- চতুরঙ্গ
- শিক্ষাগুরুর প্রাপ্তি
শিক্ষাগুরুর প্রাপ্তি

অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ। ফাইল ছবি/সমকাল
এটি কোনো চেয়ারম্যানের সালিশে দোষী সাব্যস্ত সিঁধেল চোরের বিচার নয়, যাকে সালিশের রায়ে জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করা হচ্ছে। এটি কোনো নেতার শুভাগমন উপলক্ষে পুলিশ পাহারায় নান্নু ভাইয়ের আগমন- শুভেচ্ছা, স্বাগতম স্লোগানে গগনবিদারী আওয়াজ তুলে মিছিল নয়। এটি কোনো মাননীয় মন্ত্রীর শুভাগমনে ডিসি, এসপি সমভিব্যহারে শতাধিক পুলিশ পাহারায় ফুলের মালা দিয়ে জনতার মন্ত্রীকে বরণ করা নয়; জনগণের ধিক্কার-তিরস্কারের মাধ্যমে 'দাস আই এনটার, দাস আই গো' মনস্তাপে পরাজিত নেতার বিদায় শোভাযাত্রার সঙ্গেও এটি তুলনীয় নয়। এ যে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যপট। ঘটনার মঞ্চায়ন নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজ ক্যাম্পাস। দৃশ্যটা এ রকম- পুলিশ বাহিনীর সতর্ক পাহারায় নড়াইল ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস ও এক হিন্দু ছাত্রকে জুতার মালা গলায় পরিয়ে অসংখ্য ছাত্র-জনতা ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা করছে। ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের সমর্থনে কলেজের ওই ছাত্রের ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার প্রতিবাদে অভিযুক্ত ছাত্রের পাশাপাশি অধ্যক্ষ মহোদয়কেও এর দায়ভার বহন করতে হয় এবং ছাত্র-জনতা জুতার মালা দিয়ে এক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির স্থাপন করে। অথচ সংবাদে প্রকাশ, বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মাকে প্রণাম জানিয়ে ওই কলেজের শিক্ষার্থীর ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা নিরসনকল্পে অধ্যক্ষ কলেজের শিক্ষক, ওই শিক্ষার্থীর বাবা এবং পরিচালনা পর্ষদের কতিপয় সদস্যকে ডেকে বিষয়টি আলোচনা করে পোস্টদাতা ছাত্রকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরক্ষণে ওই ছাত্রকে পুলিশে নিয়ে যেতে বাধা দিয়ে অধ্যক্ষসহ উভয়ের গলায় জুতার মালা পরিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃশ্যটি ভাইরাল করে প্রচার করা হয়। এতে ছাত্র-জনতার মুখে যুদ্ধজয়ের উৎফুল্লতা এবং আমাদের বাহিনীর সদস্যদের শোভাযাত্রার শৃঙ্খলা বজায় রাখার তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।
এ ঘটনার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ বরণীয় অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করেছিল বলে খবরে প্রকাশ। পরবর্তী সময়ে কলেজ খুলে দেওয়া হলে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাঁকে আবার স্বপদে বহাল রাখা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নিজ ছাত্রদের কাছ থেকে এত বড় প্রতিদান পাওয়ার পর অধ্যক্ষ স্বপন কুমার কোন মুখে ছাত্রদের মুখোমুখি হয়ে নীতিশিক্ষা ও পাঠদান করবেন! যদি সম্মানটাই যায়, তাহলে শিক্ষকের আর বাকি থাকে কী! আমার কর্মজীবন শিক্ষকতা দিয়ে শুরু। ১৯৮৩ সালে সিলেট মদনমোহন কলেজে ইংরেজির অধ্যাপনা করার সময় আমি কী একটা কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম। কাজ সেরে কলাভবনের গেট পার হওয়ার সময় হকচকিয়ে উঠলাম। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দেখি, চার-পাঁচজন ছাত্রছাত্রী আমার পা ছুঁয়ে সালাম করে বলছে, 'স্যার, দোয়া করবেন। আমরা ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছি।' মনে হলো, আমার মতো এক অর্বাচীন শিক্ষককে দেশের এই শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের গেটে পা ধরে সালাম করছে। লাখো কোটি টাকার বিনিময়েও এ সম্মান পাওয়ার নয়। এটাই তো শিক্ষকতার বিনিময় মূল্য। আমার চোখ ছলছল করে উঠল। কিন্তু কালপরিক্রমায় নতুন প্রজন্মের ছাত্ররা আজ শিক্ষককে উল্টো শিক্ষা দিতে গিয়ে জুতার মালা পরিয়ে শোভাযাত্রা করছে। রবীন্দ্রনাথ থাকলে আজ নতুন গান রচনা করতেন- 'এ জুতাহার আমার নাহি সাজে,/ এরে পরতে গেলে লাগে, এরে ছিঁড়তে গেলে বাজে।' রবীন্দ্রনাথ মরে বেঁচে গিয়েছেন।
