যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে চাঁদপুর শহর। অসংখ্য অটোরিকশার এলোমেলো চলাচলে সৃষ্ট যানজটে নাভিশ্বাস উঠেছে শহরবাসীর। সপ্তাহের সাত দিনই যানজটে দিশাহারা তারা।

দন্ত চিকিৎসক মাসুদ হাসান বলেন, ‘ভাই, বৃহস্পতিবার সকালে শহরের কালীবাড়ি হকার্স মার্কেট থেকে অটোরিকশায় আমার বাসস্ট্যান্ডে যেতে লাগল ৩৫ মিনিট। অথচ লাগার কথা বড়জোর পাঁচ মিনিট। আবার হেঁটে যে যাব, তারও উপায় নেই।  প্রচণ্ড রোদ।’ তার মতো বাদ যাচ্ছে না অফিস-আদালতের মানুষও। শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কেই চলাচলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। অথচ এই অসহনীয় পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যত কোনো ব্যবস্থাই নেই পৌরসভা কিংবা জেলা বা পুলিশ প্রশাসনের।

পৌরসভাটিতে বৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ২ হাজার ৬৭২ বলে জানান সচিব আবুল কালাম ভূঁইয়া। তাঁর দাবি, বৈধ সাধারণ রিকশা ১ হাজার। ২-৩ বছর আগে ছিল ৫ হাজার। এসব কমিয়ে আনা হয়েছে। রিকশার নামে কোনো লাইসেন্স গত তিন বছর দেয়নি চাঁদপুর পৌরসভা। কিন্তু পায়ে চালিত সাধারণ রিকশা যেগুলোর লাইসেন্স পৌরসভা দিয়েছিল, সেগুলো বীরদর্পে চলছে।  সেগুলোর ৯৯ ভাগ এখন ব্যাটারিতে চলছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং ইজিবাইক ২০ হাজারের বেশি বলে দাবি শহরবাসীর।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, লাইসেন্স ছাড়াই শহরে অটোরিকশা চলে ১৫ হাজারের বেশি। একই সঙ্গে চাঁদপুরের অন্য উপজেলা এবং পাশের জেলা লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী থেকে যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর শহরে আসা-যাওয়া করছে বিপুল সংখ্যক সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

বিআরটিএ অফিস জানায়, এর বৈধ সংখ্যা গত ৯ বছর ছিল ৬ হাজার ৭০১টি। বিআরটিএর চাঁদপুর অফিসে কর্মরত মোটরযান পরিদর্শক আফজাল হোসেন জানান, গত ২-৩ মাসে নতুন করে ১৬০টি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ব্যাটারিচালিত দুই ধরনের অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাক, লরি, সরকারি-বেসরকারি গাড়ি, ঠেলাগাড়ি মিলে শহরের সড়কগুলো এখন যানজটের মেলায় পরিণত হয়েছে। ফলে কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোড়ে মোড়ে থাকে তীব্র যানজট।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ষোলঘর থেকে কালীবাড়ি, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক, কালীবাড়ি চত্বর, সেখান থেকে পৌরসভা হয়ে নতুনবাজার-পুরানবাজার ব্রিজ পর্যন্ত মিজানুর রহমান চৌধুরী সড়ক,  বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলা জজের বাসভবন এলাকা পর্যন্ত করিম পাটওয়ারী সড়ক, প্রেস ক্লাব সড়ক,  জে এম সেনগুপ্ত সড়ক, কবি নজরুল সড়ক, বড় স্টেশন সড়কসহ সব গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজট মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। যানজটে পড়লে কেউ যে হেঁটে চলাচল করবেন, তারও ব্যবস্থা নেই। কারণ চাঁদপুর শহরে ফুটপাত নেই বললেই চলে। আর যেখানে ফুটপাত আছে সেখানে যানবাহন দাঁড়ানো থাকে। না হয় হকারদের দখলে থাকে।

যানজটের অন্যতম কারণ অগণিত ইজবাইকে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করানো। অটোরিকশা চালাকরাও অতিরিক্ত অটোরিকশার কথা স্বীকার করে বলেন, নিয়ম মেনেই চালান তাঁরা। পথচারীদের অভিযোগ, সড়কে ইজিবাইকগুলো বিশৃঙ্খলভাবে চলে। কে কার আগে যাবে, এই প্রতিযোগিতা চলে। বাস-ট্রাকের মতো বড় বড় গাড়িও ঢুকে যাচ্ছে শহরে। এর মধ্যে নেই কোনো জোরালো ট্রাফিক ব্যবস্থা।

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ সমকালকে বলেন, ‘প্রয়োজনের চেয়ে কম সংখ্যক ট্রাফিক এই শহরে। আমি পুলিশ লাইন্স, কিংবা অন্য কোনো জায়গায় ডিউটি করে এমন পুলিশ সদস্যকে এনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগিয়েছি।’ শহরের তীব্র যানজটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এখানকার সড়কগুলোর বেশিরভাগই সরু। ফুটপাত অনেক জায়গায়ই নেই। নেই অটোরিকশা বা ইজিবাইক স্ট্যান্ড।

শুক্রবার বিকেলে চাঁদপুর পৌর মেয়র জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সাড়া মেলেনি। তবে দিন কয়েক আগে নগর উন্নয়ন সভায় শহরকে জানযটমুক্ত, রাস্তা প্রশস্তকরণসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রাখার দাবি করেন তিনি।