লেখককে লেখার সাধনা একাই করতে হয়। সাধনার কালে তার কোনো বন্ধু থাকে না। থাকলেও কোনো কাজে আসে না। লেখক হচ্ছে মহাসমুদ্রে ভাসমান সেই তরীর একমাত্র যাত্রী, যে কিনা উত্তাল তরঙ্গের সঙ্গে লড়াই করছে। লড়াইটা তাকে একাই করতে হয়। একাই তাকে সর্বনাশা তরঙ্গের সঙ্গে লড়াই করে তীরে ভিড়তে হয়। ফরাসি ঔপন্যাসিক জ্যঁ-মারি গুস্তাভ ল্য ক্লেজিওর যেমন বলেন, ‘লেখক চিরকাল একা। তার জীবনের সম্বলই হবে নিঃসঙ্গতা। সব সময়ই তাই ছিল। শিশু হিসেবে সে নাজুক, শঙ্কিত, কোলেৎ-এর গল্পের সেই মেয়েটির মতো, গভীর অভিনিবেশে বিপন্ন বড় বড় দুচোখ মেলে নিজের বাবা-মাকে যে চুলোচুলি করতে দেখে, অথচ কিছুই করতে পারে না। এই নৈঃসঙ্গই লেখকের দিকে বাড়িয়ে দেয় তার মমতার হাত। নৈঃসঙ্গের হাত ধরেই সে অনুভব করে সুখের প্রকৃত মহিমা।’

কিন্তু লেখকসত্তার বাইরে তো লেখকের আরও একটি সত্তা থাকে, ব্যক্তিসত্তা। সেই সত্তা কি একা? না। তার থাকে স্বজন-পরিজন, বন্ধুবান্ধব। লেখকের একজন যোগ্য বন্ধু থাকা অনেক বড় ব্যাপার। সব লেখকের জীবনে যোগ্য বন্ধুটি জোটে না। পৃথিবীর অল্প কিছু সংখ্যক লেখকের জুটেছিল। ল্যেভ তলস্তয় পেয়েছিলেন ইভান তুর্গেনেভকে, ডি এইচ লরেন্স পেয়েছিলেন ক্যাথরিন মেন্সফিল্ডকে, চার্লস ডিকেন্সকে উইকি কলিন্স, টনি মরিসনকে জেমস বাল্ডউইন, সিলভিয়া প্ল্যাথকে অ্যানি সেক্সটন এবং ট্রম্যান কাপোতকে হারপার লি। তাঁদের বন্ধুত্বের গল্প সাহিত্যের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। হয়ত আরও অনেক লেখক বন্ধুজুটি আছে। এখন মনে পড়ছে না।

বাংলাদেশে কি বন্ধুতের সেই নজির নেই? আছে তো বটেই। প্রখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণ আর কবি আবুল হাসানের বন্ধুত্বের গল্প তো কিংবদন্তি হয়ে আছে। কিংবদন্তি হয়ে আছে প্রায়ত নাট্যকার সেলিম আল দীন ও নাসির উদ্দিন ইউসুফের বন্ধুত্ব। নাসির উদ্দিন ইউসুফকে সেলিম আল দীন বলতেন ‘শিল্পসঙ্গী’। শুধু মুখে বলতেন না, তাঁর অনেক লেখায় লিখেছেনও। তাঁর যোগ্য বন্ধু ছিলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। কিংবা এভাবেও বলা যেতে পারে, নাসির উদ্দিন ইউসুফের যোগ্য বন্ধু ছিলেন সেলিম আল দীন। এদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি সমাজ সংশ্লিষ্টরা জানেন দুজন যে একে অন্যের পরিপূরক ছিলেন। কখনো কখনো হয়ত কারো এমনও মনে হতো, একজনকে ছাড়া অন্যজন অসম্পূর্ণ।

