- চতুরঙ্গ
- একনিষ্ঠ তওবার উত্তম সময় রমজান
একনিষ্ঠ তওবার উত্তম সময় রমজান

মানুষ তওবার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে। অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। আত্মশুদ্ধি অর্জনে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে। পাপাচার পরিহার করে উৎসুক হয় পুণ্যের কাজে। এতে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর পবিত্র রমজান মাস এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই তওবার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ এবং আত্মশুদ্ধি অর্জনে রমজানের গুরুত্ব অনেক।
আর আত্মশুদ্ধির যে চেতনা নিয়ে আমরা রমজানকে স্বাগত জানিয়েছিলাম, সেই আত্মশুদ্ধির কতটা আমরা অর্জন করতে পেরেছি, রমজানের শেষ পর্বে এসে তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ কথা আমরা সবাই জানি, আত্মশুদ্ধির সঙ্গে কৃতকর্মের জন্য গভীর অনুতাপের একটি সম্পর্ক রয়েছে, যাকে আমরা তওবা বলি।
অতীত হয়ে যাওয়া রমজানের দিনগুলোতে আমরা কতটা নিষ্ঠার সঙ্গে তওবা করতে পেরেছি? আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। এ সময়ের মধ্যে যদি আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে তওবা করতে পারি, তবে মহান আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন এবং রমজানের প্রতিশ্রুত পুরস্কারে আমাদের তিনি ভূষিত করবেন।
গোনাহ করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। মানুষ ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় গোনাহ করে ফেলে। এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। অস্বাভাবিক হলো গোনাহের উপর অটল থাকা এবং আল্লাহর নিকট তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা না করা। আল্লাহতায়ালা মানুষকে পাপ-পূণ্য প্রভৃতি ভালো মন্দের উপকরণ দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। তাই গোনাহ হতেই পারে। তবুও করণীয় হলো যথাসম্ভব পাপ ও গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। এরপরও যদি ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় গোনাহ হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করা আবশ্যক।
আল্লাহ মানুষকে এই জন্যই সৃষ্টি করেছেন যে, মানুষ সৎ ও ন্যায়ভাবে জীবনযাপন করবে আবার শয়তানের ধোঁকায় পড়ে গোনাহও করবে। অতঃপর অনুধাবন করবে যে, সে গোনাহ করে ফেলেছে এবং গোনাহের উপর অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট তওবা করবে। আর আল্লাহ গোনাহগার বান্দাকে ক্ষমা করে দিবেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি তোমাদের দ্বারা কোন গোনাহের কাজ না হতো তবে আল্লাহ তোমাদের পরিবর্তে এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন যারা গোনাহ করত এবং তওবাও করত। -মুসনাদে আহমদ ২৯০৩
গোনাহগার বান্দা অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট তওবা ও ক্ষমা প্রর্থনা করলে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ হলেন পরম ক্ষমাশীল। আল্লাহ ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। ক্ষমা প্রার্থনাকারীদেরকে ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় মহান আল্লাহ এই ঘোষনা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে। -সুরা বাকারা ২২২
আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদের অন্যত্র বলেন, তিনিই তো স্বীয় বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন। -সুরা শুরা ২৫
বান্দা যখন গোনাহ করে এবং তওবা না করে গোনাহের উপর অটল থাকে তখন আল্লাহ বান্দার প্রতি অসন্তুষ্ট হোন। আর বান্দা যখন গোনাহের উপর অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট তওবা করে তখন আল্লাহ অত্যন্ত খুশি হোন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হয়, আল্লাহ তায়ালা বান্দার তওবায় তার চেয়েও অনেক বেশি খুশি হোন। -বোখারি ৬৩০৯
যারা অনবরত পাপাচারে লিপ্ত থেকে আল্লাহর স্মরণ হতে একেবারে গাফেল হয়ে যায় তাদেরও রয়েছে তওবা করার সুযোগ। গোনাহ যত বেশিই হোক না কেন একনিষ্ঠভাবে তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। সুতরাং হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যারা সারা বছর পাপাচারে লিপ্ত থেকে নিজের জীবনকে কলুষিত করেছে, মহিমান্বিত এই রমজান তাদের তওবার জন্য সুবর্ণ সুযোগ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সুরা যুমার ৫৩
কেউ যদি কোন বান্দার হক নষ্ট করে তাহলে কেবল আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ সে গোনাহ ক্ষমা করবেন না। বরং এজন্য বান্দার হক আদায় করে দিতে হবে কিংবা তার কাছে থেকে মাফ চেয়ে তাকে সন্তুষ্ট করতে হবে। নয়ত আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।
তওবা পাপকে মুছে বান্দাকে নিষ্পাপ করে। আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ককে গভীর করে। তাই রাসুল (সা.) উম্মতকে বেশি বেশি তওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল (সা.)বলেন, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমি দিনে ১০০ বার তওবা করি। -মুসলিম ৭০৩৪
রাসুল (সা.) এর কোন গোনাহ ছিল না। তিনি ছিলেন নিষ্পাপ। তবুও তিনি তওবা করতেন। এর দ্বারা মূলত উম্মতকে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে শেখাতেন এবং আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন। তাই আসুন রাসুল (সা.) এর বাতলানো নির্দেশনা অনুযায়ী আমরাও বেশি বেশি তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হই। আর রমজান মাস এই কাজের শ্রেষ্ঠ সময়।
লেখক: ধর্মীয় নিবন্ধকার
মন্তব্য করুন