- চতুরঙ্গ
- দরপতন চলছেই শেয়ারবাজারে
দরপতন চলছেই শেয়ারবাজারে

প্রতীকী ছবি
গেল সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর চলতি সপ্তাহের শুরু হয়েছে ফের দরপতনে। সিংহভাগ শেয়ারের দরপতনের পাশাপাশি ফ্লোর প্রাইসে নামা শেয়ার সংখ্যা আবারও ৩০০ ছুঁই ছুঁই অবস্থানে। যদিও আগের দু'দিনের দর বৃদ্ধিতে ভর করে কিছু শেয়ার ফ্লোর প্রাইস ছেড়ে সামান্য ওপরে উঠেছিল। গতকাল এ সংখ্যা ছিল ২৯৯টি।
রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯০ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩০৮টির কেনাবেচা হয়েছে। অর্থাৎ ক্রেতার অভাবে ৮২টি শেয়ারের কোনো কেনাবেচাই হয়নি। এর সবই ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। কেনাবেচা হওয়া শেয়ারগুলোর মধ্যে মাত্র ২০টির দর বেড়েছে, কমেছে ৬৮টির। অবশিষ্ট ২২০ শেয়ারের দর অপরিবর্তিত ছিল। দর অপরিবর্তিত থাকা এ শেয়ারগুলোরও ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে।
ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় বেশি দরে কেনাবেচা হওয়া শেয়ারগুলোর দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫০ পয়েন্ট হারিয়ে ৬২১৫ পয়েন্টে নেমেছে। গতকাল ৬২৬৬ পয়েটের নিচে থেকে সূচকটি যাত্রা শুরু করে। প্রথম মিনিটে প্রায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬২৭১ পয়েন্ট ছাড়ায়। কিন্তু এরপর থেকে টানা দরপতনে লেনদেন শেষ হওয়া ১৩ মিনিট আগে প্রায় ৬০ পয়েন্ট হারিয়ে ৬২১২ পয়েন্টে নামে।
সূচকের পতন বিশ্নেষণে আরও দেখা গেছে, শুধু বিকন ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা এবং বেক্সিমকো ফার্মার দরপতনেই ডিএসইএক্স সূচক প্রায় ২০ পয়েন্ট হারায়। এ ছাড়া লাফার্জ-হোলসিম, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, এসিআই লিমিটেড, সোনালী পেপার, বসুন্ধরা পেপার মিলস, স্কয়ার ফার্মার মতো শেয়ারের দরপতন বড় ভূমিকা রেখেছে। বিপরীতে জীবন বীমা খাতের কয়েকটি শেয়ারের দর বৃদ্ধি সূচকে কিছু পয়েন্ট যোগ করলেও তা পতন ঠেকাতে যথেষ্ট ছিল না।
এমন দরপতনে মোট শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে। বোববার দেশের প্রধান শেয়ারবাজারটিতে প্রায় ৪২৩ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এ লেনদেন গত ২৪ অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন। মোট ৪১ কোম্পানির প্রায় ২৩ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয় ব্লক মার্কেটে। এর মধ্যে ১৬ কোম্পানির শেয়ার বিদ্যমান ফ্লোর প্রাইসের নিচে কেনাবেচা হয়। টাকার অঙ্কে ফ্লোর প্রাইসের নিচে কেনাবেচা হওয়া শেয়ারের মূল্য প্রায় ৯ কোটি টাকা। ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় কমে কেনাবেচা হওয়া শেয়ারগুলোর অন্যতম হলো- ব্রিটিশ-আমেরিকান ট্যোবাকো, বেক্সিমকো লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস, আইপিডিসি, মালেক স্পিনিং, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল ও রেনাটা।
দরপতনের কারণ ব্যাখ্যায় ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তারা অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি ফ্লোর প্রাইস দায়ী বলে মনে করেন। তাঁরা বলেন, সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসায় বাকি শেয়ারগুলোর পরিণতি একই হতে পারে- এমন শঙ্কা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে। ফলে নতুন করে বিনিয়োগ করার মতো বিনিয়োগকারী ক্রমে কমছে। প্রতিদিনই দুই শতাধিক শেয়ার ক্রেতাশূন্য অবস্থায় থাকছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অনারারি অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, চলমান সংকটের বড় কারণ হলো ফ্লোর প্রাইস। তিন মাস আগেই বলেছিলাম, এক সময় অধিকাংশ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের নেমে আসবে, শত শত শেয়ারের ক্রেতা থাকবে না। এখন তা-ই হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন অর্থনীতি খারাপ যাচ্ছে। অনেক কোম্পানির ইপিএস কম এসেছে। এসব কারণে আরও খারাপের শঙ্কা থেকে কম দাম পেলেও শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে অন্য কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করার চেষ্টা করতে চান অনেক বিনিয়োগকারী। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস থাকায় কেউ শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। কারণ বর্তমান দরে শেয়ারের ক্রেতা নেই।
শেয়ারবাজারের এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে বড় দরপতন হতে পারে- এমন শঙ্কা থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্ট কিছু মানুষ এটি তুলতে চান না। এটি ঠিক, ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে দরপতন হবে। তবে কতটা? যখনই শেয়ারের দর কমতে থাকবে, তখনই কম দরে নতুন ক্রেতা আসবেন। তাতে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। এখন যে অবস্থায় বাজারকে ফেলে রাখা হয়েছে, তাতে এ বাজার আরও বহুকাল পঙ্গু হয়ে থাকবে। মার্জিন ঋণে যাঁরা শেয়ার কিনেছিলেন, তাঁদের পুঁজি হাওয়া হয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন