পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক লোকই আছে, যারা তাদের কর্মে শুরু থেকে শেষ অবধি জড়িত থাকে। এ ধরনের লোকের সংখ্যা অনেক। তা সত্ত্বেও তাদের সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি না। কারণ আমাদের সময় নেই, আমরা ব্যস্ত আমাদের নিয়েই। বিশ্বে সিলেক্টিভ কিছু পেশা রয়েছে যেমন কৃষিকাজ। সেখানে পরিস্কার লক্ষণীয় যে, একজন কৃষক তার কর্মে শুরু থেকে শেষ অবধি জড়িত। তাই তাদের মধ্যে একটি হোলিস্টিক ভিউ তৈরি হয়। যেমন বীজ বপন থেকে শুরু করে পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া শেষে তাকে জীবকল্যাণে ব্যবহার অবধি একজন কৃষকের সক্রিয় ভূমিকা অপরিসীম।

তাদের জ্ঞানের ভাণ্ডারে জড়িত রয়েছে উৎপাদনের শুরু থেকে শেষ প্রক্রিয়া কনসেপ্ট; যা অন্য কোনো পেশায় সচরাচর দেখা যায় না। তারা নিজেরাই কর্মী আবার নিজেরাই বস। বলা যেতে পারে তাদের মধ্যে ৩৬০ ডিগ্রি হোলিস্টিক ভিউ অব ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাবিলিটি রয়েছে।

আমার জন্ম গ্রামে, তাই দেখেছি কৃষিকাজ। কৃষিকাজে অনেক সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি। অনেক কিছু তখন শিখেছি, যার গুণগত ব্যবহার পাশ্চাত্যের শিক্ষা এবং কর্মজীবনে মনের অজান্তে এসে হাজির হয়েছে। আমার সৌভাগ্য হয়েছে ওষুধের জগতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করার। বাংলাদেশের ওষুধ এবং তার উৎপাদন নিয়ে নানা লেখা প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে। ওষুধের নিরাপদ এবং যৌক্তিক ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতকরণে ওষুধ কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনিভাবে ফার্মাসিস্টদের ভূমিকাও অপরিসীম। ওষুধ কোম্পানির মূল কাজ শুধু ওষুধ তৈরি করা নয়।

চিকিৎসকের কাজ ডায়াগনস্টিক উপায়ে রোগীর রোগ নির্ণয় করা। তারপর প্রেসক্রিপশন দেওয়া কোন রোগের কী ওষুধ। ওষুধ যখন ফার্মাসিতে বা দোকানে বিক্রয়ের জন্য আনা হয়, দোকানের মালিক ওষুধ সংরক্ষণ করবেন ওষুধের ওপর যে নিয়ম নির্ধারিত করা হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে। যদি লেবেলিংয়ে লেখা থাকে কোল্ডস্টোরেজ এবং তাপমাত্রা পল্গাস ৪-৮ ডিগ্রি তখন তা সেভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। এটি করতে হবে ওষুধের গুণগত ফল পেতে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রেহাই পেতে। ওষুধে যদি রুম টেম্পারেচারে সংরক্ষণ করার কথা লেখা থাকে তাহলে সেটাই করতে হবে।

আমার প্রশ্ন- বাংলাদেশে রুম টেম্পারেচার গরমে কত এবং শীতেই বা কত? যদি ওষুধ তৈরির সময় এ বিষয় খেয়াল করা না হয় তাহলে ওষুধের গুণগতমান বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যে খারাপ হবে না তার কী প্রমাণ রয়েছে? জানতে হবে বা এ ধরনের উত্তর ডকুমেন্ট ওয়েতে থাকতে হবে বর্তমান পাশ্চাত্যে অনেক দেশ চেষ্টা করছে তার দেশের বাইরে ওষুধ উৎপাদন করতে। লক্ষ্য হলো খরচ কমানো। তার মানে এই নয় যে, কম খরচে ওষুধের গুণগত মান কমানো বরং গুণাগুণ ঠিক রেখে লেবার কস্ট কমাতে তাদের এই প্ল্যান। ওষুধ উৎপাদনের ওপর বাংলাদেশ হতে পারে গার্মেন্টসের মতো বিশ্ববাজারে এক নতুন আকর্ষণ। তাই আমার পরামর্শ, সবার দুর্নীতি এবং ভেজালমুক্ত মাইন্ডসেট তৈরি করা। এটি আশু প্রয়োজন। ভাবুন গোটাবিশ্বের ওষুধ তৈরি করার মতো ক্যাপাসিটি এবং ক্যাপাবিলিটি বাংলাদেশে রয়েছে। নেই শুধু ম্যুরাল ভ্যালু, সৎ ও উন্নত চরিত্র। সুতরাং দুর্নীতি আর ভেজাল ছাড়লেই বাংলাদেশ ওষুধশিল্পে বিশ্ববাজারে গুরুত্বপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারবে এবং দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করতে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবে।