- চট্টগ্রাম
- মেঘনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
বালু ব্যবসা ও আধিপত্য নিয়ে বিরোধ
মেঘনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

নিহত নিজাম সরকার
কুমিল্লার মেঘনায় বালু ব্যবসা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে একজন নিহত এবং আরও ১০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই টেঁটাবিদ্ধ। এ সময় কয়েকটি বাড়িঘরও ভাঙচুর করা হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার সকালে উপজেলার চালিভাঙ্গা গ্রামের এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। নিহত নিজাম সরকারের (৪০) বাড়ি পার্শ্ববর্তী নলচর গ্রামে। তিনি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে।
জানা গেছে, বালু ব্যবসার পাওনা টাকা এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বছরখানেক ধরে বিরোধ চলে আসছিল নিহত নিজাম এবং স্থানীয় ঠিকাদার ও জেলা পরিষদের সদস্য কাইয়ুম হোসেনের মধ্যে। কাইয়ুম ‘শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ’-এর উপজেলা সভাপতিও। তারা দু’জন ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী হলেও অবস্থান করতেন দুই মেরুতে। সম্প্রতি মেঘনা উপজেলা কুমিল্লা-২ আসনের আওতায় চলে আসায় তাদের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। কারণ, নিজাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল আলমের অনুসারী, আর কাইয়ুম স্থানীয় এমপি সেলিমা আহমাদ মেরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ জন্য নিজাম ও কাইয়ুমের সমর্থকদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই ঝামেলা লেগে থাকত। বিশেষ করে কাইয়ুমের কাছে পাওনা ১ কোটি টাকা চাইতে গেলে নিজামের ওপর প্রায়ই চটে যেতেন ওই ঠিকাদার।
স্থানীয়রা জানান, নিজাম ও কাইয়ুমের দ্বন্দ্ব প্রকট হওয়ায় তাদের নিয়ে মাঝেমধ্যেই থানায় সালিশ বসত। কিন্তু পুলিশের মধ্যস্থতায়ও উত্তেজনা কমেনি। চলমান বিরোধের জেরে গতকাল সকালে চালিভাঙ্গা গ্রামের বাগবাজারের পার্শ্ববর্তী ফরাজিয়া কান্দি সড়ক দিয়ে আসার সময় নিজামের ওপর হামলা চালান কাইয়ুম ও তাঁর লোকজন। তারা টেঁটাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ছিলেন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় অন্তত ১১ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে নিজামকে মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসক।
আহতদের মধ্যে আছেন- আনিস সরকার (১৮), টিটু সরকার (২৮), সুমন আহমেদ (২৫), দেলোয়ার হোসেন (২৮), ইব্রাহিম খলিল (৩০), রমজান হোসেন (৩৫), শাকিল আহমেদ (২২), মো. হানিফ (৪৫), খালেদ হাসান (১৯) ও মো. ওয়াসিম (৩৫)।
চালিয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, নিজাম আমার ছোট ভাই। সে কাইয়ুমের কাছে অনেক টাকা পাইত। সেই টাকা না দিয়ে আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে কাইয়ুম ও তার লোকজন। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নিহতের স্ত্রী সালমা আক্তার বলেন, সকালে বাগবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ লাগার খবর পেয়ে বাসা থেকে বের হন নিজাম। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করেছে কাইয়ুম ও তার লোকজন। ঘাতকদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ঘটনার পরই গা-ঢাকা দিয়েছেন কাইয়ুম। তাঁর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বন্ধ আছে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটিও। তাঁর স্বজনরাও কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল আলম বলেন, নিজাম খুবই ভালো ছেলে ছিল। তাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কে কোন দলের, তা বিবেচনায় নেওয়া যাবে না। অপরাধীর সঙ্গে দলের সম্পর্ক থাকতে পারে না। তা ছাড়া কাইয়ুম একজনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয় হয়ে উঠেছে।
ঢামেক হাসপাতালে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া জানান, নিজামের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। আহতরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
মেঘনা থানার এসআই মিলন বলেন, নিজাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে বিভিন্নস্থান থেকে চারজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেনু কাইয়ুমের বাবা ইউপি সদস্য আবদুল কাদের, তাঁর বড় ভাই মো. দাইয়ান এবং অনুসারী আরিফ হোসেন ও সোহেল মিয়া।
ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিজাম হত্যায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আমাদের একাধিক টিম মাঠে আছে। এলাকার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন