- চতুরঙ্গ
- গর্বের বিসিএস
গর্বের বিসিএস

এই তো সেদিন বিখ্যাত শিল্পী রফিকুন নবী ওরফে টোকাই খ্যাত রনবী ভাইয়ের বাসায় কথাশিল্পী শওকত ওসমানের প্রায় ৬২ বছর আগের মুদ্রিত এইচ জি ওয়েলস-এর 'টাইম মেশিন' অনুসরণে রচিত উপন্যাসটির প্রচ্ছদ আঁকার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো মনে হলো; তাই তো বাংলাদেশের এই প্রভূত উন্নয়নের পেছনে আজ বিসিএস ক্যাডারদের নাম সর্বাগ্রে খোদিত করা উচিত। এতদিন আমরা শুধু বিসিএস ক্যাডারদের প্রশাসনিক দাপ্তরিক কাজের পারদর্শী বলেই চিহ্নিত করতাম- ভাবতাম এদের বিচক্ষণ পরিচালনায় আজ বাংলার প্রতিটি মন্ত্রণালয় শনৈ শনৈ উন্নতির পথে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে।
যার প্রতিচ্ছবি আজকের পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, মাওয়া হাইওয়ে, তথ্য-প্রযুক্তিতে দ্রুত বিশ্ব দরবারে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করা। প্রায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দক্ষ বিসিএস ক্যাডারদের পরিচালনার ছাপ। আজ বাংলার এই প্রশাসনিক কর্মীদের প্রতি দেশের আপামর জনসাধারণ গর্বের দৃষ্টিতে তাকিয়ে। কারণ আমাদের বিসিএস ক্যাডাররা হয়তো শিক্ষা জীবনে সংস্কৃতি ভাষায় এম এ পাস করেছেন, তারপর বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে 'বিসিএস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একাডেমি' থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির পর এক একজন হয়ে ওঠেন দেশ গড়ার দক্ষ কারিগর। বর্তমানে শ্রদ্ধেয় শিল্পী রনবী ভাইয়ের কথায় বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলাম, বিসিএস ক্যাডাররা শুধু প্রশাসনিক দক্ষতাই নয়, আজ তারা বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতিতে আন্তর্জাতিক মানের অবদান রাখছেন।
শ্রদ্ধেয় সচিব মন্জুরে মওলা, হাসনাত আবদুল হাই, আবদুস শাকুর, মন্জুরুল করিম, মোফাজ্জেল করিম, এ জেড এম ওবায়দুল্লাহ্ খান, আবুল খায়ের মুসলেহ উদ্দিন, ইদানীংয়ের কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ড. মোমেন, ড. মহম্মদ আলী খান, ওয়াসী আহমেদ, আমিনুল ইসলাম, শাহাবুদ্দিন নাগরী, জনাব শফিক, রাশেদুল ইসলাম, মোস্তফা মহিউদ্দিন, মাসুদ আহমেদ, কবি আবদুল মান্নান, হারুন-উর-রশীদ, মাহবুব তালুকদার, এমনি শত প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি তাদের লেখনীর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে বিশ্বমানের অবদান রাখছেন। জনপ্রশাসনের মতো কাঠখোট্টা, নীরস মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেও কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, কবিতার পরতে পরতে ছড়িয়ে দিয়েছেন, বীর রস থেকে শান্তরস, বীভৎস রস থেকে করুণ রস। ড. মোমেন তার 'কেলভিনেটর' ছোট গল্পটা বিশ্বমানে পৌঁছে দিয়েছেন। জনাব রাশেদুল ইসলামের চাঁদের. পাহাড়ের, পাগলা মামা, প্রেমেন্দ্রনাথ মিত্রের 'ঘনাদা'কে ছাড়িয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। মোস্তফা মহিউদ্দিনের ছোটদের মনন গঠনের লেখাগুলো সব মুক্তো দানার মতো জ্বলজ্বল করছে।
আর কবি মান্নানের 'কি লাভ বাগানে এসে, যদি থাকো স্পর্শের অতিত...' সাধু সাধু। এসব দেখে আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, বিশ্বের খুব কম দেশেই দেখা যায়, প্রশাসনের মাঝে এত প্রতিভার ভিড়! এ কেবল বাংলাতেই সম্ভব।
শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্র-সংস্কৃতিতে এদের আবদান সত্যিই চমকপ্রদ। কিন্তু শ্রদ্ধেয় শিল্পী রফিকুন নবী ভাইয়ের প্রশ্নে মনে হলো তাই তো, বিসিএস ক্যাডাররা শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্র-সংস্কৃতিতে সব ক্ষেত্রেই বিশ্বমানের অবদান রাখছেন, তাহলে চিত্রশিল্প বা পেইন্টিং-এ কেন এদের কোনো অবদান নেই!
বিসিএস ক্যাডারের র্স্পশ থেকে পেইন্টিং কেন বঞ্চিত থাকবে! পেইন্টিংয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বিসিএস ক্যাডারের অবদান চোখে পড়েনি। কেবল ড. মোমেন নিজে পেইন্টিং না করেও পেইন্টিংয়ের ওপর বই লিখেছেন, 'বিশ্বখ্যাত ৫১ চিত্রশিল্পী' আন্দালিব রাশদী (ড. মোমেনের, ছদ্মনাম)।
আমরা আশা করব, অচিরেই বাংলার এসব কৃতী বিসিএস সন্তানরা পেইন্টিং বা চিত্রশিল্পে নিজেদের মেলে ধরে তাদের প্রতিভার আলোয় বিশ্বমানের ছবি এঁকে একদিন পাবলো পিকাসো, মার্ক সাগাল বা হেনরি মাতিসের মতো বাংলাদেশের চিত্রশিল্পকে বিশ্বমানের উচ্চতায় পৌঁছে দেবেন।
মন্তব্য করুন