রংপুর শহরে বেতপট্টিতে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে একটি নড়বড়ে টিনের ঘরে বসার পর আমার ভয় হয়েছিল, ঘরটি কখন যে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। দিনটি ছিল রোববার। অভিযাত্রিক নামে সাহিত্য-সংস্কৃতি গোষ্ঠীর ওই ঘরের কাঠের পাটাটনে বসে জীবনের প্রথম নিজের লেখা পাঠ করতে গিয়েছিলাম। অভিযাত্রিক সাহিত্য-সংস্কৃতি গোষ্ঠী প্রতি রোববার বিকেলে (তখন সাপ্তাহিক ছুটি ছিল রোববার) তরুণ লেখকদের লেখা পাঠের আসর ওই নড়েবড়ে ঘরে বসতো। সুফী স্যার, অর্থাৎ অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন সুফী ওই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। তার আহ্বানে আমার ওই অনুষ্ঠানে যাওয়া। অনুষ্ঠান শুরুর প্রাক্কালে সুফী স্যার ঘোষণা দিলেন, মহান মানবতাবাদী লেখক ও দার্শনিক জ্যঁ-পল সার্ত্রের মৃত্যুতে ১ মিনিট নীরবতা পালনের।

ওই দিন থেকে জ্যঁ-পল সার্ত্রেকে নিয়ে মনের ভেতর আগ্রহ জন্মায়। কিন্তু তাকে কোথাও খুঁজে পাই না। রংপুর শহরে একমাত্র বইয়ের আকড় পাবলিক লাইব্রেরি, সেখানে গিয়েও তার বইয়ের দেখা পাইনি। তার বইয়ের দেখা মিলল চার বছর পর ১৯৮৪ সালে ঢাকায়, সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরিতে। সেখানে তার প্রথম লেখা নসিরার অনুবাদ এবং 'শেকল অন্তরে' নামে একটি ঢাউস বইয়ের দেখা মেলে। এরপর গতিধারার প্রকাশক প্রয়াত আবুল বাসার তার কয়েকটি বইয়ের অনুবাদ প্রকাশ করেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো 'অস্তিত্ববাদ ও মানবতাবাদ' বইটি আমাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।

তবে জ্যঁ-পল সার্ত্রের 'অস্তিত্ববাদ ও মানবতাবাদ' দর্শন নিয়ে আমার মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হয়তো অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে, যারা এতদিন তার এ দর্শন সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। কেননা, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। এতে আক্রান্ত হয়েছে কোটি কোটি মানুষ। মারা গেছে লাখ লাখ। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার কালে মানবজাতি এমন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে তা কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এর থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছেন এবং আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বিপর্যয়ের ঝড় থামাতে তারা এখন পর্যন্ত সফলতা দেখাতে সক্ষম হননি। তবে সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পেরেছেন মাত্র। কিন্তু তাতে মানবজাতি আশঙ্কামুক্ত হতে পারেনি।। ফলে, মানবজাতির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। সেখানে অস্তিত্ববাদ নিয়ে গুণকীর্তন করা বাহুল্য মনে হবে। এর পরও এই মহান মানবতাবাদী দার্শনিককে স্মরণ করে কিছু লিখছি। কারণ, আজ তার মৃত্যুদিন। ৪১ বছর আগে ১ মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে তাকে স্মরণ করেছিলাম।

সাত্রের্র 'অস্তিত্ববাদ ও মানবতাবাদ' দর্শন মনে হয়েছে, মানুষের সত্তার মূল হচ্ছে মানুষ। তার ভাগ্যে নির্মাতা হচ্ছে মানুষ নিজেই। অর্থাৎ মানুষ মানুষের ভবিষ্যৎ। মানুষ তার আপন ভাগ্য নির্ধারণ করবে। নির্ধারিত ভাগ্যের মাধ্যমে মানুষ পরিচালিত হবে না। কর্মেই আপন ভাগ্য নির্ধারণ করবে। এ ছাড়া মানুষই তার নৈতিক আদর্শের বিধাতা। তার ভালো-মন্দ ও অকল্যাণ তার নিজের হাতেই রয়েছে। সার্ত্রের এই অস্তিত্ববাদই মানবতাবাদে রূপান্তরিত হয়েছে।

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানুষ ভীত ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে সার্ত্রে ১৯৪৬ সালে অস্তিত্ববাদ ও মানবতবাদ নামে বইটি লেখেন। তিনি দেখেছেন, মানুষের স্বাধীনতা হরণের মহড়া। এতে মানব অস্তিত্ব পদদলিত হচ্ছে। তিনি বলেছেন, মানুষকে তার মানবিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এটাই হবে মানুষের জীবন-ভাবনা। সার্ত্রে তার জীবন দর্শনের অবতারণা করেছেন এই গ্রন্থে। এ দর্শন তিনি প্রচার করেছেন তার সমগ্র সাহিত্যে। তার এ দর্শন এতই জনপ্রিয়তা পায় যে, তার স্বদেশ ফ্রান্স থেকে গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। পরে সারা পৃথিবীতে এ জীবন দর্শন চিন্তার জগতে বিরাট আলোড়ন তোলে। তবে সার্ত্রের পাশাপাশি বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে মহাত্মা গান্ধীর অহিংসবাদ এবং গণসত্যগ্রহ বিশ্বের অনেক মনীষীর জীবন দর্শনের রেখাপাত করেছে। গান্ধীজির এ জীবন দর্শনও একেবারে নতুন। ঔপনিবেশিক ভারতে অবস্থান করে গান্ধীজি অহিংসবাদ ও গণসত্যগ্রহের মাধ্যমে মানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তির নির্দেশনা দিয়েছেন। তা দর্শনের জগতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।

তবে অস্তিত্ববাদ ও মানবতাবাদ, যাকে ইংরেজিতে বলে এপিস্টেনশিয়ালিজম ইজ হিউম্যানিজম। এই বহুল প্রচারিত শব্দ দুটি সাহিত্য আর দর্শনে বেশ প্রভাব ফেলেছে অনেক আগে থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আরও এর প্রভাব বেড়ে যায়, কী ভালো, কী মন্দ অর্থে। এখানে একটি কথা উল্লেখ করতে হয় যে, গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস এ চিন্তার উদগাতা। পরবর্তীতে দার্শনিক সোরেন কিয়ার্কগাড, ফেড্রিক নীটশে, মার্টিন হাইডেগারের নাম অস্তিত্ববাদের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। তবে এসব দার্শনিককে অতিক্রম করে যান সার্ত্রে। তার প্রথম গ্রন্থ নসিরা এবং পরে নো এপিট উপনাসের মধ্য দিয়ে তার অস্তিত্ববাদের কথা বেরিয়ে আসে। তার প্রথম গ্রন্থ নসিরায় এক ব্যক্তির জীবনের নানা রকম প্রতিঘাতের কথা তিনি লিখেছেন। সেখানে ব্যক্তিজীবনের নিঃসঙ্গতা বোধ নিয়ে সার্ত্রে সৃষ্টি করেছেন এক অনন্য জীবন গাথা। তিনি তার অন্যান্য গ্রন্থে তুলে ধরেছেন অস্তিত্ববাদী দর্শন। অস্তিত্ব সারসত্তা পূর্বগামী এই মন্ত্র নিয়ে ব্যক্তি মানুষকে ঘিরে তৈরি করেছেন এ দর্শন। এ ছাড়া তার দর্শন মানুষের জীবনের সম্ভাবনা, ইচ্ছার প্রত্যয়, অঙ্গীকার ও স্বাধীনতার সঙ্গে মানবতাবাদ মিশে গেছে। পাশাপাশি তিনি মানুষের অস্তিত্ব বলতে বোঝাতে চেয়েছেন 'সেলফ মেকিং এ সিচুয়েশন'।

সার্ত্রের দর্শনে ব্যক্তিস্বাধীনতার একটি বিশেষ স্থান দখল করায় অনেক মনীষী তার দর্শনকে পাশ্চাত্যে বিদ্রোহ হিসেবে মত প্রকাশ করেছেন। অনেকে আবার তার অস্তিত্ববাদকে মানবতাবাদ বলতে গিয়ে বিব্রত বোধ করেছেন। তারা মনে করেন সার্ত্রীয় দর্শনকে, দর্শনের পর্যায়ে ফেলা যায় না। তারা এ দর্শনকে সাহিত্যাশ্রয়ী মতবাদ বলে অভিহিত করেছেন। তবে তিনি যে মানুষের সত্তা ও চেতনা সম্পর্কে যে আলোকপাত করেছে তার বিং অ্যান্ড নার্থিংলেস গ্রন্থে তার উপরোল্লিখিত মন্তব্যের সঙ্গে মেলে না।

সার্ত্রে আরও বলেছেন, জীবনের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে আমরা নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে যা করি তাই অস্তিত্ববাদ। তার এ উপলব্ধি এসেছে মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফরাসি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন মেটেরোলজিস্ট হিসেবে। তিনি নাৎসি বাহিনীর হাতে বন্দি হয়েছিলেন। বছর খানেক বন্দি থাকার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্ত সার্ত্রে যুদ্ধের যে ভয়াবহতা প্রত্যক্ষভাবে দেখেছেন, এতে তার জীবনে দুটি বিষয়ে উপলব্ধি দেখা দেয়। একটি হলো সত্তা, অন্যটি হলো চেতনা। একদিকে মানুষের ব্যক্তিগত চেতনা তৈরি করতে সহায়তা করে বস্তুগত সত্তা, অন্যদিকে সেই সত্তা হতে উদ্ভব হয় চেতনা বা জ্ঞান। সার্ত্রে এ দুটোর নাম ব্যবহার করেছেন দ্য বিং ইনসেলফ, যা হচ্ছে সত্তা নিজের এবং দ্য বিং ফর ইনসেলফ যা হচ্ছে সত্তার জন্য চেতনা।

সার্ত্রের সাহিত্য ও দর্শন নিয়ে ভিন্ন মত থাকলেও তার জীবনের দুটি উল্লেখযোগ্য দিক সবার দৃষ্টি কেড়েছে। প্রথমটি হলো, ফিদেল কাস্ত্রো ১৯৫৯ সালে এক বিপ্লবের মাধ্যমে কিউবার ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ক্ষমতা নেওয়ার পর তিনি দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। কিউবার প্রতিবেশী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাস্ত্রোর এই উত্থান এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছুতেই মেনে নিতে চায়নি। মার্কিনিরা দেশটিকে আক্রমণের জন্য পারমাণবিক সাবমেরিনসহ আধুনিক সমররাস্ত্র কিউবার উপকূলে মোতায়েন করে। অন্যদিকে সমাজতন্ত্র রক্ষা ও বিপ্লবী সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক অস্ত্রসহ তার নৌজাহাজগুলো কিউবার দিকে রওনা দেয়। এরপর তারা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাক করে রাখে। কিউবা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সীমান্ত মাত্র ৮৫ কিলোমিটার। যুদ্ধ শুরু হলে কিউবা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছারখার হয়ে যাবে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মানবজাতির চরম বিপর্যয়ের রেশ তখনও কাটেনি, আবার এ সময় আর একটি মহাযুদ্ধ। আর এক মহাবিপর্যয়, মানবজাতির ওপর নেমে আসবে, এটা মনীষা কিছুতে মানতে রাজি নন। আসন্ন যুদ্ধ ঠেকাতে মনীষা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এতে সফলতা আসে। আর এতে সব চেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন জ্যঁ-পল সার্ত্রে।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, তার সাহিত্য সৃষ্টির অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৬৪ সালে তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। সার্ত্রে সে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। যা কিনা বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করে তোলে। কেননা, এ পুরস্কার বড় সম্মানের এবং অর্থ প্রাপ্তির দিক থেকে লোভনীয়। তাই এ পুরস্কার ও সম্মান কোনো লেখক বা বিজ্ঞানীর পক্ষে প্রত্যাখ্যান সহজ ব্যাপার নয়। মনের দৃঢ় কঠিন প্রত্যয় না থাকলে এর পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব নয়। তার আগে ১৯২৫ সালে জর্জ বার্নার্ড শ নোবেল পুরস্কার গ্রহণের অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি ডিনামাইট তৈরির জন্য আলফ্রেড নোবেলকে ক্ষমা করতে পারি। কিন্তু নোবেল প্রর্বতনকারীকে ক্ষমা করতে পারি না। কারণ, মানুষরূপী একমাত্র শয়তানই এমন পুরস্কার প্রবর্তন করতে পারে। পরে স্ত্রী চার্লটের পীড়াপীড়িতে তিনি নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে রাজি হন। তবে তিনি আর্থিক পুরস্কার গ্রহণ করেননি। সার্ত্রের পুরস্কার গ্রহণ না করার যুক্তি ছিল। সে যুক্তিটি হলো, নোবেল পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে লেখকদের বিদ্রোহমূলক এবং তীক্ষষ্ট চিন্তার লেখালেখি থেকে বিরত রাখতে ব্যবস্থা নেয়। বড় লেখকদের মনকে ক্রয় করা হয়। তাই তিনি ভেবে-চিন্তে নিজেকে বিক্রি করতে চাননি।

শেষে, তার দর্শন নিয়ে আবার একটু উল্লেখ করছি- মানুষ তার নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে তুলবে। এখানে ঈশ্বর প্রদত্ত কোনো শক্তির প্রভাব থাকবে না। এ কথা কম লোকই মেনে নেবে। যারা তার এ দর্শন গ্রহণ করবে, তাদের সংখ্যা নগণ্য। মুসলিম দার্শনিক ইবনে রুশদ বলেছেন, ধর্মীয় সত্য, দর্শনের সত্যকে মেনে নেয় না এবং মেনে নিতে চায় না। তাছাড়া ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন তা কির্কেগার্ড বা ও ফেড্রিক নীটশেকে ছাড়িয়ে গেছেন। কির্কেগার্ড বলেছেন, ঈশ্বর আধ্যাত্মিক সত্তা। কোনো বস্তু নয়। নীটশে বলেছেন, গড ইজ ডেথ।

তা যাই হোক, করোনাকালে সারা বিশ্বের মানুষ অসহায়। সারা বিশ্বে কয়েক লাখ মানুষ ইতোমধ্যে মারা গেছেন। মৃত্যুরোধ করা যাচ্ছে না। এখানের মানুষ যেন এক একজন নিয়তির পুত্র। ইতালিতে গত বছর করোনা ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ মারা যেতে থাকে। সরকার সব ধরনের চেষ্টা করে মৃত্যু রোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তখন ইতালির প্রেসিডেন্ট সের্জো মাত্তারেল্লা সংবাদমাধ্যমের সামনে মানুষের মৃত্যু রোধের অপারগতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ওপরের দিকে দু'হাত তুলে ধরা ছাড়া তার আর করার কিছু নেই। বিশ্বব্যাপী মানুষ এখন কতটা অস্তিত্বহীন।

সার্ত্রের দর্শন বাংলাদেশের মানুষের কাছে সংশয়ের সৃষ্টি করে। কেননা, মানুষের ভাগ্য নির্মাতা মানুষ নিজেই। এতে নিয়তির কথাই আসে না। কিন্তু যে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখা দেড় কোটি। তারা যেন এক একটা নিয়তির পুত্র। নিয়তির ক্রীড়ানক হয়ে কর্মসংস্থানের জন্য দিজ্ঞ্বিদিক ছুটে বেড়ায়। এত কারও ঠাঁই- ঠিকানা হয়, কারও হয় না। তাদের ভাগ্য গড়ার স্বপ্ন-সাধ অধরা থেকেই যায়। তাদের কেউ কেউ ভাগ্য গড়তে শুধু দেশে নয়, বিদেশে যেতেও মরিয়া। সেটা আবার স্বাভাবিকভাবে নয়, রাবারের নৌকায় ভূমধ্যসাগরের উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিতে কিংবা কাঠের নৌকায় আন্দামান সাগর পাড়ি দিতে সলিল সমাধি হচ্ছে।

দার্শনিক শোপেনহাওয়ার তার 'দ্য ওয়ার্ল্ড এজ উইল' গ্রন্থে বলেছেন, সব মানুষ তার ইচ্ছার নিয়ামক এবং বুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হয়। সার্ত্রের দর্শন, মানুষ তার নিজ ভাগ্য গড়ার বিধাতা। এটি শোপেনহাওয়ারের সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে। হ্যাঁ, মানুষ তার নিজ প্রচেষ্টায় তার ভাগ্য গড়ে তুলতে সক্ষম। তবে এর হেরফের অনেক হয়। যেমন এখন হচ্ছে, অনেক চেষ্টা করার পরও মানুষ অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারছে না। তবে আশাবাদ এই যে, করোনার মহাবিপর্যয় থেকে একদিন বিশ্ব মুক্ত হবে। 'মেঘ ক্ষণিকে, সূর্য চিরকালের'- মহামতি বুদ্ধের অমর বাণী একদিন বাস্তবের রূপ নেবে। তাই একবিংশ শতাব্দীতেও জ্যঁ-পল সার্ত্রের গ্রহণযোগ্যতা ম্লান হবে না।