শুভ জন্মদিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি-সংগৃহীত
উমর ফারুক
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৩ | ১০:১১ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ | ১০:২১
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় একটি আবেগের নাম। একটি সফল আন্দোলনের ফসল। একটি বৃহৎ স্বপ্নের বীজতলা। বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্ম খানিকটা রূপকথার মতো।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। নাম রাখা হয় রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সংসদের অবর্তমানে অর্ডিন্যান্সের ওপর ভর করে শুরু হয় যাত্রা। পরে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্সটি সংসদে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর ২০০৯ আইন নামে পাস হয়। কার্যকর হয় ১২ অক্টোবর ২০০৮ থেকে।
১৪ বছর আগে, শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়-রংপুরের পরিত্যক্ত দুটি ভবনের ময়লার স্তূপ সরিয়ে শুরু হয় বেরোবির পথচলা। ক্লাস শুরু হয় ৪ এপ্রিল ২০০৯। ১২ জন শিক্ষক ও ৩০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পথ চলতে শুরু করে উত্তরের উচ্চশিক্ষার এই বাতিঘর। ইতিহাস বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান দুটি ছোট্ট কাঠের টেবিল জোড়া দিয়ে শুরু করেছিলেন তাঁর দাপ্তরিক কাজ। অতীতের সেই জীর্ণতার কথা ভাবলে আজকের প্রাপ্তির খাতা একেবারে শূন্য নয়, বরং অনেক।
চলতে চলতে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বেরোবি আজ বয়সে কিশোর। ১৫ বছরের দুরন্ত কিশোর। কিশোর বিশ্ববিদ্যালয়টি ইতোমধ্যে তার আলো ছড়িয়েছে দেশে ও বিদেশে। তাই তো সমসাময়িক অন্য যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেরোবির ইতিবাচক পরিচিতি অনেকটা উজ্জ্বল, অনন্য ও গভীর।
দেড় যুগে কী পেল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়? উত্তর খুঁজলে যেমন অনেকগুলো তৃপ্তি খুঁজে পাওয়া যাবে তেমনি পাওয়া যাবে দু-একটি অতৃপ্তিও। বেরোবি থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে প্রতিবছর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে দেশ ও সমাজ সেবায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখছেন শিক্ষার্থীরা। অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন।
এ কথা সত্য, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতা পরিমাপের একমাত্র মাপকাঠি নয়। একটি প্রতিষ্ঠান কতটা মানবিক, অসাম্প্রদায়িক চেতনা সম্পন্ন ও সুনাগরিক তৈরি করতে পারছে সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি বৈকি। এই মানদণ্ডেও বেরোবির শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি এগিয়ে। অনেক কিছু ছাপিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রাপ্তি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। পঁচাত্তর একর সবুজ ভূখণ্ড ও শিক্ষার সুনিপুণ পরিবেশ আজকের বেরোবির প্রাণ। শিক্ষকদের আন্তরিকতায় শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনন্য সম্পর্কের মধ্য দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে অনেকের কাছে ঈর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবার তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দীক্ষা/সুষ্ঠু পরিবেশ, মানসম্পন্ন শিক্ষা’। প্রতিপাদ্যটি গভীর ইতিবাচক স্বপ্নের জানান দিচ্ছে।
আনন্দের সঙ্গে বলতে হয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আজ সেশনজটমুক্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এখন লক্ষ্য সুষ্ঠু পরিবেশ ও মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা। নানাবিধ কারণে অতীতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ব্যাপকভাবে বিনষ্ট হয়েছে। সাবেক একাধিক উপাচার্যের সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ধ্বংস করেছে। কখনও কখনও শিক্ষকবৃন্দের লেজুড়বৃত্তিও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করতে অনেকাংশে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে মানসম্পন্ন শিক্ষা। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণের আদি শর্ত হলো, দুর্নীতিমুক্ত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে পর্যাপ্ত সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহূর্তে গভীর শিক্ষক সংকটে ভুগছে। আছে বর্ণনাতীত শ্রেণিকক্ষ ও অবকাঠামো সংকট। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতকরণের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা জরুরি।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরের অন্যতম সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। মানুষের ভালোবাসা ও আঞ্চলিক সম্ভাবনা বিশ্ববিদ্যালয়টির সবচেয়ে বড় পুঁজি। মান বজায় রেখে, আগামীর বিশ্বে টিকে থাকতে হবে। প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে হবে। সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যেতে হবে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। সেই সীমাহীন প্রত্যাশার পথে হাঁটুক বেরোবি। আলো জ্বালুক। সে আলো ছড়িয়ে পড়ুক সারাদেশে, সারাবিশ্বে। শুভ জন্মদিন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়!
লেখক: উমর ফারুক।
শিক্ষক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ,
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
- বিষয় :
- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
- শুভ জন্মদিন