শবে বরাত উপলক্ষে মানিকগঞ্জ সিদ্দিকীয়া দরবার শরিফের পীর ড. মো. মঞ্জুরুল ইসলামের ওয়াজ মাহফিল ছিল টাঙ্গাইলে। দরবার শরিফের মুরিদ ওবায়দুল হাসান বাবুলসহ ১০ জনের একটি দলের ওই ওয়াজে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু  রাজধানীর গুলিস্তানে সিদ্দিক বাজারে ভয়াবহু বিস্ফোরণের ঘটনায় বাবুলের আর হুজুরের ওয়াজ মাহফিলে যাওয়া হলো না। বিস্ফোরণের ঘটনায় লাশ হয়ে ফিরলেন নিজ বাড়িতে।

রাজধানীর গুলিস্তানে সিদ্দিক বাজারে ভয়াবহু বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজন মানিকগঞ্জের  ওবায়দুল হাসান বাবুল ওরফে বাবুল মোল্লা (৫৫)। তিনি পৌর এলাকার চর বেউথা গ্রামের মৃত শেখ মো. সাহেব আলীর ছেলে। ২৫ বছর ধরে তিনি ঢাকায় প্রেস প্রিন্টিং সাপ্লাইয়ের কাজ করতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বাবুল। তাকে হারিয়ে পরিবারে চলছে শোকের মাতম চলছে। বুধবার বাবুলের মরদেহ মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় চরবেউথা সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

সরেজমিন বাবুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বুধবার ভোরের দিকে নিহত বাবুলের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাবুলের বাড়িতে এলাকাবাসী ও স্বজনদের ভিড়। বাড়ির আঙ্গিনায় খাটিয়ায় মরদেহ রাখা হয়েছে। স্ত্রী নাজমা বেগম, তিন সন্তান আর স্বজনদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আকম্মিক এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। বাবুলের স্বজনরা বিষ্ফোরণের ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করেন।

স্বজনরা জানান, বাবুলের ১ ছেলে ২ মেয়ে। বড় মেয়ে  মরিয়ম ও ছোট মেয়ে মারিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান পড়াশুনা করছে সিদ্দিকীয়া দরবার শরিফ মাদ্রাসায় ।  এলাকার মানুষ তাকে একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসেবে চিনেন।

বাবুলের বন্ধু আবুল বাশার জানান, গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারের ওই ভবনের নিচ তলায় তার বিসমিল্লাহ স্যানেটারি নামে একটি দোকান আছে। কাজের ফাকে বাবুল মাঝে মধ্যে এসে আড্ডা দিতো। শবেবরাত উপলক্ষে  টাঙ্গাইলে মানিকগঞ্জ সিদ্দিকীয়া দরবার শরিফের পীর ড. মো. মঞ্জুরুল ইসলামের ওয়াজ মাহফিল ছিল। তাদের ১০ বুন্ধ মিলে ওই ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। ট্রেনের টিকিট ছিল নিহত বাবুলের কাছে।

আবুল বাশার আরও জানান, মঙ্গলবার বিকালে বাবুল তার দোকানে আসলে যাওয়ার বিষয়ে কথা হচ্ছিল। বাবুলকে দোকানে বসিয়ে রেখে তিনি ওয়াশরুমে যান। এসময় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নিচ তলা ধ্বসে পড়ে। চারদিক লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।  ফিরে এসে তিনি  ধ্বংসস্তপের মধ্যে বন্ধু বাবুলকে খুঁজতে থাকেন। না পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে ছুটে আসেন স্বজনরাও। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে বাবুলের একটি হাত ও মরদেহ বিকৃত হয়ে যায়। তার পড়নের জুব্বা ও তসবি দেখে লাশ শনাক্ত করা হয়।

নিহত বাবুলের স্বজন আব্দুর রশিদ জানান, বাবুলের শরীর থেকে একটি হাত বিচ্ছিন্ন ছিল। হয়তো হাতটি  দুর্ঘটনাস্থলেই রয়ে গেছে। হাসপাতাল থেকে রাত চারটার দিকে তার মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। বাড়ি আনার পথে তার পীরের দরবার শরীফ সিদ্দিক নগরে সকাল ৮ টায় প্রথম নামাজে জানাযা দেয়া হয়। এর পর সকাল ৯ টায় বাড়ির পাশে চর বেউথা বায়তুল আমান জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে দ্বিতীয় জানাযা শেষে সামাজিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।