- চতুরঙ্গ
- নির্বাচনের অংশীজন এটাকে গুরুত্ব দেবেন বলে আশা করি
নির্বাচনের অংশীজন এটাকে গুরুত্ব দেবেন বলে আশা করি

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার জন্য সহায়তা করতেই ঘোষণা করা হয়েছে বলে দেশটির সরকার দাবি করছে। আমি মনে করি, এর মাধ্যমে তারা একটা বার্তা দিতে চেয়েছে। এদেশে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু এবং কার্যকর নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আমি আশা করি, নির্বাচনের অংশীজন যেমন– রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম সবাই এটাকে গুরুত্ব দেবে।
প্রশ্ন হলো এই নীতি কাদের ওপর কার্যকর হবে? এটা তাঁদের ওপরই কার্যকর হবে, যাঁরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো ক্ষতির কারণ হবেন, নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবেন, মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত করবেন, সন্ত্রাস ও সহিংসতা সৃষ্টি করবেন। সব রাজনৈতিক দল, তাদের নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নাগরিক সমাজ, সুশীল সমাজ, সরকারি কর্মচারী যে বা যাঁরাই নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবেন, তাঁরাই ভিসার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক সাড়া পাবেন না।
যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কার জানিয়েছে, তাদের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। যেন এখানে নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের সামগ্রিক অংশীজন সবাইকে সহায়তা করার জন্য এবং নির্বাচনী বাতাবরণকে সামগ্রিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য।
যুক্তরাষ্ট্র চায়, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেন অংশীদারদের মধ্যে এখনই আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায়। যে নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক, সাবলীল, স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বচ্ছ। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া গতিশীল ও ত্বরান্বিত করাই নতুন ভিসা নীতির উদ্দেশ্য। জনগণই দেশের মালিক। তাই তারা যাঁকে নির্বাচিত করতে চায়, তাঁকেই যেন নির্বাচিত করতে পারে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারি দল, বিরোধী দল, সব রাজনৈতিক দল যেন সঠিকভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারে।
আমি মনে করি, এই ভিসা নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বলতে চেয়েছে, যাঁরা ইতিবাচকভাবে বা স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন, তাঁদের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যাঁরা ভোট প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি ও কারচুপির মতো কাজ করবেন, তাঁরা বা তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ভিসার জন্য বিবেচিত হবেন না। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র যে বার্তা দিতে চেয়েছে তা হলো, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া স্বাভাবিক গতিতে চলার বিরুদ্ধে যদি কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, তাহলে তিনি যেই হোন না কেন, তাঁর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক অবস্থান থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ উদ্যোগ ইতিবাচকভাবে নেওয়া হলে তা বাংলাদেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। আর সেটা না মানলে দেশে যেমন সহিংসতার আশঙ্কা থেকে যায়, সেসঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হুমকির মুখে পড়বে।
প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। সবারই কমবেশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব না দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। যাঁরাই নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবেন, তাঁরাই এটাকে গুরুত্ব দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত
মন্তব্য করুন