- চতুরঙ্গ
- সংগ্রামী ও গণতন্ত্রের আপসহীন পূজারিকে হারাল দেশ
সংগ্রামী ও গণতন্ত্রের আপসহীন পূজারিকে হারাল দেশ

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ও স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন আমার দীর্ঘকালের রাজপথের সহযোদ্ধা। বিপদ-আপদে, আন্দোলন-সংগ্রামে, সফলতা-ব্যর্থতায়, আনন্দ-উল্লাসে আমরা ছিলাম একে অপরের সহযোগী। স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলোতে ছাত্র আন্দোলন যখন বিকশিত হওয়ার চরম পর্যায়ে উপনীত তখন আমরা বাঙালি জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত হয়ে কঠিন সংগ্রামে জড়িত হয়েছিলাম। নূরে আলম সিদ্দিকী কোনো ছাত্র জনসভায় দীপ্ত মশালের মতো জ্বলে উঠত, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠতেন।
ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে নূরে আলম সিদ্দিকী অনেক ছাত্রনেতার চেয়ে বেশি পাকিস্তানের কারাগারে সোনালি দিনগুলা অতিবাহিত করেছেন। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী প্রতিবাদী মিছিলে বা স্লোগানে মানুষকে অকুতোভয়ে সাহসী করা দুর্লভ শক্তির অধিকারী ছিলেন তিনি। ছাত্র আন্দোলনের প্রবল সময়ে তাঁর ভূমিকা, কর্মকাণ্ড এবং তৎপরতা ইতিহাসের অন্যতম অংশ।
স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল দিনগুলোতে নূরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন অন্যতম ঐতিহাসিক চরিত্র। সংগ্রামের গতি-প্রকৃতি ব্যাখ্যা করে পাণ্ডিত্যপূর্ণ ভাষায় উপস্থাপন করায় তিনি ছিলেন অসাধারণ একজন বাগ্মী। ৬০ দশকের বিপুল গণজাগরণের অন্যতম ভাষ্যকার তিনি। ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ এবং ২৩ মার্চসহ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগের অনেক ঐতিহাসিক কৃতিত্বের অন্যতম অংশীদার। তিনি ছিলেন তুখোড় ছাত্রনেতা ও সর্বজনপ্রিয় ‘চার খলিফার’ অন্যতম সারথি। তৎকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতির সুমহান গৌরব ও তাৎপর্যের অন্যতম ঐতিহাসিক নায়ক ছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী।
তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন সংগ্রামী ও গণতন্ত্রের আপসহীন পূজারিকে হারাল। এই ক্ষতি পূরণযোগ্য নয়। নির্ভেজাল গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর আনুগত্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি দেশের ইতিহাসে অন্যতম গণতন্ত্রী, যিনি বাকশাল গঠনের বিরোধিতা করতে গিয়ে সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। যতদিন বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন নূরে আলম সিদ্দিকীও জাতির অস্তিত্বে গ্রথিত হয়ে থাকবেন। আমি কোনোক্রমেই নূরে আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে অজস্র ঘটনার অগণিত সংগ্রামের স্মৃতি প্রকাশ করার মতো অবস্থায় নেই।
রাজনৈতিকভাবে মতবিরোধ থাকার পরও কখনোই আমাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটেনি এবং পারিবারিক দুঃখ-আনন্দ আমরা পরস্পরে ভাগ করেই নিয়েছি। কিছুদিন আগেও আমার বন্ধু নূরে আলম সিদ্দিকী ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন আমার বাড়িতে বেড়াতে আসবেন, তা আর হলো না। তাঁর সঙ্গে পরপারে হয়তো আবার দেখা হতে পারে।
লেখক : সভাপতি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি
মন্তব্য করুন