- চতুরঙ্গ
- পেঁয়াজের দাম কমানোর ‘টনিক’
পেঁয়াজের দাম কমানোর ‘টনিক’

পেঁয়াজ- ফাইল ছবি
পেঁয়াজের দাম শতকের ঘর ছোঁয়ার পর ভোক্তাদের মনে যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল, সোমবার তা অনেকাংশেই দূর হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র এক দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে কেজিতে ৩০ টাকা এবং খুচরায় ১৫-২০ টাকা দাম কমেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের অনেক বড় ব্যবসায়ী দামে ছাড় দিয়ে তাড়াহুড়া করে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিচ্ছেন। সোমবার ঢাকার কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজারে পাইকারিতে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আরও কমে বিক্রি হচ্ছে, ৫৫ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ আশ্চর্যজনক ঘটনার পেছনে যে রোববার সরকারের পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দানের ঘোষণা টনিকের মতো কাজ করেছে তা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ দিতেও আমাদের কার্পণ্য নেই।
তবে এ ধন্যবাদ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কথাও আমরা সরকারেরর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে বলতে চাই। তা হলো, গত রোজার ঈদের, কেতাবি ভাষায় আমরা যাকে ঈদুল ফিতর বলে থাকি, পরপরই যখন পেঁয়াজের কেজি ৫০-৬০ টাকা পেরোল তখনই আমদানির সিদ্ধান্তটি নেওয়া যেত। তা হলে একদিকে মজুতদাররা সাধারণ ভোক্তাদের পকেট কাটার সুযোগ কম পেত; ভোক্তারাও অনেক আগেই জীবনযাত্রার সীমাহীন ব্যয়ের এ সময়ে একটু হলেও স্বস্তি পেত। প্রশ্ন দাঁড়ায়, সরকার কি তবে মুষ্টিমেয় মজুতদারকে সুবিধা করে দিতেই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দানে দেরি করল?
লক্ষণীয়, পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সূচনা থেকেই বিশেষত বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষের মুখ থেকে আশ্বাসবাণী বেরোতে থাকে– যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুত আছে, সরবরাহ সংকটের কোনো কারণ নেই। কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান থেকে আমরাও জানতাম, এ বছর উৎপাদন যা হয়েছে– ২৬ লাখ টনের চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৩৫ লাখ টন–তাতে রসুইঘরের অপরিহার্য পণ্যটির মজুত যথেষ্টই থাকার কথা। কিন্তু পেঁয়াজ তো চাষির ঘরে উঠেছে সেই ফেব্রুয়ারি-মার্চে, দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় এতদিন কি তা অন্তত ছোট-মাঝারি চাষির ঘরে থাকতে পারে? তাদের কিন্তু সংসার চালানোর অন্য কোনো উপায় নেই, মৌসুমের ফসল বিক্রি করা ছাড়া। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পেঁয়াজের বাজার চলে যাওয়ার কথা ফড়িয়াদের দখলে; এবং ঘটনাও তা-ই ঘটেছে; যে কারণে নিজেদের মজুত ধীরলয়ে ছেড়ে বাজারে পণ্যটির দাম বাড়ানো হয়েছে; আবার এখন আমদানির কথা শুনেই লোকসানের শঙ্কায় তড়িঘড়ি মজুতকৃত পেঁয়াজ বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এখানে স্পষ্ট, সরকার চাষিদের লাভ করতে দেওয়ার যুক্তি দেখিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখলেও আসলে লাভ হয়েছে ফড়িয়াদের।
বলা বাহুল্য, ভারতে এখন পেঁয়াজের দাম অনেক কম। সে হিসাবে আমদানিকৃত পেঁয়াজের প্রভাবে খুচরা পর্যায়ে দুই-এক দিনের মধ্যে দাম আরও কমে যাবে।
শেষ কথা হলো, দেরিতে হলেও পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সরকার সাধুবাদযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে; এমন পদক্ষেপ অন্যান্য অনেক নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও নেওয়া যায়। যেমন ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানিতেও সরকার চাইলে বিদ্যমান মুষ্টিমেয় কোম্পানির বাইরে আরও অনেককে উৎসাহিত করতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে পণ্যসমূহের দাম নিম্নমুখী হলেও দেশের বাজার বেশ চড়া; এটা হতে পারছে খাতসমূহে ওই কতিপয়তন্ত্রকে সরকার প্রশ্রয় দেওয়ার কারণে।
দেশে চলছে মুক্তবাজার অর্থনীতি; এখানে ছোট-বড় সবাইকে বাজারে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া মুক্তবাজারের নিয়মেই জরুরি। এতে বাজারে যেমন সুস্থ প্রতিযোগিতা ফিরে আসবে, তেমনি ভোক্তাদেরও স্বস্তি মিলবে।
সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল
মন্তব্য করুন