ করছে বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফআইডিসি)। করোনাজনিত বন্ধের মধ্যেই পাহাড় কাটতে নিয়োগ করা হয়েছে ঠিকাদার। এপ্রিল থেকে কাজও করছে তারা। এরই মধ্যে কেটে ফেলেছে পাঁচ পাহাড়ের পাদদেশ। কেটে ফেলা পাহাড়ের পরিমাণ ২৪ হাজার বর্গফুটেরও বেশি।
রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড় কাটার প্রমাণও পেয়েছে। কোনো অনুমতি না নিয়ে এভাবে পাহাড় কাটায় বিএফআইডিসি ও তাদের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে আলাদাভাবে নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে বিএফআইডিসি বলছে, বন বিভাগের সঙ্গে থাকা চুক্তির শর্ত মেনেই পাহাড়ের পাদদেশ কেটে রাস্তা করছে তারা। প্রসঙ্গত, ১৫ পাহাড় কেটে এভাবে রাস্তা করায় চলতি বছরই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (চউক) ১০ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, 'পরিবেশ অধিদপ্তরের তিন সদস্যের একটি টিম গত ৩০ মে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এই টিমের নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ জমির উদ্দিন। পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়ার পর বিএফআইডিসি ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ৮ জুন সশরীরে শুনানিতে আসার জন্য আলাদাভাবে নোটিশ করা হয়েছে।'
তবে বিএফআইডিসি চট্টগ্রামের মহাব্যবস্থাপক মোকছেদুর রহমান বলেন, 'রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার সীমান্তে এই রাবার বাগান করতে বন বিভাগের সঙ্গে বিএফআইডিসির চুক্তি আছে। এ চুক্তির ৫ নম্বর ধারায় রাবার বাগানের প্রয়োজনে রাস্তা নির্মাণ কিংবা অফিস স্থাপনের প্রয়োজনে যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। রাবার বাগান করতে ৪০ বছরের জন্য পাহাড় লিজ নেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি শুনানির সময় ঠিক হয়ে যাবে। কারণ, পাহাড় কাটা হয়নি, কাটা হয়েছে পাহাড়ের পাদদেশ। এখানে কোনো ব্যক্তিস্বার্থ নেই।'
পরিবেশ অধিদপ্তরের গঠিত টিমটির দেওয়া গত শনিবারের নোটিশে অবশ্য বলা হয়েছে, পাহাড়ের পাদদেশে এত দিন আনুমানিক ১০ ফুট প্রশস্ত হাঁটার রাস্তা ছিল। এটিকে এখন দৈর্ঘ্যে ১ দশমিক ৮ মিটার ও প্রস্থে প্রায় ১৩ ফুট বাড়ানো হচ্ছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাজেদা এন্টারপ্রাইজ বিএফআইডিসির পক্ষে পাহাড় কেটে এই সড়ক বাড়ানোর কাজ করছে। এ জন্য ১০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত পাহাড় কেটেছে তারা। কর্তিত পাহাড়ের পরিমাণ আনুমানিক ২৪ হাজার ৭৯৬ বর্গফুট। এ জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এবং রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান ও ভান্ডার রক্ষক নাজিম উদ্দিনের নামে নোটিশ ইস্যু করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ জমির উদ্দিন বলেন, 'ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি, এরই মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার বর্গফুট পাহাড় কেটে ফেলেছে তারা। যেভাবে পাদদেশ কাটা হচ্ছে, তা পুরো পাহাড়ের জন্যই হুমকি তৈরি করছে। তাই ঘটনাস্থলে যাদের পেয়েছি, তাদের নামে শুনানিতে সশরীরে আসার জন্য নোটিশ ইস্যু করেছি।' পরিদর্শন টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক আফজারুল ইসলাম ও ভান্ডার রক্ষক নাজিম উদ্দিন।
রাবার বাগানের ম্যানেজার মোহা. আতিকুর রহমান বলেন, 'রাবার গাছ তো পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী। স্বাভাবিক গাছের তুলনায় এটি বেশি কার্বন নেয়। ৮ থেকে ১০টি পাহাড়ের প্রায় ১০০ একর জায়গায় সাড়ে বাইশ হাজার রাবার গাছ লাগানোর একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। চারা আনা-নেওয়া ও রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধার্থে পাহাড়ের পাদদেশের রাস্তাটি আগেও ছিল। তবে তা আরও সম্প্রসারণ করা হচ্ছিল। চার থেকে পাঁচটি পাহাড়ের পাদদেশ থেকে এ জন্য কিছু মাটি সরানো হয়েছে। মূল পাহাড় অক্ষত রেখেই এই কাজ করছে ঠিকাদার। পরিবেশ অধিদপ্তরের শুনানিতে এসব যুক্তি তুলে ধরা হবে।'
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোথাও কোনো পাহাড় কাটা যাবে না। কিন্তু বিএফআইডিসি এই অনুমতি না নেওয়ায় বাদ সেধেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সেখানকার কর্মকর্তারা বলছেন, আসন্ন বর্ষায় পাদদেশে মাটি না থাকায় এসব পাহাড় ধস হতে পারে। চুক্তি অনুযায়ী না কেটে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পাহাড় কাটছে খাড়াখাড়িভাবে। এতে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাজেদা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রাশেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মসজিদে আছেন জানিয়ে পরে ফোন করতে বলেন। পরে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মন্তব্য করুন