- চট্টগ্রাম
- পাঁচ বছরেও জানা গেল না ‘খাটপাতা’ কার
পাঁচ বছরেও জানা গেল না ‘খাটপাতা’ কার

আফ্রিকান উদ্ভিদ ‘মিরা’ বা ‘খাট’-এর ২০৮ কেজি পাতা ২০১৮ সালে আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। ইথিওপিয়ার জিয়াদ মোহাম্মদ ইউসুফ দুই বাংলাদেশির নামে বন্দরের ডাকপোস্টে এগুলো পাঠান। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যতদিনে জানা গেছে নিউ সাইকোট্রফিক সাবস্টেন্সেস বা এনপিএস খাট আসলে বিশ্বের সি ক্যাটাগরির ভয়াবহ মাদক, ততদিনে তালগোল বেঁধে গেছে। কারণ, তিন বছর পর ২০২১ সালে মামলা হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তারা কূলকিনারা করতে পারেননি। এমনকি চট্টগ্রামের যে দুই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় এগুলো এসেছে, সেখানে কারও অস্তিত্ব নেই। পরে পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। কিন্তু পুলিশের তদন্তে অনাস্থা জানিয়ে অধিকতর তদন্ত চেয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি নারাজি দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর বন্দর থানার এসআই মাসুদুর রহমান বলেন, মাদক জব্দের পর দ্রুত মামলা হলে আসামিদের শনাক্ত করে ধরা সহজ হতো। ঘটনার তিন বছর পরের মামলা তদন্তে এজাহারে থাকা ঠিকানায় গিয়ে দুই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। হয়তো এতদিনে আসামিরা প্রমাণ লোপাট করে ফেলেছে। শুরুতেই মামলা হলে কেউ এগুলো নিতে বন্দরে এসেছিল কিনা সিসিটিভির ফুটেজসহ নানা কৌশলে বের করা সম্ভব ছিল। তিনি আরও বলেন, এলসির মাধ্যমে আমদানি হলেও আসামি ধরা যেত। ডাকপোস্টে আসায় শুধু অনপেমেন্ট দিয়ে খালাসের সুযোগ থাকায় আসামিদের শনাক্ত করা যায়নি, আদালতে জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার বাদী চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হাফেজ আহমেদ জানান, বন্দরে কাস্টমস কোনো অবৈধ মালপত্র জব্দ করলে আইন মেনে পদক্ষেপ নিতে একটু সময় লাগে। খাটপাতার বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মতামত নিতে হয়েছে। এজন্য মামলা করতে একটু সময় লেগেছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পিপি আবদুর রশিদ বলেন, এলসি ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে খাটের চালান এলেও সেখানে দুই ব্যক্তির বিস্তারিত ঠিকানা রয়েছে। পুলিশ বন্দরের মতো স্পর্শকাতর এলাকার এ ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করেছে বলে নথিপত্র দেখে মনে হয়নি। এজন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দিয়েছি। শুনানিতে সিআইডির মাধ্যমে মামলাটির অধিকতর তদন্ত চেয়ে আবেদন করা হবে।
২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পিএডি চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম পোস্ট অফিসের রেজিস্টার অনুযায়ী যথাক্রমে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর এইচ/ই নতুন এ ব্লক ৪ নম্বর লেনের ১ নম্বর রোডের ২৩ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মো. ইফতেখার হোসাইন ও ফেনী সদরের শান্তি কোম্পানি রোড এলাকার শান্তিধারা আবাসিক এলাকার আরিফ ভূঁইয়ার মালিকানাধীন আরিফ এন্টারপ্রাইজের নামে মাদকের চালান দুটি আসে। এগুলো পাঠাতে ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা থেকে জিয়াদ মোহাম্মদ ইউসুফ দেশটির ‘জিমেরা ট্রেডিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেন।
ইফতেখারের নামে চালানটি ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট এবং আরিফের নামে ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের বৈদেশিক পোস্ট অফিসের পার্সেল শাখায় আসা মোট ১৩ কার্টনে ২০৮ কেজি খাটপাতা ছিল। পরে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে এগুলোকে মাদক হিসেবে প্রতিবেদন দেয় তারা। এর পর ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর দুই আমদানিকারকের নামে মামলা করেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হাফেজ আহমেদ।
তদন্তে নেমে পুলিশ দুই অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ঠিকানায় নোটিশ পাঠায়। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করেছে, জারি করা নোটিশ পর্যালোচনায় দেখা যায়, দুই সন্দেহভাজনের নাম-ঠিকানা বেঠিক। সংশ্লিষ্ট ঠিকানার আশপাশের লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে ইফতেখার ও আরিফকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশের এ তদন্তে আস্থা রাখতে না পেরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দিয়েছেন পিপি আবদুর রশিদ।
মন্তব্য করুন