দেশে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যকার সংঘাত আমরা দেখেছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যকার সংঘর্ষ এতটাই প্রকট আকার ধারণ করে, সেখানে দুই শতাধিক আহত হয়। ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তারও হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থীর ওপর স্থানীয়রা চড়াও হন। বাসের ভাড়া নিয়ে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাস শ্রমিকরা সংঘর্ষে জড়ান। চলতি সপ্তাহে দিনাজপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনাও সংবাদমাধ্যমে এসেছে। 

স্থানীয় কিংবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিবাদের আগেও ঘটেছে। ইতোপূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাক কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। 

এসব ঘটনা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার বোঝা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আচরণের কারণে স্থানীয় কিংবা ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ। তাহলে সাধারণ মানুষ শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ মনে করছে নাকি উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো প্রান্তিক জনগণ ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভেদের দেয়াল এঁকে দিয়েছে? এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। 

সাধারণ মানুষ তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গর্ব করার কথা। কারণ তারাই তো দেশের সম্পদ এবং আগামীর ভবিষ্যৎ। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিবাদে না জড়িয়ে তাদের সম্মানের জায়গা রাখার কথা। কারণ, তাঁদের অবদানেই তো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হচ্ছে। এখানে অবদান শুধু এক পক্ষীয় নয়। স্থানীয়দের জীবনযাত্রায় শিক্ষার্থীদেরও অবদান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না থাকলে স্থানীয়রা শিক্ষা ও সভ্যতার আলো থেকে অনেক দূরে থাকত। 

শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় কিংবা শ্রমজীবী মানুষ, উভয় পক্ষেরই অনড় অবস্থানের ফলে ঘটনাগুলো বাগ্‌বিতণ্ডা থেকে সংঘর্ষে রূপ নেয়। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন কর্মকাণ্ড খুবই উদ্বেগজনক এবং চিন্তার বিষয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় কিংবা শ্রমজীবী মানুষের সম্পর্ক উন্নয়নে আমরা কতটুকু আন্তরিক? এ ক্ষেত্রে সরকার, প্রশাসন বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কী? 

উন্নত জীবন আদর্শ তৈরি, দেশ ও জাতির প্রতিটি সমস্যায় প্রজ্ঞাপূর্ণ ভূমিকা রাখবে– এমন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উচ্ছৃঙ্খলতা, চাঁদাবাজি, মাস্তানিসহ বেশ কিছু কারণে তারা স্থানীয়দের চক্ষুশূল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অল্প সময়ের জন্য আসে। এ ক্ষেত্রে তাদের সম্পৃক্ততা অবশ্যই আছে। কিন্তু এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর পূর্বপরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের আছে কী?

পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে প্রায়ই সময় বিবাদের সূত্রপাত হয়। তারপর তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। ভাড়া নিয়ে সুস্পষ্ট বিধিমালা থাকার পরও এমন ঘটনা বারবার ঘটা এটাই প্রমাণ করে, এসব ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও স্থায়ী সুরাহা হচ্ছে না। এখানে প্রশাসনের দুর্বলতা ও অদূরদর্শিতা চোখে পড়ার মতো। 

স্থানীয়দের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে না পারার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এড়াতে পারে না। স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন কেবল সদিচ্ছা। আমরা প্রত্যাশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেমন এ সদ্ভাব বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট হবে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদেরও সহনশীল হওয়া চাই।