- চতুরঙ্গ
- এবারের অনন্যসাধারণ বাজেট
এবারের অনন্যসাধারণ বাজেট

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট একটি অনন্যসাধারণ বাজেট। সারাবিশ্ব যখন কভিড-১৯-এর সংক্রমণে টালমাটাল, বিশ্বের অর্থনীতিতে মঙ্গা বিরাজমান; ঠিক সে সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে অর্থমন্ত্রী এ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার একটি 'সুষম' ও 'সময়োপযোগী' বাজেট উপস্থাপন করেছেন। বাজেটে প্রতিটি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য ধন্যবাদ। কভিড-১৯-এর কারণে যেসব ক্ষেত্রে উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে, সেসব কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্যও বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি এবং দেশীয় পণ্য রপ্তানিতে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এ বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজস্ব সংগ্রহ। প্রায় তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে এ বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। কভিড-১৯-এর কারণে সারাদেশে লকডাউন, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, চাকরিতে ছাঁটাই ও হ্রাস, আন্তর্জাতিক বাজারেও ব্যবসা-বাণিজ্যের ঘাটতি হয়েছে। এসব কারণে রাজস্ব আদায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় কর ফাঁকি রোধসহ রাজস্ব আদায়ে সহজীকরণের জন্য আধুনিক বিভিন্ন অ্যাপস এবং কম্পিউটার জেনারেটেড ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই ভালো ফল আনতে পারবে, যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।
বাজেট বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হবে বলেছে বিরোধীরা। তাদের জানা উচিত, সব বাজেট বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জিং। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বের সব দেশেই, এমনকি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশগুলোয়ও বাজেট বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হয়ে থাকে। বিশেষ করে কভিডের কারণে তা আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। দেশের অর্থনৈতিক সার্বিক কর্মকাণ্ডে এক বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বিভিন্ন প্রকল্পের 'প্রকল্প পরিচালকগণ' (পিডি)। বিভিন্ন কারণে চলমান প্রকল্পগুলো সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না, এ অবস্থায় সব প্রকল্প পরিচালককে জবাবদিহির মধ্যে আনতে পারলে প্রকল্পগুলো সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশে এখন বিদেশি মুদ্রার মজুদ প্রায় ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশি টাকায় প্রায় ৩৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। গত বছরগুলোর বাজেট বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা এবং অর্থনৈতিক স্থিতি আমাদের আছে। তা থেকে সঠিক শিক্ষা নিলে, বিভিন্ন প্রতিকূলতা এড়িয়ে এ বাজেট বাস্তবায়ন করা অবশ্যই সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ।
এবারের বাজেটের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো কভিড-১৯-এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা। প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ কভিড নিয়ন্ত্রণে সফল হতে পেরেছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃতও হয়েছে। তবে কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে টিকাদান কর্মসূচির কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দও রাখা হয়েছে এ বাজেটে। আমি মনে করি, গণমানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচিকেও দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হচ্ছে, বিদেশ থেকে টিকা কিনে আনা এবং টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা। মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে বিদেশি টিকা যাতে বাংলাদেশেই উৎপাদন করা যায়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশকেই এই টিকা উদ্ভাবন ও উৎপাদন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশের বেশ কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি এবং বিদেশে অবস্থানরত এ টিকার উদ্ভাবনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত বাংলাদেশি চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ বছরে মনে পড়ে ৫০ বছর আগে যে দেশকে ইন্টারন্যাশনাল 'বাস্কেট কেস' বলে অভিহিত করা হয়েছিল, গত ১২ বছরে সেই বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নের 'রোল মডেল' হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা এসেছে। এমনকি নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পরামর্শ দিয়েছে যে, তিনি যেন যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্য কমানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
গত দেড় বছরে করোনাকালে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ কোটি ২০ লাখ লোককে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছে এবং এ সাহায্য ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। বিভিন্ন দেশেও সাহায্য পৌঁছানো হয়েছে এবং করোনার টিকাকে বিশ্বের সম্পদ হিসেবে দাবি করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এতে সরকারের মানবতাবাদী চরিত্র ফুটে উঠেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার এটাই যে প্রথম মানবতাবাদী কর্ম, তা নয়। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বদরবারে 'মানবতার মা' হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। রোহিঙ্গাদের সার্বিক সুবিধা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা চিন্তা করে কপবাজারের ঘিঞ্জিদশা থেকে ভাসানচরে সুন্দর ও স্বাস্থ্যগত পরিবেশে রাখার ব্যবস্থা করেছেন।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন এবং এ আলোচনায় কিছু অগ্রগতিও হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে অনেকের 'দ্বিচারিতা' মনোভাব আলোচনার অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। কিছু রাষ্ট্র একদিকে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সমর্থন করার কথা বলছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে মিয়ানমারের অবৈধ সামরিক সরকারকেও উৎসাহিত করছে। প্যালেস্টাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমস্যা সমাধানেও এ ধরনের মনোভাব দেখা গেছে, যা বিশ্বের শান্তি বিঘ্নিত করছে। দ্বিচারিতা মনোভাব থেকে জাতিসংঘসহ শক্তিশালী দেশগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় এ বিশ্ব তথা বিভিন্ন অঞ্চল 'আত্মঘাতী যুদ্ধে' জড়িয়ে পড়তে পারে।
আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আমার নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ-১-এর মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলার প্রিয় জনগণকে, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের সব নেতৃবৃন্দকে আমার নির্বাচনী এলাকার সকল প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়নে তাদের দৃঢ়তা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার জন্য।
মন্তব্য করুন