- চতুরঙ্গ
- কথার ফুলঝুরিতে মশা মরবে না
কথার ফুলঝুরিতে মশা মরবে না

বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু একটি আতঙ্কের নাম। প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দা, সংবাদপত্র, অনলাইনে চোখ রাখলেই দেখতে পাই ৮-৯ জনের মৃত্যু হচ্ছে। এবার মৃত্যু অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা, শিশু, বৃদ্ধ– সব বয়সের মানুষ এ রোগে প্রাণ হারাচ্ছে। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বেসরকারি হাসপাতালেও রোগীর ভিড়। শিশু হাসপাতালে অসংখ্য শিশু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। প্লাটিলেটের কিট সংকটে রক্তদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বলা যায়, কঠিন সময় অতিক্রম করছি আমরা।
ডেঙ্গুর প্রকোপ হঠাৎ আসেনি। বেশ কয়েক বছর ধরে রোগটি অনেক প্রাণহানি ঘটাচ্ছে। সিটি করপোরেশন সঠিক পদক্ষেপ নিলে মশা নিধন কার্যক্রম নিশ্চয় আলোর মুখ দেখত।
বিভিন্ন স্থানে চার-পাঁচ দিন জমে থাকা বৃষ্টির পানি ও পরিষ্কার পানি এডিস মশার বংশবিস্তারের অনুকূল জায়গা। তাই মশার বংশবিস্তার বন্ধ করতে পারলে এ রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা কমে যায়। বাসার টবের পানি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করা দরকার। অনেক সময় দেখা যায়, ভাঙা হাঁড়ি-পাতিল বা টব পড়ে থাকে। সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি থেকে এডিস মশার উৎপত্তি হতে পারে। সুতরাং বাড়ির আশপাশে এমন কিছু রাখা যাবে না, যেখানে পানি জমার সুযোগ আছে। শহরের বাসাবাড়িতে অনেকেই ছাদে গাছ লাগান। ওইসব গাছের টবের পানি সবসময় পরিবর্তন করতে হবে। কোনোভাবে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত বর্ষা মৌসুমেই দেখা দেয়। সুতরাং বৃষ্টির পানি জমতে পারে, এমন কিছু রাখা যাবে না বাড়ির আশপাশে।
সিটি করপোরেশনকে কথার ফুলঝুরি ছড়ানো বন্ধ করে মশা মারার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিবেশী ভারতের কলকাতা শহর ডেঙ্গুর মহামারি থেকে মুক্তি পেয়েছে। সিঙ্গাপুর ডেঙ্গু দমনে সফল হয়েছে। আমরা কেন পারছি না? দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নকে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে তুলনা করি। ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তাদের সঙ্গে তুলনা করলে মন্দ হয় না। কলকাতা পারলে ঢাকা কেন পারবে না? সিটি করপোরেশন মশা মারতে এত বরাদ্দ দিচ্ছে, তারপরও আমরা আশার আলোর দেখতে পাচ্ছি না। ডেঙ্গু জ্বর থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু সিটি করপোরেশন মশা থেকে নগরীকে রক্ষা করতে পারবে না; নগরের বাসিন্দাদেরও সচেতন হতে হবে। মশার উৎসমূল ধ্বংস করতে হবে। কারও বাসায় মশার লার্ভা জন্মানোর সুযোগ দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে কমিউিনিটিভিত্তিক কমিটি গঠন করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং জনসাধারণ একসঙ্গে কাজ করতে পারলে আমরাও সিঙ্গাপুর-কলকাতার মতো ডেঙ্গুর রাহু থেকে হয়তো মুক্তি পাব।
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন