- চতুরঙ্গ
- সাকার মাছের আগ্রাসন ঠেকাতে 'নিষিদ্ধ' ঘোষণা যথেষ্ট নয়
মতামত
সাকার মাছের আগ্রাসন ঠেকাতে 'নিষিদ্ধ' ঘোষণা যথেষ্ট নয়

সাকার মাউথ ক্যাটফিশ- সংগৃহীত ছবি
গত এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের একটি শিক্ষা সফরে ময়মনসিংহে যাওয়ার সুযোগ হয়। সেখানে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) নানা উদ্ভাবন ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ এক পর্যায়ে বেশ আগ্রহ নিয়ে নতুন উদ্ভাবিত উন্নতজাতের সুবর্ণ রুইয়ের পুকুরে নিয়ে গেলেন। পুকুরে বড় জাল ফেলা হলো। জাল যতই কাছে আসছে ততই সবার মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়ছে। জালে এলো সুবর্ণ রুই। কিন্তু আনন্দের পাশাপাশি উদ্বেগজনক ঘটনাও ঘটে গেল। জালে এসেছে ৪-৫টি রাক্ষুসে সাকার মাছ। রাতে এ বিষয়ে মহাপরিচালকের কাছে জানতে চাওয়া হলো, গবেষণা কেন্দ্রেই সাকার মাছের আগ্রাসন। এটাতো চিন্তার বিষয়। তিনি বললেন, 'গবেষণা ইনস্টিটিউট তো দেশের বাইরে নয়। সারাদেশেই মাছটি ছড়িয়ে পড়েছে। এটি মৎস্য সম্পদের জন্য বড় হুমকি।' এমন দুশ্চিন্তা নিয়ে তিনি যে বসে নেই তার প্রমাণও পাওয়া গেল। বুড়িগঙ্গাসহ সারাদেশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা প্রতিবেদন মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে পাঠানো হয়।
সাকার মাছে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ধাতু পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী মাছটি যেখানে পাবে সেখানেই ধ্বংসের নির্দেশনা দিয়ে নির্দেশনাও জারি হয়। কিন্তু এমন নির্দেশনা সাধারণ মানুষের কাছে কতটা পৌঁছেছে আমরা জানি না। মাঠ পর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তাদের এ নিয়ে উদ্যোগ দেখা যায়নি বললেই চলে। এ নিয়ে একাধিকবার সমকালে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গেও ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার সাকারের ভয়াবহতা নিয়ে কথা হয়েছে। তাঁর মাঝেও মাছটি নিয়ে উদ্বেগের চাপ লক্ষ্য করেছি। এর মধ্যেই হুহু করে বাড়তে থাকে রাক্ষুসে সাকারের আগ্রাসন। রাজধানীর বুড়িগঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে সাকার মাছ। জালে আসা সাকার মাছ আগের মতো আর ফেলে না দিয়ে বিক্রি করছেন জেলেরা। ক্ষতি না জেনেই এ মাছ রান্না করে খাচ্ছেনও অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে তৈরি হয় নতুন সংকট।
সরকার গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাক্ষুসে মাছটির আমদানি, প্রজনন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেই প্রজ্ঞাপনের খবরও সাধারণ মানুষ জানে না বলেই মনে হয়। সম্প্রতি এ নিয়ে কয়েকজন মৎস্য গবেষকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তাঁরা বলছেন, সাকার দেশীয় প্রজাতির মাছের ডিম ও রেণু খেয়ে মাছের বংশবিস্তারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ মাছ যেকোনো পরিবেশে বাঁচতে পারে এবং দ্রুত বংশ বৃদ্ধির কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। মাছটি খাওয়া যায় না। সর্বোপরি সাকার মাছ জলজ জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে।
এ মাছ বাড়ছে বুড়িগঙ্গায় যারা মাছ ধরেন তাদের জালে প্রায়ই ধরা পড়ছে। এমনকি মানুষ খাচ্ছেও! বাজারে বিক্রির পাশাপাশি ফেসবুক ও ইউটিউবে সাকার মাছ রান্নার রেসিপিও দেখা যাচ্ছে। অনুসন্ধান করে এ রকম বেশ কয়েকটি ভিডিওরও খোঁজ মিলেছে।
আপাতত মাছটি নিষিদ্ধ ঘোষণাও ইতিবাচক পদক্ষেপ। শুধু এ ঘোষণাতেই আটকে না থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের মৎস্য সম্পদের ভান্ডার ধরে রাখতে সাকারের আগ্রাসন বন্ধ করতেই হবে।
মন্তব্য করুন