ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

সাক্ষাৎকার: দ্বিতীয় পর্ব

বড় দলের সঙ্গে খেলার এখনই সময়

বড় দলের সঙ্গে খেলার এখনই সময়

--

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩ | ০৪:৫৩

সাফের আগে এই দল নিয়ে বিশ্বাস ছিল না অনেকের। নানা সমালোচনায় জর্জরিত বাংলাদেশের ফুটবলাররা মনোবল হারাননি। একাগ্রতা ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে ফুটবল খেলা বাংলাদেশ টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল খেলেছে। ফাইনালে উঠতে না পারার আক্ষেপ যেমন আছে, তেমনি আছে ভালো খেলার তৃপ্তি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের এবং দলের পারফরম্যান্স নিয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। তা শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল : সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের সঙ্গে লেবানন আর কুয়েত থাকায় বাংলাদেশকে নিয়ে এবার প্রত্যাশা ছিল না।

জামাল : টুর্নামেন্টের আগে আমি অনেক কথাই শুনেছি। অনেককে নেতিবাচক কথা বলতেও দেখেছি। আসলে আমাদের ওপর কারও আস্থা কিংবা বিশ্বাস যা-ই বলুন না কেন, এগুলো ছিল না। তারা মনে করেছে, এই দল দিয়ে কিছু হবে না। এই জিনিসগুলো আমাদের তাতিয়ে দিয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস ছিল। নিজেরা জানি, কেমন পারফরম্যান্স করতে পারি। সাফের সেমিফাইনালে উঠে আমরা তাদের (সমালোচক) জবাব দিয়েছি। আমরা প্রমাণ করেছি, একাগ্রতা আর আত্মবিশ্বাস থাকলে সবই সম্ভব। এখন আমি মনে করি, সমর্থকদের মধ্যে বিশ্বাস ফেরাতে পেরেছি। আমরা বড় টিমের সঙ্গে খেলতে পারি, এটাও মাঠে প্রমাণ করেছি। লেবানন শেষ ১০ মিনিটের আগে গোল করেছে, আর কুয়েত করেছে অতিরিক্ত সময়ে। লেবাননের সঙ্গে লড়াইয়ের পর আমাদের ধারণা পাল্টে যায়। সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করি– আমরা পারব।

সমকাল : আগে দেখা যেত, ৬০ মিনিটেই দম ফুরিয়ে যেত। এবার দেখা গেছে, ৯০ মিনিট পর্যন্ত লড়াইয়ের মানসিকতা।

জামাল : সাফের আগে আমরা ভালো প্রস্তুতি পেয়েছি। স্বাভাবিকভাবে আমরা পাঁচ-ছয় দিনের বেশি অনুশীলনের সুযোগ পেতাম না। এবার আমরা ১৫-২০ দিন পেয়েছি। এটা খুব কাজ হয়েছে। কোচ ফিটনেস নিয়ে আলাদা কাজ করতে পেরেছেন। যে কারণে পুরো ৯০ মিনিট আমরা একদমে লড়েছি।

সমকাল : সামনে বড় দলের কাছে হারলে ভালো, না ছোট দলের সঙ্গে জিতলে ভালো?

জামাল : যে কোনো ম্যাচ জেতার আনন্দটা আলাদা। সেটা ছোট কিংবা বড় হোক। আমরা যদি বড় দলের বিপক্ষে বেশি খেলি, তাহলে অবশ্যই ভালো। কিন্তু মানুষ কী চায়, সেটা আমি-আপনি সবাই জানি। সবাই মাঠে নামলেই আমাদের কাছ থেকে জয় চায়। আমি মনে করি, এই ধারণাটা এখন বদলে দেওয়ার সময়। র‍্যাঙ্কিংয়ে যারা আমাদের চেয়ে ২০-২৫ ধাপ ওপরে, তাদের সঙ্গে আগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। এরপর পরের ধাপ, সেটা যারা আমাদের চেয়ে ৮০ কিংবা ১০০ ধাপ ওপরে।

সমকাল : কোচ ক্যাবরেরা বলেছেন, টিমের পারফরম্যান্সের যে লেভেল, তাতে র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৭০-এর ঘরে থাকা উচিত। আপনি কী মনে করেন?

জামাল : এটা ঠিকই বলেছেন। আমরা নিজেরাও জানি, র‍্যাঙ্কিংয়ে যে জায়গাতে আছি, সেখানে থাকা উচিত নয়। আমাদের পজিশনটা আরও‌ ওপরে থাকা উচিত।

সমকাল : ২০১৫ সাফ ছিল আপনার প্রথম। সে সময় দলের মধ্যে মারামারি হওয়ার অভিযোগও ছিল। মাঠের বাইরে এবারের টুর্নামেন্টটি কেমন ছিল?

জামাল : না, এবারের সাফটা ছিল অন্য রকম। আমাদের মধ্যে বন্ডিং খুব ভালো ছিল। একে অপরের প্রতি বন্ধুসুলভ আচরণ করেছে সবাই। কম্বিনেশনও ভালো ছিল। সবার টার্গেট, চিন্তাধারা সবকিছু একই ছিল। সবার মধ্যে ভালো করার তাড়না ছিল। সাফ শুরু হওয়ার দু’দিন আগে আমরা টিম হোটেলে একটা মিটিং করেছি। সেখানে যারা সিনিয়র প্লেয়ার, তারা আমরা একটু বেশি কথা বলেছি। কথা বলতে গিয়ে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। চোখের পানি আটকাতে পারিনি। কোচ প্রেরণাদায়ক বক্তব্য দিয়েছেন। যে যাঁর মতো করে বক্তব্য দিয়েছেন, যাতে করে সবাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। সে সময় আমি বলেছি, সাফটা আমাদের জন্য কী? আমরা এখানে কেন আসছি, অবশ্যই ঘুরতে আসিনি। অতীতের ব্যর্থতাগুলো আর সমালোচকদের কথাগুলোও ফুটিয়ে তুলেছি। ওই মিটিংটা খুব ভালো ছিল। বলতে পারেন, সেই মিটিং আমাদের বদলে যেতে সাহায্য করেছে।

সমকাল : আপনার পছন্দের পজিশনে কোচ খেলাননি বলে আপনি মনঃক্ষুণ্ন ছিলেন।

জামাল : মন খারাপ করি না। আমি আসলে যে পজিশনে খেলি, এবার সেই জায়গায় খেলতে পারিনি বা কোচ আমাকে অন্য পজিশনে খেলিয়েছেন। ফলস নাইনে খেলেছি আমি, যেটাতে খুব একটা অভ্যস্ত ছিলাম না। তার পরও চেষ্টা করেছি, কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে। আর আমরা তো প্রতি ম্যাচেই ফরমেশন পরিবর্তন করে খেলেছি। আমরা চারজন মিডফিল্ডার খেলেছি।

আরও পড়ুন