গত ৩০ বছরের মধ্যে তুলনামূলকভাবে এ বছর সুইডেনের বায়ুদূষণ সবচেয়ে কম। ঠিক একই সময় ঢাকা শহর বায়ুদূষণে বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থান দখল করে আছে। রাজধানী ঢাকা সবসময় জনবহুল থাকে। মানুষের যত বেশি বসবাস কোনো নির্দিষ্ট স্থানে, সেখানে দূষণের পরিমাণ ততই বেশি। তারপর জড়িত হয় ময়লা-আবর্জনা, কলকারখানার নির্গত ধোঁয়া, যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া ইত্যাদি। পরিবেশ সুন্দর রাখতে সচেতন না হলে যা হয়। ইচ্ছা বা অনিচ্ছার কারণে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে দ্বিতীয়বার ভাবি কিনা, সন্দেহ।

ইদানীং বাংলাদেশে বসতরত বিদেশি রাষ্ট্রদূতগুলো একটু বেশি বাড়াবাড়ি শুরু করছেন বাংলাদেশকে নিয়ে। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নির্বাচন, ভোট গ্রহণ ও ভোট জালিয়াতি প্রসঙ্গে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। জাপানি রাষ্ট্রদূত কেন হঠাৎ এ ধরনের মন্তব্য করেছেন তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বলেছে, কূটনীতিকরা শিষ্টাচারবহির্ভূত কোনো কাজ করলে সে বিষয়ে কঠোর হবে সরকার।

বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিশ্বের কোথায় স্কলারশিপে পড়ালেখা করা যায় সেই সুযোগের ব্যবহার করে বিদেশে পড়াশোনা করছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা নিজ অর্থে দেশ ছেড়ে বিদেশে পড়াশোনা করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে অর্ধলাখ শিক্ষার্থী বিদেশ যাচ্ছেন। ডলার সংকটের কারণে দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংক এবং শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষাপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা মূলত দেশের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ভর্তি, টিউশন, আবাসন ফিসহ বিভিন্ন খরচ বিদেশে পাঠান।

প্রাথমিকভাবে বিদেশগামী একজন ছাত্র ২০-৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত বিদেশ পাঠান। পাঁচজন ছাত্রের টিউশন ফি পাঠানো হলে সেটির পরিমাণ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোনো ব্যাংকের জন্য ১ লাখ ডলার অনেক মূল্যবান।

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কতসংখ্যক শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছেন তার একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা-ইউনেস্কো। ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪৯ হাজার ১৫১ শিক্ষার্থী বিদেশে গেছেন উচ্চশিক্ষা নিতে। বিদেশগামী শিক্ষার্থীর পরিমাণ চলতি বছর আরও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো ডলারের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তা ১৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়, তবে প্রশ্ন থেকে যায় তার পরিমাণ কত? এদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় উভয়ই কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান দুই উৎসেরই পতন হওয়ায় স্টম্ফীত হয়েছে বিওপির ঘাটতি। এসব পূরণ করতে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিশ্বের ধনী দেশগুলো রিজার্ভ যাতে নষ্ট না হয় সে চেষ্টা করে চলছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার সেটা কত দ্রুত শেষ করতে হবে তা নিয়ে প্লান করছে। সবকিছু জানার পর মনে হচ্ছে প্রবাসী, গার্মেন্ট শ্রমিক, দিনমজুর, মেহনতি মানুষরাই দেশকে টিকিয়ে রেখেছে আর ধনীরা দেশের অর্থ, সম্পদ ধনীরামপুরে পাচার করে দিচ্ছেন।

আমার পুরো লেখাটি পড়লে প্রশ্ন আসবে এতগুলো ঘটনা কেন জড়িত এখানে? একটির সঙ্গে আরেকটির কী সম্পর্ক? সম্পর্ক আছে, কারণ মানুষের মনুষ্যত্ব এবং বিবেকের অবনতির পেছনে একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে। বায়ুদূষণে মনও দূষণ হয়, মনের কলুষতা, বিবেকের অবক্ষয়, শিক্ষার অধঃপতন, গণতন্ত্রের বিসর্জন সবকিছু বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তবুও আমি শুধু একটি বিষয়ের ওপর রিফ্লেক্ট করব- সেটা হলো শিক্ষা। এত টাকা খরচ করে বিদেশে পড়ে কি আমরা সঠিক শিক্ষা অর্জন করছি? নাকি আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক তাই যার যা খুশি তাই করছি! এর নাম তো স্বাধীনতা নয়? স্বাধীনতা মানে তো দায়িত্ব। যাই হোক আমরাও বিদেশে পড়ছি তবে দেশের বারোটা বাজিয়ে না। তাছাড়া অতীতে মানুষ দেশের লেখাপড়া শেষ করে উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে যেতেন স্কলারশিপে, প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে দেশের সেবা করতেন। পরে দেশ স্বাধীন হলে কিছু সুযোগ হলো বিদেশে লেখাপড়া করার, কিন্তু সেটা তো দেশের অর্থ ধ্বংস করে নয়, বরং বিদেশি স্কলারশিপের সদ্ব্যবহার করে। কিন্তু এখন কী হচ্ছে?

যাই হোক আমার গল্পটা কিছুটা ভিন্ন। শেয়ার করি আমার শেয়ার ভ্যালুর কনসেপ্ট থেকে।

বি.দ্র. আমার নাম পাসপোর্টে তখন মৃধা মো. মাহবুবুর রহমান। ম্যানেজার বলেছিলেন এতবড় নাম চলবে না, আমরা তোমাকে রহমান বলে ডাকব, সেই থেকে সুইডেনে নাম আমার রহমান।

সারাদিন-সারারাত জার্নি পরে কাজ করেছি তবুও ক্লান্তি লাগেনি সেদিন। সকালে ট্রেনে করে লিনসোপিংয়ে রওনা করি। সে এক নতুন জগৎ, নতুন জীবন, কোনো একসময় লিখেছি এর ওপর। যাই হোক বাস ড্রাইভারকে ধন্যবাদ দিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলাম সুইডিশে, সে আপল্গুত হয়েছিল এই কারণে যে, আমি তাকে সুইডিশে কিছু ভালো লাগার কথা জানিয়ে ছিলাম।