- চতুরঙ্গ
- চিড়িয়াখানায় শিশুর হাত হারানোর দায় কার?
চিড়িয়াখানায় শিশুর হাত হারানোর দায় কার?

যে শিশুর হাসি, কান্না আর খেলাধুলায় মেতে বাসার নরম বিছানা আর মায়ের কোলে থাকার কথা ছিল, সে কিনা এখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতড়াচ্ছে। কোনো শিশু হাসপাতালে নয়, দুই বছরের শিশু সাইফ শুয়ে আছে পঙ্গু হাসপাতালে। সম্প্রতি চিড়িয়াখানায় হায়েনা শিশুটির একটি হাত কেড়ে নিয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনাকাঙ্ক্ষিত এ দুর্ঘটনা স্থায়ী পঙ্গুদের তালিকায় নাম লেখাবে তার। পঙ্গুত্বের যাতনা বোঝার শক্তি হওয়ার আগেই সাইফের এ পরিণতির দায় কে নেবে?
মন্ত্রণালয় ও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ শিশু সাইফের চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে বলে জানিয়েছে। হয়তো একটি কৃত্রিম হাতও পাবে সে। কিন্তু যাঁদের অবহেলা আর গাফিলতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটল, তাঁদের বিচারের ব্যবস্থা কি কর্তৃপক্ষ করবে? যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করে দর্শনার্থীদের জন্য চিড়িয়াখানার দরজা উন্মুক্ত করার কথা। খাঁচার ভেতরে যাতে কোনো দর্শনার্থী হাত দিতে না পারে সে জন্য নেট বা জাল দিয়ে তা সুরক্ষিত রাখা হয়। হায়েনার খাঁচায় হাত না গেলে দুর্ঘটনার শিকার হতো না অবুঝ শিশুটি।
দুর্ঘটনার জন্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের যেমন গাফিলতি দায়ী, তেমনি অভিভাবকেরও দায় রয়েছে। এসব প্রাণীর খাঁচার সামনে গিয়ে সন্তানকে সাবধানে রাখা দরকার ছিল। কিন্তু সাইফের অভিভাবক সেখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
শনিবার সমকালে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, চিড়িয়াখানায় অনেক খাঁচার অবস্থা জরাজীর্ণ। কিছু খাঁচা মরিচা ধরে ভেঙে পড়ার অবস্থা। নিরাপত্তাবেষ্টনীরও অভাব রয়েছে। জলহস্তী ও কুমিরের খাঁচার অবস্থা নড়বড়ে। হায়েনা এক শিশুর হাত খেয়েছে, এখনই ব্যবস্থা না দিলে জলহস্তী বা কুমির যে কারও প্রাণ নিতে পারে। তাই অবিলম্বে চিড়িয়াখানার সুরক্ষাবলয় জোরদার করা দরকার।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ নেওয়ার শুরুর দিকেই নবাগত শিক্ষার্থীরা চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের সঙ্গে পরিচিত হয়। পাঠ্যবইয়ে থাকা অধ্যায়ের বাইরে গিয়েও শিক্ষক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, হাতি, ঘোড়ার গল্প শোনান। এসব প্রাণী নিয়ে আলোচনা অনেক শিশু মায়ের কোল থেকেই শুনতে পায়। এখনও অনেক মা শিশুকে ঘুম পাড়াতে বাঘের ভয় দেখান। ফলে চিড়িয়াখানায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে নানা জাতের প্রাণী দেখতে পাওয়াটা কারও কারও কাছে স্বপ্নজয়ের মতো। সেই স্বপ্ন জয় করতে গিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাওয়াটা অন্য দর্শনার্থীদের নেতিবাচক বার্তা দেবে।
সংস্কারের কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে রাজধানীর শিশুপার্কটি বন্ধ। চিড়িয়াখানাও যদি নিরাপদ না হয় তাহলে চিত্তবিনোদনের জন্য শিশুরা কোথায় যাবে? সামনে ঈদ। এ সময় ঢাকা মহানগরীর শিশুরা যাতে মা-বাবার কোলে চড়ে চিড়িয়াখানায় গিয়ে আতঙ্কমুক্ত থাকতে পারে– তা নিশ্চিতের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে।
দর্শনার্থীদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে। চিড়িয়াখানায় গিয়ে প্রাণীকে উক্ত্যক্ত কিংবা খাঁচায় খাবার দেওয়ার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এ জন্য জরুরি সচেতনতা। শিশুরা একদিকে কোমলমতি অন্যদিকে উৎসাহী। দর্শনার্থীরা যখন শিশুদের নিয়ে আসবে তখন চিড়িয়াখানায় প্রবেশের সময়ই তাদের সতর্ক করার ব্যবস্থা থাকা উচিত। বিনোদন ও শিক্ষার জায়গা চিড়িয়াখানায় এসে কোনো শিশুর এমন পরিণতি আর দেখতে চাই না।
মিজান শাজাহান: সহসম্পাদক, সমকাল
মন্তব্য করুন