ঢাকা শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩

ইসলাম ও সমাজ

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার তাগিদ

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার তাগিদ

প্রতীকী ছবি

মো. শাহজাহান কবীর

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:২০ | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:২০

ইসলাম আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেছে। ইসলামের অনুসারী কোনো মুমিন আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করলে তাঁকে অবশ্যই আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। এক কথায়, আত্মীয়দের প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা পোষণ, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, আন্তরিকতা, সাহায্য এবং উপদেশ দিয়ে তাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা অতি জরুরি।

এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা আন নিসার ১ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহকে ভয় করো, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচ্ঞা করে থাকো এবং আত্মীয়-জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।’ 

অন্যত্র মহান আল্লাহতায়ালা সুরা নিসার ৩৬ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে ও কোনো কিছুকে তাঁর সঙ্গে শরিক করবে না। পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক, অহংকারীকে।’ 

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার রিজিকের প্রাচুর্য এবং দীর্ঘ জীবনের প্রত্যাশা করে, তার উচিত আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। (মিশকাত ৪১৯)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, রাসুলে পাক (সা.) মদিনায় আগমনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আমিও তাঁর দরবারে গিয়ে হাজির হলাম। সর্বপ্রথম আমার কানে তাঁর যে কথাটি প্রবেশ করল– ‘হে লোক সকল! তোমরা পরস্পর পরস্পরকে বেশি করে সালাম দাও। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে খাদ্য দান করো। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলো এবং এমন সময়ে নামাজে মনোনিবেশ করো, যখন সাধারণ লোকেরা নিদ্রামগ্ন থাকে। স্মরণ রেখো, এ কথাগুলো পালন করলে তোমরা পরম সুখ ও শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ (মিশকাত) 

আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে পবিত্র কোরআনের সুরা নাহলের ৯০ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা সবার সঙ্গে ন্যায় ও সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছেন এবং নির্দেশ দিচ্ছেন আত্মীয়স্বজনের হক আদায় করার জন্য।’ 

আলোচ্য আয়াতাংশে সদ্ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে সামর্থ্যানুযায়ী আত্মীয়-আপনজনের আর্থিক সেবা-যত্ন, তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ এবং খবর নেওয়াও অন্তর্ভুক্ত। 
আল্লাহতায়ালা সুরা বাকারার ৮৩ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘স্মরণ করো, যখন আমরা বনি ইসরায়েলের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করবে না, পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, পিতৃহীন ও দরিদ্রদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে।’

হজরত সালমান ইবনে আমের (রা.) বলেন, রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, ‘সাদকার মাল সাধারণ গরিব-মিসকিনকে দান করলে তাতে তো শুধু সদকার সওয়াবই পাওয়া যায়। আর তা যদি নিজের রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়স্বজনকে দান করা হয়, তাহলে তাতে দুটি সওয়াব পাওয়া যায়। একটি হলো সাদকার সওয়াব এবং আরেকটি হলো আত্মীয়তার হক আদায় করার সওয়াব।’

অন্যত্র রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা এবং ওই সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ ও অটুট রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা সবার জন্য আবশ্যক। 

ড. মো. শাহজাহান কবীর: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

আরও পড়ুন