সেলিম আল দীনের লেখকসত্তাকে ধারণ করেছিলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ এবং নাসির উদ্দিন ইউসুফের শিল্পসত্তাকে সেলিম আল দীন। কতটা ধারণ করেছিলেন, তা এদেশের নাট্য-ইতিহাস খুঁজলেই পাওয়া যাবে। আমি এর প্রমাণ পাই সেলিম আল দীনের প্রয়াণের অল্প কিছুদিন পর। তখন তাঁর নাড়িপোঁতা গ্রাম সেনেরখিলে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। ঢাকার সাহিত্য-সংস্কৃতি সমাজের কয়েকজন গিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আমিও। মাঠজুড়ে ছিল স্থানীয় দর্শক-শ্রোতাদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। বক্তারা তাঁদের বক্তৃতায় সেলিম আল দীনের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে বললেন, বক্তিগত স্মৃতিচারণ করলেন। কিন্তু আমাদের প্রাণ ভরছিল না। আমরা অপেক্ষা করছিলাম সেলিম আল দীন সম্পর্কে এমন কিছু শোনার জন্য, যা নতুন, যা আগে কখনো শুনিনি।

আমাদের অপেক্ষা ফুরালো। মঞ্চে উঠলেন সেলিম আল দীনের শিল্পসঙ্গী নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। বক্তৃতা শুরু করলেন। গোটা মাঠে নামল নীরবতা। আমাদের চিত্ত নিবিষ্ট হলো তাঁর কথার দিকে। প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিটের বক্তৃতা শেষ করে তিনি মঞ্চ থেকে নামলেন। আমরা যারা মঞ্চের পাশে তন্ময় হয়ে তাঁর কথা শুনছিলাম, শ্রদ্ধায় নত হলাম তার পায়ের কাছে, একে একে সবাই তাঁকে কদমবুচি করলাম। আমাদের মনে হয়েছিল শিল্পসঙ্গীকে হারিয়ে যে শোক তিনি বুকে চাপা দিয়ে রেখেছিলেন, সব বেরিয়ে গেছে কথা হয়ে। সেই কথা সাধারণ কোনো কথা নয়, বিশেষ কথা। বাংলা নাটকের ইতিহাস, বিকাশ এবং নাটকে সেলিম আল দীনের অবদান সম্পর্কে তিনি যা বললেন, এর আগে এত সুন্দর করে কেউ বলেননি। লিখেছেন, কিন্তু বলেননি। অন্তত আমি শুনিনি। আমার সেদিন খুব অনুতাপ হয়েছিল। এই জন্য যে, কেন আমি টেপরেকর্ডারটি সঙ্গে নিলাম না! রেকর্ডারটি থাকলে সেই কথামালা আমি রেকর্ড করে রাখতাম। অনুলিখন করলে হয়ে যেত একটি অসাধারণ প্রবন্ধ।

নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু প্রধানত একজন মুক্তিযোদ্ধা। ছিলেন একাত্তরের রণাঙ্গনের অগ্রবর্তী যোদ্ধা, কমান্ডার। যুদ্ধপরবর্তীকালে তিনি বুঝেছিলেন যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি, যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। সশস্ত্র লড়াই ত্যাগ করে তিনি শুরু করলেন সাংস্কৃতিক লড়াই। সঙ্গী হিসেবে পেলেন নাট্যকার সেলিম আল দীনকে। প্রতিষ্ঠা করলেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নাট্যসংগঠন ঢাকা থিয়েটার। সেলিম আল দীন লিখলেন নাটক, ‘সংবাদ কার্টুন’, আর নির্দেশনা দিলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। মঞ্চস্থ হলো ঢাকার মঞ্চে। ঢাকা থিয়েটারের যাত্রা অব্যাহত থাকল, মঞ্চস্থ হতে লাগল একের পর এক নাটক। কিন্তু ঢাকা থিয়েটার তো ঢাকা কেন্দ্রিক। দুই বন্ধু বুঝতে পারলেন সাংস্কৃতিক লড়াই শুধু ঢাকায় চালালে হবে না, চালাতে হবে গোটা দেশে। জাতির মনন গড়তে নাটককে ছড়িয়ে দিতে হবে গ্রামে গ্রামে। সেই ভাবনা থেকেই ঢাকা থিয়েটারের তত্ত্বাবধানে দুই বন্ধু মিলে প্রতিষ্ঠা করলেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। সারা দেশে গড়ে উঠতে লাগল এই নাট্যসংগঠনের শাখা, চলতে লাগল সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ।

