প্রতিদিন সড়কে গড়ে ১৭ জন নিহত হচ্ছেন। এতে প্রমাণিত বর্তমানে দেশের মানুষের নিরাপত্তার অন্যতম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিদিন সড়কে হারিয়ে যাচ্ছেন কত মানুষের আপনজন। অনেকে আবার পঙ্গু কিংবা বিকলাঙ্গ হয়ে পরিবার ও সমাজের বোঝা হিসেবে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তাই সড়ক দুর্ঘটনা স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি পেয়েছে, কিন্তু এখনও নিরাপদ সড়ক পায়নি।

এসব দুর্ঘটনার প্রধাণ কারণ বেপরোয়া গতি ও বিপজ্জনক ওভারটেকিং। বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। সবকিছুতে চলছে প্রতিযোগিতা। যানবাহনের চালকদের মধ্যে কে কত দ্রুত যেতে পারেন, তা নিয়ে সড়কে এক ধরনের অঘোষিত প্রতিযোগিতা শুরু হয়। অতিরিক্ত গতির ফলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যায়, আবার দুটি যানবাহন পাশাপাশি চলাচল করলে ওভারটেকিংয়ের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়।

তা ছাড়া চালকের অদক্ষতা, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন বা হেডফোন ব্যবহার কিংবা মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ মনে করা হয়। এ ছাড়া দেশে সড়ক অবকাঠামোর অভূতপূর্ব উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে ছোট যানবাহন-ইজিবাইক, ব্যটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ইত্যাদি। টেকসই আর্থসামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত উন্নত যোগাযোগ এবং যুগোপযোগী পরিবহন সেবা। শুধু প্রশাসনিক উদ্যোগে সড়ক দুর্ঘটনা পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি যাত্রী ও পথচারীদের সড়কপথে আরও সচেতন হতে হবে। সর্বোপরি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সড়কে শৃঙ্খলা আনা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

এতক্ষণ বললাম দুর্ঘটনার কথা এবার আসুন কী অবস্থা দেশের ময়লা-আবর্জনার!

ট্রেনে করে ভ্রমণ করছি, ট্রেন থেকে বাইরের সৌন্দর্য দেখছি। কী সুন্দর দৃশ্য সব! সবুজ মাঠ, ফসল, কোথাও জেলেরা মাছ ধরছেন- এসব দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। ঝক ঝক করে চলা ট্রেনের শব্দও ভালো লাগছে। হঠাৎ একটু জুস খেতে মন চাইল। জুস খেয়ে বোতলটি বাইরে ফেলে দিলাম। এটা দেখে একজন বললেন, এই যে তুমি রাস্তার পাশে বোতল ফেললে, এটা কি ঠিক? আমি বললাম না। তার পর ভদ্রলোক বললেন, এ রকম আর কখনও করবে না। এটা আমাদের জন্মভূমি। একে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের দায়িত্ব। ময়লার কারণে অনেকের ক্ষতি হতে পারে ইত্যাদি।

বিষয়টি মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। একটু পর ঘুমিয়ে পড়লাম স্বপ্ন দেখলাম, একটি ময়লার স্তূপে বসে আছি। চারপাশে শুধুই ময়লা। দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও বেরোতে পারছি না। আমাকে বলা হচ্ছে, এসব ময়লা তুমি যেখানে-সেখানে ফেলেছ। তুমি যথাস্থানে ময়লা ফেলোনি। এখন বোঝ কেমন লাগে। আমি পালিয়ে যেতে চেষ্টা করছি, কিন্তু পালিয়ে যেতে পারছি না। চিৎকার করছি, কিন্তু কোথাও কেউ নেই। যত দূর চোখ যায়, দেখছি শুধু ময়লার স্তূপ। আমি ভীষণ অনুতপ্ত হচ্ছি। হুট করেই ঘুম থেকে কেঁদে উঠি। ভীষণ ঘেমে গেছি। সেদিন থেকে আমি আমার ভুল বুঝতে পারি এবং প্রতিজ্ঞা করি, আর কখনও যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলব না।

আমরা আমাদের অনেক ভুলের সংশোধনের সুযোগ পাই, কিন্তু সংশোধিত হই না। যার কারণে মগজে যেসব আবর্জনা জমা হয়েছে তা দূর করতে পারি না। এই না পারার কারণই আমাদের জীবনের সব অশান্তির মূল। পৃথিবীটা তো দেখলাম, পরকালের কথা শুনেছি, এখনও দেখিনি, সেটা নিয়ে আবার রয়েছে নানাজনের নানা মত, ভাবছি! বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। তাই তর্কে যেতে চাই না বরং আসুন ভালো কিছু করি। স্মৃতির জানালা খুলে হৃদয় দিয়ে যখন অতীতের ভালো জিনিসগুলো চোখ তুলে দেখি যতটুকু আলো আসে, সে আলোয় মন ভরে যায়, আর তখন যে কল্পনা হৃদয়ে বাসা বাঁধে এবং হৃদয়ে যে স্বপ্ন তৈরি করে, সেই ছবি রঙে রঙে সুরে সুরে যদি কখনও গান হয়ে যায়, তাহলে জন্ম আমার ধন্য হবে মাগো। আর তখন যদি তোমার বুকে ঘুমিয়ে পড়ি, জাগিয়ে দিও নাকো!