একই ধারাবাহিকতায় সাভারের আশুলিয়া হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্কুলপ্রাঙ্গণে ছাত্রীদের ক্রিকেট খেলা চলার সময় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জনাকীর্ণ ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশে স্বপন কুমারকে তাঁরই ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু পিটিয়ে খুন করে বিজয়ীর বেশে প্রতিষ্ঠানের বাইরে গিয়ে আড্ডা-ইয়ার্কিতে মত্ত হলো। পলাশীর প্রান্তরে পরাজিত নবাবের হাজার হাজার সৈন্যের মতো কয়েকশ ছাত্র-শিক্ষক নির্বাক-নিস্তব্ধ থেকে একজন শিক্ষকের এই মর্মান্তিক পরিণতির দৃশ্য অবলোকন করে গেল। কেউ কথা রাখল না। অবশ্য স্বপন কুমার মরে বেঁচে গিয়েছেন। তাঁকে আর অবনত মস্তকে ছাত্রদের সামনে গিয়ে নীতিকথা শিক্ষা দিতে হবে না।
গতানুগতিকভাবে এসব ঘটনার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। উচ্চতর মহল থেকে বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ। অধ্যক্ষ স্বপন কুমারের হেনস্তার পর নড়াইলের ডিসি, এসপি- জেলার দুই কর্ণধারই তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ডিসির কমিটির রিপোর্ট এর মধ্যে জমা পড়েছে। এসপির কমিটির রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি বলে প্রকাশ। মূল আসামি জিতুসহ অন্য কয়েক আসামিও ধরা পড়েছে। আসামিদের রিমান্ডও মঞ্জুর করা হয়েছে। অধ্যক্ষের ওপর বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রশাসনের বর্তমান তৎপরতা লক্ষণীয়। এরই মধ্যে সদর থানার ওসিকে স্ট্যান্ড রিলিজ করার আদেশ হয়েছে এবং আউট পোস্টের ইনচার্জকে ক্লোজ করা হয়েছে।
এখন সচেতন মহলে যেসব প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে, তা হচ্ছে- শিক্ষককে শাস্তির মহড়ায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ছাত্র-জনতার শিক্ষককে শাস্তি দেওয়ার অভূতপূর্ব মহড়ার নিরাপত্তার জন্য এক বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ ক্ষেত্রে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ডিসি, এসপি কর্তৃক তদন্ত কমিটি করার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? এখানে আসামি কে বা কারা? সাক্ষীই কে বা কারা? প্রকাশ্যে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সামনে যে ঘৃণ্য অপরাধ হলো, সেখানে তো তদন্ত কমিটি করা একটা আইওয়াশ মাত্র। এভাবে কালক্ষেপণ না করে পুলিশ সরাসরি বাদী হয়ে ঘটনাস্থলেই আসামিদের গ্রেপ্তার করে উপস্থিত দর্শককে সাক্ষী নিয়ে এফআইআর দিলে আইনি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারত। পরে এফআইআরের ওপর ভিত্তি করে ঘটনাস্থল থেকে আলামত ও শিক্ষক-ছাত্রসহ অন্যদের সাক্ষ্য-জবানবন্দি গ্রহণ করে আদালতে স্বল্পতম সময়ে চার্জশিট দাখিল করলে এ ক্ষেত্রে একটা নজির সৃষ্টি হতে পারত এবং বিচার প্রক্রিয়াও দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন হয়ে একটা নজির স্থাপন হতো। গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থাকায় শিক্ষক লাঞ্ছনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে অপরাধীদের মনে হতো, অপরাধ করলে পার পাওয়া যায় না এবং মূল্যবোধের ধস নামার এ সময়ে দেশবাসীও আশ্বস্ত হতে পারত।
একের পর এক শিক্ষক লাঞ্ছনা, খুনসহ রোমহর্ষক ঘটনার পর এবারও সারাদেশ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষক হেনস্তা, খুন, শিক্ষক গ্রেপ্তার ইত্যাদি ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়ে জাতির লজ্জা, অপমান ইত্যাদি শব্দ উচ্চারিত হচ্ছে। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় দিকে দিকে জনতার ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপরাধীকে দলীয় দৃষ্টিকোণ হতে না দেখে অপরাধী হিসেবেই বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হবে বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অধ্যক্ষ অপদস্থ হওয়ার ঘটনায় আসামি রনি, শাওন, নুরুন্নবীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আদালত এদের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন। এ ঘটনার জন্য ঘোষিত বিছালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ওই কলেজের শিক্ষক আকতার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অপসারিত অপদস্থ অধ্যক্ষ স্বপন কুমারকে পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঘটনাপরম্পরা সবই ইতিবাচক এবং আশাবাদী হওয়ার আবহ দৃশ্যমান। সদর থানার ওসিকে প্রত্যাহার এবং আউট পোস্ট ইনচার্জকে ক্লোজ করা হয়েছে।
জনমনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, ওসিকে প্রত্যাহার আর ইনচার্জকে ক্লোজ করেই কি দায়িত্বে অবহেলার দায় মোচন হয়ে গেল? হয়তো দায়িত্বে অবহেলার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অতঃপর তাঁদের অসদাচরণের জন্য তিরস্কার বা পদাবনতি করে অন্যত্র বদলি করা হবে। কিন্তু অবহেলার জন্য মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরিয়ে গোটা জাতিকে যে অপমান করা হলো, তার প্রতিকার কি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ ধরনের শাস্তি দিয়ে প্রত্যাহার আর বদলির দাওয়াই দিয়ে প্রতিকার হবে? জেলা প্রশাসক তো শুধু প্রশাসকই নন, তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটও বটে। জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব বিধি অনুযায়ী তাঁর ওপর অর্পিত। গোড়াতেই এ ঘটনার মূলোৎপাটন কঠিন ছিল না। হাজার হাজার জনতার বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ বাহিনী বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারত। কিন্তু পলাশীর প্রান্তরে হাজার হাজার নবাব সৈন্যের মতো এখানেও নীরব দর্শকের মতো নিরাপত্তা বাহিনী দাঁড়িয়ে থেকে নির্বিঘ্নে শোভাযাত্রা নিশ্চিত করল। অধিকন্তু, এত বিশাল বাহিনী উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ছাত্র-জনতা অধ্যক্ষের সোপর্দকৃত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরিয়ে শোভাযাত্রা করল।
এখানে স্বভাবতই মনে যে প্রশ্ন জাগে, অধ্যক্ষ কী এমন গর্হিত অপরাধ করলেন, যার জন্য তাঁকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে এই অভূতপূর্ব দণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। তিনি তো সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে আইনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। তবে আইনের শাসনের দুর্বলতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই সচেতন মানুষ মনে করে যে, এটি সিরিজ শিক্ষক অবমাননার অনুবৃত্তি। আজ এমপির সামনে প্রধান শিক্ষককে যদি কান ধরে উঠবস করানো না হতো, ছাত্র-শিক্ষকদের ফাঁসানো অভিযোগে যদি বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় কৃষ্ণ মণ্ডলকে জেলে পুরা না হতো, আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে যদি আশরাফুল ইসলাম জিতু কলেজ ক্যাম্পাসে সর্বসমক্ষে পিটিয়ে হত্যা না করত- তাহলে হয়তো দেশবাসীকে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর অপমানজনক দৃশ্য উপভোগ করতে হতো না অথবা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও মুক্তচিন্তার মানুষ হত্যা, হেনস্তায় যদি বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির সৃষ্টি হতো, তাহলে দেশবিরোধী চক্র সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হতো না।
সমাজের সর্বোচ্চ আসনে আসীন জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকের গলায়ই পুলিশ পাহারায় যখন জুতার মালা পরিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়, তখন জাতির ভবিষ্যৎ যে কী হবে, তা ভেবে শিহরিত হতে হয়। ঘটনাপরম্পরায় উত্তরণে কোনো আশার আলো দেখতে না পেয়ে মনে হয়ে গেল কবি মাজহার মান্নানের 'শিক্ষাগুরুর প্রাপ্তি' কবিতার কয়েকটি ছত্র। প্রথমত, আমার মতো অর্বাচীন এক শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের গেটে ছাত্রদের আচরণ দেখে মনের ভাব এভাবে প্রকাশ করেন, 'শিষ্যের এমন শ্রদ্ধা পাইয়া/ শিক্ষাগুরু ভাবে/ সমাজে আর ক'জন আছে/ এমন সম্মান পাবে।' আবার এ কালের শিক্ষককে যখন জুতার মালায় ভূষিত করা হয়, তখন কবি বলেন, 'সেই গুরুকে দেখি যখন/ গলায় জুতার মালা/ লজ্জায় মরি ডুকরে কেঁদে/ মিটাই মনের জ্বালা।'
মন্তব্য করুন