সেই সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ এখনো থেমে নেই। এখনো পুরোমাত্রায় সচল দুটি সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার হিসেবে নাসির উদ্দিন ইউসুফ প্রমাণ করেছেন তারা সাংগঠনিক দক্ষতা। দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে আবারও তিনি দক্ষতার প্রমাণ দিলেন। কিন্তু তিনি তৃপ্ত হলেন না। বুঝলেন, শুধু থিয়েটারের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক লড়াই সম্পন্ন হবে না। তাই হাতে নিলেন নতুন কাজ। নির্মাণ করলেন চলচ্চিত্র। আবার যখন টের পেলেন জাতির মধ্যে তৈরি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিস্মৃতির প্রবণতা, তখন শুরু করলেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা। নিজের উপস্থাপনায় চ্যানেল আই-তে শুরু করলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন’ নামের ধারাবাহিক অনুষ্ঠান। মুক্তিযোদ্ধাদের হাজির করতে লাগলেন সেই অনুষ্ঠানে। তাঁদের দিয়ে বলাতে লাগলেন যুদ্ধের স্মৃতি।

 

মাঝেমধ্যে ভাবি, যুদ্ধপরবর্তীকালে নাসির উদ্দিন ইউসুফ যে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, পরবর্তী প্রজন্ম সেই সংগ্রামকে কতটা এগিয়ে নিয়েছিল? যেটুকু নেওয়ার দরকার ছিল সেটুকু কি নিয়েছে? নেয়নি। নেয়নি বলেই সাংস্কৃতিক সংগ্রামটা পথ হারিয়েছে, স্থিমিত হয়ে গেছে। আর সেই সুযোগ নিয়েছে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। তারা একে একে নিভিয়ে দিত লাগল সংস্কৃতির প্রদীপগুলো। অন্ধকার ক্রমশ গভীর থেকে গভীর হতে লাগল, গোটা জাতি হাঁটতে লাগল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টোদিকে। হাঁটতে হাঁটতে এখন তো আমরা পৌঁছে গেছি এক খাদের কিনারে। সে কারণেই আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আস্ফালন, বর্বরতা, নৃশংসতা, ধ্বংসকাণ্ড।

কিন্তু নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু কি থেমে গেছেন? না, তিনি থামেননি। কীভাবে থামবেন? তার রক্তে তো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ। আমরা দেখেছি দেশের নানা ক্রান্তিকালে তার ভূমিকা। দেখেছি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সৃষ্ট গণজাগরণ মঞ্চে তাঁর অনন্য সম্পৃক্ততা। তখন তিনি পারতেন চুপ করে থাকতে, নিজেকে আড়াল করে রাখতে। থাকেননি, রাখেননি। মুগ্ধ বিস্ময়ে আমরা তখন দেখেছি তাঁর তৎপরতা। তখন তাঁর তৎপরতা আমাকে এতটাই মুগ্ধ আর অনুপ্রাণিত করেছিল যে, তিনি ঢুকে পড়েন আমার মায়ামুকুট উপন্যাসে। একটি অধ্যায়ে লিখেছিলাম এইভাবে:

