- চতুরঙ্গ
- বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সচেতনতা জরুরি
বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সচেতনতা জরুরি

ভৌগোলিক অবস্থান, বাযুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃক্ষনিধন, গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে বজ্রপাতের সংখ্যা দিন দিন অপ্রত্যাশিত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর; এর পরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাস আসে এবং উত্তরের পাহাড়ি এলাকা হিমালয় থেকে আসে ঠান্ডা বাতাস। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেড়ে যায় ১২ শতাংশ।
মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাত বা বজ্রবৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এপ্রিল-মের উত্তপ্ত আবহাওয়ায় বোরো ধান কাটার মৌসুমে দুর্ঘটনার শিকারের মধ্যে কৃষক, মৎস্যজীবী, খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি। বজ্রপাত বিষয়ে তাদের অজ্ঞতার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি। সেই সঙ্গে অনেক গবাদি পশুও মারা যায়। দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ অসচেতনতা, উদাসীনতা, অবহেলা ও উপেক্ষা।
২০১৯ সাল থেকে বজ্রপাতে হতাহত নিয়ে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি মুক্ত জায়গায় কাজ করা, কৃষকদের মাঝে বজ্রপাত সম্পর্কে সচেতনমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএফ) পক্ষ থেকে গত ৪ মে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ৩ মে পর্যন্ত বজ্রপাতে মোট ৩৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতে ২৩৯ জন পুরুষ, ৩৫ জন নারীসহ ২৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।। এ বছর বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে। এ জেলায় মারা গেছে ৭ জন। সিলেট জেলায় মারা গেছে ৫ জন।
ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরীক্ষিত মডেল হলেও বজ্রপাত ব্যবস্থাপনায় এখনও তা সম্ভব হয়নি। বজ্রপাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বেশ কয়েকটি অঞ্চলকে শনাক্ত করেছেন আবহাওয়াবিদরা। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, পার্বত্যাঞ্চলেও বজ্রপাতে মানুষ হতাহত হচ্ছে। তাই কোনো অঞ্চলকেই বজ্রপাতের ঝুঁকির বাইরে বলা যাবে না।
বজ্রপাত বা বজ্রঝড় সাধারণত ৩০-৩৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময় ঘরে থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে– আকাশে কালো মেঘ দেখা দিলে বা বজ্রপাত শুরু হলে খোলা স্থান বা ধানক্ষেত, গাছের নিচে, বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে না থেকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া। যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেওয়া। বজ্রপাতের সময় বিদ্যুৎ পরিবাহী কোনো কিছুর সংস্পর্শে না যাওয়া। বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজটি করলে সেটি আরও ফলপ্রসূ হবে।
রামগড়, খাগড়াছড়ি
মন্তব্য করুন