- চট্টগ্রাম
- ২০ মাসের কাজ সাড়ে ৩ বছরে ৬০ ভাগ
নবীনগরের বিটঘর বাজার কুড়িঘর-গোকর্ণঘাট সড়ক
২০ মাসের কাজ সাড়ে ৩ বছরে ৬০ ভাগ

নবীনগরের বিটঘর বাজার-কুড়িঘর-গোকর্ণঘাট সড়ক। ছবি: সমকাল
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বিটঘর বাজার-কুড়িঘর-গোকর্ণঘাট সড়কটির উন্নয়ন কাজে ধীরগতিতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (আরসিআইপি) অধীন প্রকল্পটি ২০ মাসে সম্পন্নের কথা থাকলেও সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে।
প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হওয়ায় এলাকার লোকজনকে পার্শ্ববর্তী কসবা উপজেলা দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার ঘুরে জেলা সদরে আসতে হয়। এতে বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় হয়।
জানা গেছে, সড়কটির ১২ দশমিক ২৫০ কিলোমিটার প্রশস্ত করাসহ উন্নয়নের জন্য ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর ২২ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডির সঙ্গে ২০ মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্নের জন্য চুক্তি করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এতে ছয় ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
২০২১ সালের আগস্টে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের অজুহাতে ঠিকাদার কাজ শুরু করতে দেরি করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, সময় বাড়ানোর পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও প্রায় ৪০ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। ফলে পৌনে চার কিলোমিটর এলাকাজুড়ে খানাখন্দে ভরা রাস্তা দিয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী।
উপজেলার শীবপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের দীন ইসলাম মিয়া বলেন, তাঁদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। দেড়-দুই বছর ধরে রাস্তা এইভাবে ফেলে রেখেছে। হেঁটে গিয়েও শান্তি নেই, গাড়িতে গিয়েও শান্তি নেই। পুরোনো পিচের ওপর তিন নম্বর ইটের ভাঙা দিয়ে কাজ করছেন ঠিকাদার। যেন দেখার কেউ নেই।
তিনি আরও জানান, ৩-৪ মাস আগে শিবপুর বাজারে এমপির উপস্থিতিতে ঠিকাদার বলেছিলেন এক মাসের মধ্যে রাস্তার কাজ শেষ হয়ে যাবে; কিন্তু চার মাস হয়ে গেলেও অনেক কাজ বাকি থাকায় আমাদের কষ্ট শেষ হচ্ছে না ।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক রবিউল মিয়া ও বাছিদ মিয়া বলেন, এই রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে জীবন বাঁচানো দায়, সারাদিন গাড়ি চালিয়ে যা
আয় হয় তার বেশির ভাগ টাকা গাড়ির মেরামতেই খরচ হয়ে যায়।
টিয়ারা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুমন মিয়া বলেন, এক বছর আগে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় একটা নতুন অটোরিকশা কিনে এই রাস্তা দিয়ে চালিয়ে লক্কড়ঝক্কড় হওয়ায় গত মাসে ৩২ হাজার টাকায় তা বিক্রি করেছেন।
বিদ্যাকুটের স্বপ্না বেগম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সালমা আক্তার বলেন, রাস্তা এত খারাপ যে, আসতেই মনে চায় না। এখন গোকর্ণ ঘাটের ব্রিজ থেকে কুড়িঘর পর্যন্ত এবং শিবপুর থেকে বিটঘর পর্যন্ত রাস্তা খুব খারাপ। এই রাস্তা দিয়া একদিন এলে তিন দিন শরীর ব্যথা করে।
শীবপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের সেলুন ব্যবসায়ী বিক্রম শীলের ভাষ্য, রাস্তা খারাপের কারণে জেলা শহরে বাসা করে থাকতে হয়। রাস্তা ভালো হলে বাড়ি থেকে এসে কাজ করে রাতেই বাড়ি ফিরতে পারতেন। রাস্তাটি ভালো হলে আধঘণ্টায় বাড়ি থেকে আসা-যাওয়া করা যেত। প্রায় চার বছর ধরে রাস্তার কাজ চলছে । কাজ আর শেষ হয় না। কবে যে তাঁদের কষ্টের শেষ হবে, তা ভগবানই জানেন বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
সরেজমিন দেখা গেছে, নিম্নমানের ইটের টুকরো দিয়ে ম্যাকাডম করা হচ্ছে । তিন নম্বর ইট হওয়ায় রোলার করার সময় ইট পাউডারের মতো গুঁড়া হয়ে যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার দু-একজন শ্রমিক দিয়ে নামকাওয়াস্তে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিটঘর ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী জাফর দস্তগীর জানান, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণেই প্রকল্পের কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে। এলজিইডির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মনে হয়েছে তাদের কাছে ঠিকাদারের স্বার্থই বড়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এম এন্টাপ্রাইজ-হাসান এন্টারপ্রাইজ-জেভির পরিচালক খায়রুল আলমের ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মান্নান বলেন, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
মন্তব্য করুন