রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সমাবেশ-মিছিল ঘিরে সরকার ও বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষের ফল হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। আশার কথা হলো, নতুন বছরে এসে রাজনৈতিক সংঘাতে এখন পর্যন্ত কারও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে উভয় দলের নীতিনির্ধারকদের বক্তব্যে সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের সংঘাত পরিহার করার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন উভয় দলের কর্মসূচি পালন বন্ধ না হলে দুশ্চিন্তা থেকেই যাবে নগরবাসীর। 

গত শনিবার বিএনপি ও তাদের মিত্ররা পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে রাজধানীর বাড্ডা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত। একই দিন আওয়ামী লীগ সমাবেশ করেছে উত্তরায়। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির পদযাত্রাকে মরণযাত্রা বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেছেন, 'পদত্যাগ করুন, পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না।' এর জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ পালানোর দল নয়, পালাবে না।' কথার ফুলঝুরি আর উস্কানিতে সংঘাত হয়, রাজপথে লাশ পড়ে; গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। 

বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে মরণযাত্রা বলে আখ্যায়িত করা যেমন শোভন কিছু নয় তেমনি আওয়ামী লীগকে পালানোর হুঁশিয়ারি দেওয়াটাও সংঘাতময় রাজনীতির ইঙ্গিত। এ ধরনের পরিস্থিতি আমরা প্রত্যাশা করি না। আওয়ামী লীগ তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠন করেছে। সুতরাং, তারা মেয়াদ পূর্ণ করবে, এটাই সাংবিধানিক নিয়ম। বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে ফিরিয়ে আনা হবে নাকি নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক হতে পারে। এজন্য বিএনপিকে যেমন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনমতকে নিজপক্ষে আনার চেষ্টা চালাতে হবে, তেমনি আওয়ামী লীগকেও উদার হতে হবে। পেশিশক্তির রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না।

২০০৬ সালে সংঘাতময় রাজনীতির সুযোগে দুই বছরের জন্য অনির্বাচিত ও অগণতান্ত্রিক সরকার দেশ শাসন করেছিল। রাজনৈতিক অনৈক্যের পরিণামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। সে ধরনের পরিস্থিতি কারোরই কাম্য হতে পারে না। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে ছয়টি আসনে বিজয়ী হয় তারা। চার বছরের মাথায় নির্বাচিত ছয়জনসহ সংরক্ষিত আসনের একমাত্র সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। দুটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন এসেছে। আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের নির্বাচন হবে ২০০৮ সালের মতো। তার মানে পরের দুটি নির্বাচনকে তারাও দৃষ্টান্ত হিসেবে সামনে আনতে চাচ্ছেন না। ২০০৮ সালের নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। দলীয় সরকারের অধীনে আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে- এমন আস্থা বিএনপি ও তাদের মিত্ররা করতে পারছে না। 

এ অবস্থায় বিএনপির সামনে সরকার হটানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে অনড়। প্রতিদিন সংবাদমাধ্যম ও দলীয় কর্মসূচিতে গরম বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন উভয় জোটের নেতারা। এতে সমাধান আসবে না। বরং রাজনৈতিক মাঠ দিন দিন ঘোলাটে হচ্ছে। আবারও সংঘাতের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের মানুষ সংঘাত চায় না। তারা শান্তি চায়। তাই সংঘাতের পথে না হেঁটে উভয় দলকে গণতান্ত্রিক পন্থায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করতে হবে। আওয়ামী লীগের টানা ১৪ বছরের শাসনামলে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল এর খণ্ডচিত্র। এ দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। জনমত উপেক্ষা করে টিকে থাকার পরিণতি শুভকর হতে পারে না। জনতার ভোটেই নির্বাচিত হোক আগামীর সরকার। সেজন্য পাল্টাপাল্টি উস্কানিমূলক কথা বলে সংঘাতের পথ পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান খুঁজতে হবে।

বিষয় : সংঘাতময় রাজনীতি জনতার সরকার

মন্তব্য করুন