
একটি অপ্রিয় সত্য কথা হচ্ছে– আপন যখন পর হয় তখন তাকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করা ছাড়া অন্য কোনো গতি থাকে না। এখন প্রশ্ন– কখন কীভাবে জানা যাবে যে আপন পর হতে চলেছে? তার ব্যবহারের পরিবর্তনে? তার কাজর্কমের পরিবর্তনে না অন্যকিছু? কীভাবে জানা সম্ভব কে আপন আর কে পর? কে মানব আর কে দানব? ‘ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়, মানুষকে কীভাবে চিনব’?
মীর জাফর, যার সম্পূর্ণ নাম মীর জাফর আলী খান (জন্ম: ১৬৯১- মৃত্যু: ৫ ফেব্রুয়ারি ১৭৬৫), ইংরেজ প্রভাবিত বাংলার একজন নবাব। তার শাসনামল ভারতে কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার শুরু এবং সমগ্র উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ভূতপূর্ব নবাব সিরাজউদ্দৌলা নদীয়ার পলাশীর কাছে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন। মীর জাফর ছিল উক্ত যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি। তার অধীনের সৈন্যবাহিনী যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার জন্য নবাবকে পরাজয় বরণ করতে হয়। ইংরেজদের সঙ্গে মীর জাফরের আগেই এই মর্মে একটি চুক্তি ছিল যে, যুদ্ধে ইংরেজরা জয়ী হলে মীর জাফর হবে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব। ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত, সিংহাসনচ্যুত ও নিহত হলে মীর জাফর বাংলার নবাব হয়।
বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমানের মৃত্যুর পর দেহ নামাতে যে লোকটি কবরে নেমেছিল তার নাম খন্দকার মোশতাক। শেখ কামালের বিয়ের উকিল বাপের নাম খন্দকার মোশতাক। বঙ্গবন্ধুর মার মৃত্যুতে যে লোকটি মাটিতে শুয়ে কান্নায় গড়াগড়ি করেছিল তার নাম খন্দকার মোশতাক। সবাই সোনার নৌকা উপহার দিলেও বঙ্গবন্ধুকে সোনার বটগাছ উপহার দিয়েছিল খন্দকার মোশতাক, কারণ বঙ্গবন্ধু তার কাছে বটগাছের মতো। ১৪ আগস্ট দুপুরে যে লোকটি বাসা থেকে তরকারি রান্না করে নিয়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে খাইয়েছিল তারও নাম খন্দকার মোশতাক। বঙ্গবন্ধুকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১৫ আগস্ট সপরিবারে খুন করেছিল তার নাম খন্দকার মোশতাক।
এছাড়াও সমাজে নানা ধরনের লোক রয়েছে, যারা নানাভাবে অন্যায় করতে পারে যেমন; হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের ভাই ও বদির চরিত্র দুটি খুবই জনপ্রিয়, যেখানে দেখেছি বদির মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আদালত নির্দোষ বাকের ভাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
আবার দেখবেন বেশিরভাগ বাঙালি পরিবারের মধ্যে এখনও দেখা যায়, কেউ যখন সবচেয়ে বেশি তোষামোদ করছে বা ভাবভঙিতে মনে হয় যে সে সত্যি একটু আলাদা সবার থেকে এক সময় দেখা যায় সেইই নেমকহারামি করছে। অতি কাছের লোক বা সবচেয়ে প্রিয় লোকেরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অঘটনগুলো ঘটিয়ে থাকে। বিশ্বাসঘাতক সর্বদাই পরিত্যাজ্য সত্যি কিন্তু তা বোঝার উপায় নেই বিশ্বাসঘাতকতা না করা পর্যন্ত।
আমি এখনও মনে-প্রাণে এবং ধ্যানে-জ্ঞানে বিশ্বাস করি বিশ্বের ক্ষমতাশালী রাজনীতিবিদরা একদিন তাদের অনুভূতি ও ভাতৃত্ববোধ ফিরে পাবে, যদি আমরা সারাবিশ্বের জনগণ এক হয়ে চিৎকার করি এবং বলি ‘বিবেকহীন মানুষ নামের দানবের পতন হোক’– দেখবেন সত্যি সত্যি পতন হতে শুরু করেছে।
মানবজাতির ইতিহাসে এগুলো রয়েছে লতার মতো জড়িয়ে আমাদের মধ্যে ওতপ্রোতভাবে। অতএব আমাদের ম্যানেজ করে চলতে হবে এবং এই চলার পথে ব্যবহার করা শিখতে হবে মানবতা ও মনুষ্যত্বকে এবং তার জন্য সব সময় বিবেককে সচল রাখতে হবে। ইনঅ্যাক্টিভ বিবেকই একমাত্র মূল কারণ আমাদের এই অধঃপতনের।
এখন ইনঅ্যাক্টিভ বিবেকই যদি সমস্যার মূল কারণ হয় তবে এর সমাধান কী?
আমি বিশ্বাস করি আমাদের উচিত হবে মানসিক ধ্যানের সঙ্গে জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানো এবং ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য যাচাই–বাছাই করতে শেখা। নইলে হবে শুধু মানবতার অবক্ষয়। যা নেই তার পিছে ছুটতে গিয়ে যা আছে তা ভোগ না করা এবং জীবনের এই মধুময় সময়কে উপভোগ না করা শুধু জীবনের অপচয়! অ্যাক্টিভ বিবেক, অনুভূতি ও ভাতৃত্ববোধ হোক মানবজাতির বেঁচে থাকার মূল লক্ষ্য।
মন্তব্য করুন