পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস রোগটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে এক কোটির বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত এবং সমসংখ্যক মানুষ প্রি-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। 

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির তথ্যমতে, উপসর্গ না থাকায় আমাদের দেশে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ৫৬ শতাংশ মানুষ জানেন না তার রোগটি সম্পর্কে। মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষের রোগটি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রয়েছে। নতুন রোগীর পাশাপাশি ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতাও বেড়ে যাচ্ছে। তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা দেশের ১৮টি শহরে ডায়াবেটিসসহ অসংক্রামক রোগ বিষয়ে প্রচারমূলক কাজ করতে যাচ্ছি। ১৮টি শহরের মধ্যে আটটি বিভাগীয় শহরসহ দেশের বড় শহরগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে। এরই অংশ হিসেবে এসব শহরে মোবাইল ডায়বেটিস সেন্টার পরিচালনা করা হবে। কর্মসূচির নাম হচ্ছে 'কান্ট্রি চেইঞ্জিং ডায়াবেটিস'। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রতিটি শহরেই স্থানীয় ডায়াবেটিস সমিতি, সিভিল সার্জন অফিসসহ স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি যেমন- মেয়র ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে এই কর্মসূচির নেতৃত্বে রাখা হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের আমরা এই কার্যক্রমের আত্ততায় আনতে চেষ্টা করব। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি শহরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেমন- রোটারি ক্লাব, লায়ন্স ক্লাব, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, গার্লস গাইড এবং রেড ক্রিসেন্টের মতো প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয় সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সম্পৃক্ত করা হবে। আসলে আমরা শহরের প্রতিটি মানুষকে সচেতন করতে উদ্যোগ নেবো।

স্কুল শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সিনিয়র সিটিজেন সবাইকে এ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। একটি গাড়ির ভেতরে ডায়বেটিস স্ট্ক্রিনিংয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে যেসব আধুনিক পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়, সেই সুবিধাগুলো এই আধুনিক গাড়িতে স্থাপন করা হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীকে আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে মোবাইল ডায়বেটিস পরিচালনার জন্য ডায়াবেটিক সমিতিকে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য। প্রতিটি শহরে আমরা দুই থেকে তিন দিন থাকব। আমরা মনে করি, শুধু সচেতনতা বৃদ্ধি করলে চলবে না, আক্রান্ত মানুষগুলো খুঁজে বের করে দ্রুত চিকিৎসা সেবার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি শহরে আমরা বিনামূল্যে এক হাজার জনের ডায়াবেটিস স্ট্ক্রিনিং করব। এছাড়া ২০০-৩০০ জন ডায়াবেটিস রোগীকে চিকিৎসা পরামর্শের পাশাপাশি সমিতির ডায়াবেটিস কেয়ার গাইডলাইন অনুসারে তাদের শারীরিক জটিলতা বিশেষ করে চোখ, হার্ট, কিডনি, লিভার, রক্তের চর্বি ও পায়ের নার্ভ ও রক্ত চলাচলের জটিলতা স্ট্ক্রিনিং করা হবে। মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা প্রথম ছয় মাস এই সেবাগুলো বিনামূল্যে দেবো।

আমরা এখান থেকে এই সেবাটি দেশের প্রতিটি উপজেলায় নিয়ে যাব। আমাদের ৭০ শতাংশ লোক এখনও গ্রামে বাস করেন। যেভাবেই দেখি না কেন, এখনও গ্রাম পর্যায়ে মানসম্মত সেবা নিয়ে যেতে পারিনি। এখানকার শিক্ষা কাজে লাগিয়ে আমরা ৫০০টি ডায়াবেটিক রিসার্চ অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সেন্টার তৈরি করব। আমরা যেসব সেবা দেবো সেসব সেবার স্বাভাবিক মূল্যমান হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকা। উপজেলা সদরে আমরা একই সেবা এক হাজার টাকায় দেবো। এখানে ডাক্তার থাকবেন। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে অনলাইন পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি অনলাইন ডায়াবেটিস শিক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। সেবাগ্রহীতারা এখানে ১-২ ঘণ্টার মধ্যে সেবা নিয়ে চলে যেতে পারবেন। এর ফলে অর্থের পাশাপাশি তাদের সময় বেঁচে যাবে।

এই সেন্টারগুলো আমাদের নেতৃত্বেই হবে। আমরা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। এখানে যদি হেলথ নেটওয়ার্ক থাকে, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। বড় শক্তি হচ্ছে, আমাদের প্রশিক্ষিত ১৬ হাজার ডাক্তার রয়েছেন। এনসিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন অবশ্যই আমাদের সঙ্গে পার্টনার হিসেবে থাকবে। সরকার আমাদের সঙ্গে থাকলে গুণগতমান ও কাজের পরিধি বিস্তারে সহায়ক হবে।

কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও এনসিডি কর্নারগুলোর পাশাপাশি সমিতির মসজিদভিত্তিক ডায়াবেটিস কর্নারগুলোর সঙ্গে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে। প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্থাপনা রয়েছে। সুযোগ করে দিলে আমরা এসব স্থাপনা যে কোনো সময় কাজে লাগাতে পারি। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে এসব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশ ডায়বেটিক সমিতির সুনামও রয়েছে। এটি আত্মনির্ভরশীল হেলথ কেয়ার সিস্টেম হচ্ছে। আমরা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানসম্মত সেবা দেওয়ার উপযোগী করে ব্যবহার করতে পারি। তাছাড়া জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তারা আমাদের সহায়তা করতে পারে। তাদের মাঠ কর্মীদেরও আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাতে পারি। এভাবেই বাংলাদেশ ডায়বেটিক সমিতি এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক একটি কার্যকর মডেল নিয়ে আমরা কাজ করব। শুধু সচেতনতা তৈরি করেই কাজ শেষ করতে চাই না, একই সঙ্গে ডায়বেটিসসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগ থেকে লোকজন কীভাবে নিজেদের রক্ষা করবেন সেটিও তাদের জানাব। যদি সে রোগগুলো হয়েও যায়, কীভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রেখে একটি অর্থবহ জীবনযাপন করতে পারেন সে বিষয়ে কথাগুলো বলব।

বিষয় : মোবাইল ডায়াবেটিস সেন্টার

মন্তব্য করুন