- চতুরঙ্গ
- আজ রমজানের শেষ জুমা
আজ রমজানের শেষ জুমা

আজ ২৯তম রোজা। চলতি রমজান মাসের শেষ শুক্রবার। রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে 'জুমাতুল বিদা' নামে অভিহিত করা হয়। এটি নব আবিষ্কৃত একটি পরিভাষা। শরিয়তে জুমাতুল বিদার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। তবুও অনেকের ধারণা, এর বিশেষ ফজিলত রয়েছে। তারা এই জুমাকে খুব গুরুত্ব দেয় এবং এটাকে শরিয়ত নির্দেশিত ফজিলতপূর্ণ দিবসের অন্তর্ভুক্ত মনে করে।
শরিয়তে জুমার দিনের আলাদা ফজিলত আছে। কোরআনে এই দিনের ইবাদতকে অত্যন্ত গুরুত্ববহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে- আনন্দ ও ইবাদতের দিন। সুতরাং অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত বেশি। আর রমজানে জুমার দিনগুলো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতময়। এক রমজানে চার থেকে পাঁচটি জুমাবার পাওয়া যায়। ফজিলত ও গুরুত্বের দিক দিয়ে রমজানের প্রথম ও দ্বিতীয় জুমাবারের যে মর্যাদা সেই একই মর্যাদা জুমাতুল বিদা বা শেষ জুমাবারের।
এজন্য রমজানের অন্যান্য জুমাবারে যেসব আমল করা হয় শেষ জুমাবারেও একই ধরনের আমল কাম্য। শেষ জুমাবারকে বিশেষ দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে তাতে বিশেষ কিছু করা বিদয়াতের অন্তর্ভুক্ত। তবে হ্যাঁ, যদি এ রকম মনে করা হয়, এটি রমজানের শেষ জুমা, আর রমজান অনেক ফজিলতময়, জুমাবারও ফজিলতময়। সুতরাং ভিন্ন দুটি ফজিলতপূর্ণ মুহূর্ত একত্রে পাওয়া যাচ্ছে, যা আবার এক বছর পর আসবে। অনেকেই হয়তো এই সময়ের ভেতরে মৃত্যুবরণ করবে। তারা এমন ফজিলতপূর্ণ মুহূর্ত আর পাবে না। তাই এমন ফজিলতপূর্ণ মুহূর্তে যথাসম্ভব মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানো অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। যদি কোন দিবস নির্ধারণে না গিয়ে এমন চিন্তাভাবনা থেকে ইবাদতে মশগুল হওয়া যায় তাহলে তা যথার্থ হবে।
রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশ দিনকে আলাদা গুরুত্ব দিতেন। শেষ দশদিন বিশেষভাবে ইবাদত করার জন্য মসজিদে ইতিকাফ করতেন। রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করতেন। বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা এসব প্রমাণিত। কিন্তু শেষ জুমাবারের জন্য আলাদাভাবে বিশেষ কোনো ইবাদতের কথা হাদিসে উল্লেখ নেই। রমজানের শেষ শুক্রবারে জুমার নামাজে বিদায়ী খুতবা দেওয়া, এই দিনকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার জন্য খুতবায় 'বিদায়, বিচ্ছেদ ও শান্তি হে রমজান মাস' এ জাতীয় বাক্য বলা মাকরুহ ও বিদয়াত। সুতরাং কেউ যদি রমজানের শেষাংশে বিশেষ ইবাদত করতে চায় তাহলে জুমাতুল বিদার আয়োজন না করে সুন্নত ইতিকাফ করাই যথাযোগ্য।
অনেকের ধারণা, জুমাতুল বিদায় নফল নামাজ পড়লে সারা জীবনের কাজা হয়ে যাওয়া ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যায়। এই ধারণা ভুল। কারও জিম্মায় যে পরিমাণ ফরজ নামাজ কাজা রয়ে গেছে, সে পরিমাণ ফরজ নামাজের কাজা আদায় না করলে তার জিম্মায় তা রয়ে যাবে। এই একদিনের নফল দ্বারা সারা জীবনের কাজা হয়ে যাওয়া ফরজ নামাজ আদায় হবে না।
রমজানের অন্যান্য জুমার তুলনায় শেষ জুমাকে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন মনে করা এবং অন্যান্য জুমাবারের তুলনায় শেষ জুমাবারে বেশি সওয়াব লাভের আশায় ইবাদতে মশগুল হওয়া ঠিক নয়। বরং হাদিসে জুমার দিনের যেসব আমলের কথা বলা হয়েছে স্বাভাবিকভাবে সেসব আমলে মনোনিবেশ করা কাম্য।
জুমার দিনের বিশেষ আমল হলো, এই দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ এবং সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়। আবু দাউদ ১০৪৭
রাসুল (সা.) আরো বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, এটি তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কে নূর দ্বারা আলোকিত করে দিবে। (বায়হাকি ৩/২৪৯)
জুমার আজানের সঙ্গে সঙ্গে খুব দ্রুত মসজিদে চলে আসা। এই বিষয়ে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, হে ইমানদারগণ! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলদ্ধি করো। (সুরা জুমুআ ০৯)
রমজান মাসে ইফতারের ক্ষাণিক পূর্ব মুহূর্ত থেকে ইফতার পর্যন্ত সময়টুকুতে দোয়া কবুল হয়। আবার জুমার দিনও আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টুকু স্বতন্ত্রভাবে দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে গণ্য। সুতরাং যখন দোয়া কবুল হওয়ার ভিন্ন দুটি বিশেষ মুহূর্ত একত্র হবে, আশা করা যায় তখন দোয়া আরো দ্রুত ও ব্যাপকহারে কবুল হবে। তাই এই মুহূর্তে তওবা, এসতেগফার ও দরূদ পাঠ করে মহান আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (স.) বলেছেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলমান ওই সময়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তাকে তা দান করেন। ওই মুহূর্তটি তোমরা আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো। (আবু দাউদ ১০৪৮)
রাসুল (সা.) আরো বলেন, ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না। (ইবনে মাজাহ ১৭৫৩)
রমজান মাসের শুক্রবার আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টুকুকে প্রতিটি মুসলমানের বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। এই সময়টুকু মহান আল্লাহর কাছে কল্যাণের দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করে কাটানো উচিৎ। কেননা এই সময়ে দোয়া কবুলের নিশ্চয়তা রয়েছে। সারা বছর মানুষের অনেক প্রত্যাশা অপূর্ণ থেকে যায়। সকলের প্রত্যাশা পূরণে রমজানের শুক্রবার সন্ধ্যাগুলো প্রার্থনায় কাটুক।
লেখক: ধর্মীয় নিবন্ধকার
মন্তব্য করুন