“কাদেরকে তুলে প্রিজন ভ্যানটি চলে গেল। আদালত ভবনের সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলেন মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা কমান্ডার ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সারা দেশে যিনি ‘বাচ্চু কমান্ডার’ নামে পরিচিত। তার সঙ্গে সেই অধ্যাপক, কাদেরকে যিনি শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছেন। কমান্ডারের চেহারায় স্পষ্ট হতাশার ছাপ। সাংবাদিকেরা ঘিরে ধরল তাকে। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করল, ‘কাদেরের রায়ের ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?’ চুপ করে রইলেন কমান্ডার। কয়েক মুহূর্ত। তারপর ব্লেজারের পকেট থেকে হাত দুটো বের করে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। তাকালেন দূরে, শূন্য দৃষ্টিতে। তারপর বললেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি বলব এই রায় আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেনি। ভয়াবহ অপরাধে কাদেরের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তারপরও কেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো না? আমরা এই রায় প্রত্যাখ্যান করলাম।’ আদালত থেকে বেরিয়ে বুকভরা হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন বাচ্চু কমান্ডার। বয়স হয়েছে তার। দুপুরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম না নিলে চলে না। ভাত খেয়ে মোবাইলটা সাইলেন্ট করে শুয়ে পড়েছিলেন। খানিকের মধ্যেই তন্দ্রা নামল। তন্দ্রার ঘোরে দেখলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনের কাছে একটা দেবদারুর ছায়ায় দাঁড়িয়ে শহীদজননী জাহানারা ইমাম, কুড়ি বছর আগে যার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, হাতের ইশারায় তাকে ডাকছেন। কমান্ডার শুনতে পেলেন শহীদজননীর দূরাগত কণ্ঠস্বর, ‘ওঠো বাচ্চু। সূর্য ডুবছে, তাড়াতাড়ি ওঠো।’ হুড়মুড়িয়ে তিনি উঠে বসলেন। সিথানে রাখা মোবাইলটি হাতে নিয়ে দেখলেন বিয়াল্লিশটি মিস্‌ডকল। তার মধ্যে সাতটি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতির নম্বরের। কল ব্যাক করে তিনি তার সঙ্গে কথা বললেন কয়েক মিনিট। তারপর দ্রুত জামা-কাপড় পরে বেরিয়ে পড়লেন টিএসসির উদ্দেশে।” 

এখনো তিনি হাল ছাড়েননি, দক্ষ নাবিকের মতো ধরে রেখেছেন। দেশ ও জাতির যে কোনো সংকটে এখনো তিনি সামনে এসে দাঁড়ান। কথা বলেন, প্রতিবাদে সোচ্চার হন, প্রতিরোধের ঘোষণা দেন। আমরা তাঁর প্রতিবাদ-প্রতিরোধ দেখে সাহসী হই, অনুপ্রাণিত হই। আমাদের মনে হয়, আমরা পথহারা নই, অভিভাবকহারা নই। আমাদের রয়েছেন একজন অভিভাবক, যিনি আমাদের দিশা দেবেন, বটবৃক্ষ হয়ে ছায়া দেবেন। রৌদ্রক্লান্ত পথিকের বটবৃক্ষের প্রয়োজন হয়। বটবৃক্ষের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে সে পথকষ্ট দূর করে। জীবন তো এক যাত্রা। জীবনপথের যাত্রায় যদি কখনো ক্লান্তি ভর করে, তখন প্রয়োজন হয় বটবৃক্ষের ছায়ার। তখন মাথার ওপর কারো একজনের হাত রাখার প্রয়োজন হয়। বাংলা মঞ্চের যুগসৃষ্টা নাসির উদ্দিন ইউসুফ আমার কাছে সেই বটবৃক্ষ, যাঁরা ছায়াতলে আমি বিশ্রাম নিই, যিনি সর্বদা আমার মাথার ওপর আশীর্বাদের হাত ধরে রাখেন। 

একাত্তর বছর বয়সে পদার্পণ করলেন একাত্তরের বীরযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। এই জন্মদিন নিঃসন্দেহে বিশেষ। ইচ্ছে ছিল এ বিশেষ দিনটি আমরা বিশেষভাবে উদযাপন করব। করোনা দুর্যোগের কারণে হলো না। একদিন হবে নিশ্চয়ই। এই দুর্যোগ তো আর চিরকাল থাকবে না। একদিন কাটবেই। আমরা সে দিনের প্রতীক্ষায়।

হে বীর মুক্তিযোদ্ধা, হে বাংলা মঞ্চের যুগস্রষ্টা, হে আমাদের অভিভাবক, আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। সশ্রদ্ধ প্রণতি। আশাবাদ ঘোষণা করি, আপনার জীবৎকালেই আমরা উৎযাপন করব আপনার জন্মশতবর্ষ।

বিষয় : নাসির উদ্দিন ইউসুফ

মন্তব্য করুন