ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

কাভার্ডভ্যানে গ্যাস ফিলিং স্টেশন

কাভার্ডভ্যানে গ্যাস ফিলিং স্টেশন

সাতকানিয়ার দেওদীঘি এলাকায় দুটি কাভার্ডভ্যানে সিলিন্ডার বসিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে গ্যাস সমকাল

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:১৫ | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:১৮

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় কয়েকটি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধভাবে চলছে সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) বিক্রির ব্যবসা। কয়েক মাস আগে র‍্যাবের হাতে জব্দ হওয়া কাভার্ডভ্যানগুলোও আদালত থেকে ছাড়িয়ে এনে পুনরায় ব্যবসা শুরু করার অভিযোগ উঠেছে। 

বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০-এর ১৩ (ক)/১৯ ধারায় পরস্পর যোগসাজশে অবৈধভাবে ভ্রাম্যমাণ রিফুয়েলিং স্টেশন এবং যানবাহন সিএনজিতে রূপান্তর কারখানা স্থাপন অপরাধ।

গ্যাস ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন জানান, কাভার্ডভ্যানে বিশেষভাবে স্থাপন করা হয় অনেক সিলিন্ডার। এসব সিলিন্ডারে কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে গ্যাস ভরে সাতকানিয়ায় আনা হয়। এ জন্য মহাসড়কের পাশে অবস্থিত থানা ও হাইওয়ে পুলিশকে নির্দিষ্ট হারে গাড়িপ্রতি টাকা দিতে হয়। এলাকায় এনে গ্যাস বিক্রিতে বাধাদানকারীদের ম্যানেজ করে চলে এ ব্যবসা। 

দেওদীঘি ও আমিলাইশ এলাকায় চলছে এ ব্যবসা। কেরানীহাট ও দাইমারখিল এলাকায়ও একইভাবে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস। 

দেওদীঘির গ্যাস পাম্পের সঙ্গে লাগোয়া বাড়ির মালিক ওয়াহিদুল ইসলাম মানিক। তিনি বলেন, ‘গ্যাস পাম্প বাড়ির সঙ্গে হওয়ায় মনে হয় গ্যাস বোমা মাথায় নিয়ে বসবাস করছি। ছয় মাস আগে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে কাভার্ডভ্যানে আগুন লেগেছিল। এলাকাবাসী আগুন নিভিয়ে ফেলে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির শঙ্কা ছিল।’ 

গ্যাস পাম্পের পশ্চিমপাশে রয়েছে দেওদীঘি কে এম হাই স্কুল ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।  শিক্ষার্থী মো. তানভির ও আবু রায়হান জানায়, তারা প্রতিদিন ভয় নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। 
দেওদীঘি ও আমিলাইশ এলাকায় স্থাপিত সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক জিয়াউল বলেন, ‘এ গ্যাস পাম্পের অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে একটি রিট করেছি। পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায় আছি। আশা করি কিছু দিনের মধ্যে রায় পেয়ে যাব। বড় গ্যাস পাম্পের অধীন দেখিয়ে আবেদন করেছি। আপাতত আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে ম্যানেজ করে এ ব্যবসা পরিচালনা করছি।’ 

আবদুর রহিম, লিয়াকত আলীসহ কয়েকজন অটোরিকশাচালক জানান, পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলায় অনুমোদিত সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো থেকে গ্যাস আনতে গিয়ে হাইওয়ে পুলিশের ঝামেলা পোহাতে হয়। আসা-যাওয়ার সময়সহ নানা ঝুঁকি জেনেও বেশি দামে তারা ভ্রাম্যমাণ সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস নেন।

কেরানীহাট ও দাইমারখিল এলাকায় স্থাপিত সিএনজি ফিলিং স্টেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অংশীদারের ভাষ্য, গ্যাস ব্যবসার সঙ্গে বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিরা জড়িত; রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনও। সবাইকে ম্যানেজ করে ব্যবসা চালান তারা। 

দেওদীঘি এলাকায় স্থাপিত সিএনজি ফিলিং স্টেশনের বিষয়ে এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু ছালেহ বলেন, ‘শুনেছি মাসোহারার বিনিময়ে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের ছত্রছায়ায় এ ব্যবসা চলছে।’ 

কাভার্ডভ্যানে বিপজ্জনকভাবে গ্যাস বিক্রি সমর্থন করেন না উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম. এ মোতালেব। তিনি বলেন, ক্ষমতাশালী যে বা যারাই হোক না কেন, অবৈধ গ্যাস ব্যবসা বন্ধে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আসাদুজ্জামান মহাসড়ক দিয়ে গ্যাসভর্তি কাভার্ডভ্যান চলাচলের বিষয়টি অবগত নন বলে দাবি করেন। 

হাইওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার খায়রুল আলমের ভাষ্য, হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে কাভার্ডভ্যানে করে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবসা করার সুযোগ নেই। 

অবৈধ গ্যাস ব্যবসা বন্ধ করতে স্থানীয় ইউএনওকে নামসহ তালিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদপ্তরের পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, ‘অভিযান শুধু বিস্ফোরক অধিদপ্তর করতে পারে তা নয়, যে জায়গায় অবৈধ কার্যক্রম চলছে, সেই এলাকার ইউএনও এবং ওসি চাইলেই অভিযান চালাতে পারেন।’

সাতকানিয়ার ইউএনও মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি, বিষয়টি অবগত নই। অভিযান করার জন্য এসিল্যান্ডকে বলব।’

আরও পড়ুন